দুর্বিষহ গরমে প্রাণ জুড়ানো ডাবের পানি ঢক ঢক করে খেতে কার না ভাল লাগে? চুলের ডগা ফাটছে? সপ্তাহে দু’বার করে মাথায় নারিকেল তেল মেখে থাকুন নিশ্চিন্তে।
দুর্গাপূজার খাদ্য তালিকায় অন্যতম প্রধান উপকরণ হলো নারিকেলের নাড়ু ও নারিকেল দিয়ে তৈরি নানা রকমের পিঠা, পুলি-পায়েস। এমনকি ডেংগু আর ম্যালেরিয়াবাহী মশা থেকে বাঁচতেও জুড়ি নেই প্রকৃতির বহুমুখী বিস্ময় নারিকেলের। শুকনো ছোবড়ার সাথে একটুখানি ধুপ মিশিয়ে পোড়ালেই মশককূল পালিয়ে পগাড় পার।
২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নারিকেল দিবস। জাতিসংঘের সমর্থনপুষ্ট এশিয়ান অ্যান্ড প্যাসিফিক কোকোনাট কমিউনিটি (এপিসিসি) ২০০৯ সালে প্রথমবারের মত উদযাপন করে এই দিনটি। সেই থেকে নারিকেলের ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর ২ সেপ্টেম্বর পৃথিবী জুড়ে পালন করা হয় বিশ্ব নারিকেল দিবস। ‘কোভিড-১৯ অতিমারি ও পরবর্তী সময়ে একটি নিরাপদ সর্বব্যাপী প্রাণবন্ত এবং টেকসই নারিকেলপ্রেমী জনগোষ্ঠী গড়া’ হল দিবসটির এ বছরের থিম বা মূলমন্ত্র।
কারওয়ানবাজারের পাইকার মন্তাজ মিয়া ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “রোজা আর পূজার সময় নারিকেলের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়, এবার দুর্গা পূজাতেও বেড়েছে।” প্রতি ১০০ নারিকেল আকার ভেদে ৪০০০ থেকে ৭০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
হাজারো ব্যবহার আছে বাঙালির অতি পরিচিত এই নারিকেলের। ক্ষয় ঠেকিয়ে দাঁতকে পুনরুজ্জীবিতও করতে পারে নারিকেল, দাবী করেন কিছু উৎসাহীরা- যদি আপনি প্রতিদিন ২০ মিনিট নারিকেল তেল দিয়ে কুলকুচি করার অভ্যাস করতে পারেন, তবেই। অবশ্য, গালভরা তেল নিয়ে দৈনিক কুলি করার ভাবনায় জ্বর এলে ঘাবড়ে যাবেন না, বরং নারিকেল নিয়ে কিছু মজার তথ্য জেনে নিয়ে সামিল হোন বিশ্বব্যাপী এই নারিকেল ক্রেইজে।
১. কোকোনাট ‘নাট’ নয়
বৈজ্ঞানিক নাম ‘কোকোস নুসিফেরা’। ইংরেজিতে কোকোনাট। পর্তুগিজ শব্দ ‘কোকো’, যার অর্থ ‘মাথার খুলি’ বা ‘প্রেত’। নারিকেলের গায়ে যে তিনটি গোলাকার গর্ত রয়েছে, তা দেখে মড়ার খুলির মত লাগে বলে প্রাচীনকালের ইউরোপিয় অভিযাত্রীরা দিয়েছিল এই নাম।
তালগোত্রীয় এই বৃক্ষের ফল দেখতে একটি বিশালকায় বাদাম বা ‘নাট’-এর মত হলেও নারিকেল আসলে একটি আঁটিযুক্ত রসালো ও শাঁসালো ফল বা ‘ড্রুপ’। চিনাবাদামের চেয়ে জলপাই আর চেরির সাথে এর বেশি মিল।
(তথ্যসূত্রঃ etymonline.com)
২. কলম্বাসের বহু আগেই অস্ট্রোনেশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার যোগাযোগের প্রমাণ নারিকেল
প্রচলিত ধারণা মতে, ইউরোপিয় ঔপনিবেশিকেরা ভারতবর্ষ থেকে আমেরিকান ভূখন্ডে প্রথম ডাব আমদানি করে। কিন্তু ২০০৮ সালে করা এক গবেষণা বলছে অন্য কথা। জেনেটিক এ গবেষণায় দেখা যায়, আমেরিকান নারিকেলের সাথে নিকটবর্তী পলিনেশিয় নারিকেলের চাইতে ফিলিপিনো নারিকেলের বংশগতিগত সাদৃশ্য অনেক বেশি। প্রাকৃতিক উপায়ে সমুদ্রের স্রোতে ভেসে এসে এহেন বংশবিস্তার সম্ভব নয়। এ থেকে গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে এখন থেকে কমপক্ষে ২,২৫০ বছর পূর্বে (বি.পি.) অস্ট্রোনেশিয়ান নাবিকেরা আমেরিকায় নিয়ে এসেছিল নারিকেল।
২০১৪ সালে করা আরেক গবেষণায় দেখা যায়, দক্ষিণ আমেরিকা বা ভারতে নয়, বরং প্রশান্ত মহাসাগরের উপহ্রদ বেষ্টনকারী বৃত্তাকার প্রবালপ্রাচীরময় দ্বীপে জন্ম নারিকেলের । পুরু খোসা গঠনের মাধ্যমে সামুদ্রিক পচন থেকে বেঁচে অঙ্কুরোদ্গম ঘটিয়ে বংশবিস্তারের জন্য প্রয়োজনীয় বিবর্তনের আবশ্যক পরিবেশ ব্যাখ্যা করে এ তত্ত্ব। (তথ্যসূত্রঃ https://www.jstor.org/stable/2845766, https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/24368197/)
৩. নারিকেল উৎপাদনে ভারত বিশ্বে তৃতীয়, বাংলাদেশ ১৩তম
ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে ৬.২ কোটি মেট্রিক টন নারিকেল উৎপন্ন হয়। ফলনের শতকরা ৭৫ ভাগই এসেছে উৎপাদনের শীর্ষ তিনটি দেশঃ ক্রমান্বয়ে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও ভারত থেকে।
উৎপাদনে ১৩ তম বাংলাদেশ উৎপন্ন করেছে ৪.৩২ লাখ মেট্রিক টন নারিকেল, যা বাংলাদেশের ২০১৮ সালের ফলনের চাইতে ৭.৫৮ শতাংশ কম। (তথ্যসূত্রঃ ফাওস্ট্যাট)
৪. লম্বা গাছ না বামন গাছ, কোনটা লাগাবেন?
পৃথিবীতে ১০০-রও বেশি প্রজাতির নারিকেল আছে। ইন্দো-আটলান্টিক অঞ্চলের নারিকেল গাছ ভারত ও বাংলাদেশে বহুল পরিচিত। ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা এ গাছ বাঁচে ৬০-৮০ বছর। ‘তিন পুরুষের গাছ’ বলে খ্যাত এ গাছে ফল আসতে লাগে ৬ থেকে ১০ বছর। একটি পূর্ণবয়ষ্ক গাছের পাতাগুলোই হয় একেকটা ১০-১৫ ফুট লম্বা।
অন্যদিকে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় বামন নারিকেল যেন পোষ মানা এক প্রজাতি। লম্বায় বড়জোর ৩০ ফুট উঁচু এ গাছের চাষ করা যেমন কঠিন, তেমনি এগুলো লম্বা গাছের তুলনায় বাঁচেও অনেক কম দিন। তবে তাড়াতাড়ি ফল আসে বলে ইদানিং বামন নারিকেলের ভাল চাহিদা। (তথ্যসূত্রঃ ট্রপিকাল হাইনান)
৫. ডাবের পানি কি রক্তরসের বিকল্প?
মানুষের শরীরের প্লাজমা বা রক্তরসের সাথে অনেক মিল ডাবের পানির। ১৯৪২ সালে কিউবার হাভানায় ডাক্তার প্রাদেরা ১২ জন শিশুকে আন্তঃশিরা পদ্ধতিতে (আই.ভি.) পরিস্রুৎ ডাবের পানি প্রদান করে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া পান নি।
কথিত আছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সাধারণ আই.ভি. ফ্লুইড ফুরিয়ে গেলে বৃটিশরা শ্রীলঙ্কায় ও জাপানীরা সুমাত্রায় নিয়মিতভাবে ডাবের পানি ব্যবহার করতো, যদিওবা কোন পিয়ার রেভিউড মেডিকেল জার্নালে এ ঘটনাগুলো প্রকাশিত হয়নি। ১৯৫৪ সালে আইসমান, লোজানো ও হেইগার নামের তিন ডাক্তার ১৫৭ জন রোগীকে শিরাভ্যন্তরে ডাবের পানি দেন। রোগীদের ৭ শতাংশ মাথাব্যথা, চুলকানি, জ্বর, বাহু টনটন করা ইত্যাদি উপসর্গ প্রদর্শন করে।
আদপে, রক্তরসের তুলুনায় ডাবের পানিতে সোডিয়াম আছে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ, আর পটাশিয়াম রয়েছে ১০-১৫ গুণ। মোদ্দাকথা, ডাবের পানি কোনভাবেই রক্তরসের হুবহু অনুরূপ নয়। তবে জরুরী অবস্থায় প্লাজমার সঙ্কট পড়লে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। (তথ্যসূত্রঃ এ.বি.সি. সায়েন্স)
৬. নারিকেল তেলে চলে উড়োজাহাজ
মাথায় কখনও নারিকেলের তেল দেয়নি, এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে পাক-ভারতীয় উপমহাদেশে। ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ সহ অনেক দেশে রান্নায় ব্যবহৃত হয় এ তেল। রূপচর্চা ও প্রসাধন শিল্পে কাঁচামালরূপে এর গুরুত্ব কে না জানে? এমনকী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান অধ্যুষিত ফিলিপাইনে ডিজেলের চরম শঙ্কট পড়লে ইঞ্জিন চালাতে ব্যবহার করা হত নারিকেল তেল থেকে বানানো বায়োডিজেল।
কিন্তু ২০০৮ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে এগারোটায় সকল কল্পনাকে হার মানিয়ে দেয় স্যার রিচার্ড ব্র্যান্সনের মস্তিষ্কপ্রসূত একটি পরীক্ষা। দেড় লাখ নারিকেলের তেল আর জেট ফুয়েলের মিশ্রণকে জ্বালানী বানিয়ে ভার্জিন আটলান্টিকের একটি বোইং ৭৪৭ প্লেন লন্ডনের হিথরো থেকে ৪০ মিনিটের সফর শেষে অবতরণ করে অ্যামস্টারডামের শিপ্ল বিমানবন্দরে। (তথ্যসূত্রঃ দ্যা গার্ডিয়ান)
৭. বস্ত্রে নারিকেল, অস্ত্রে নারিকেল
নারিকেলের আঁশ আর ছোবড়া থেকে তৈরি হয় তোষক, দড়ি, পাপোশ - আরও কত কি। এক লাখ বিশ হাজারেরও কম জনসংখ্যাবিশিষ্ট মাইক্রোনেশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র কিরিবাসের যোদ্ধারা নারিকেলের ব্যবহারকে নিয়ে গিয়েছিলেন আরেক ধাপ এগিয়ে। সম্মুখ সমরে তাঁরা পরিধান করতেন এর আঁশ থেকে তৈরি ‘ক্যুরাস’ নামের বর্ম। ঘন বুননের এ বর্ম পরলে আপনার মনেই হতে পারে যে পাপোশ দিয়ে বানানো জামা পরেছেন আপনি।
এ তো গেল আত্মরক্ষায় নারিকেলের ব্যবহার। নারিকেলের খোল দিয়ে বোমা বানানোর নজিরও আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফিলিপাইনের লেটে দ্বীপে মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে নারিকেলের গ্রেনেড ছোঁড়ে জাপানীরা। নারিকেলের ভেতরটা ফাঁকা করে প্রথমে তাতে ভরা হত বারুদ আর এসিড, তারপর তা মোম দিয়ে শক্ত করে বন্ধ করে দেয়া হত। পেন্টাগনে দেয়া এক বিবৃতিতে প্রত্যক্ষদর্শী মার্কিন কর্নেল এলান ফ্রেডম্যান বলেন, নারিকেলের হাতবোমাগুলো প্রকট শব্দে ফাটতো, কিন্তু তেমন ক্ষয়ক্ষতি করতো না। (তথ্যসূত্রঃ খান একাডেমি, দ্যা ইভনিং ইন্ডিপেন্ডেন্ট)
৮. বানরের গলায় ধাতব কলার
বিশ্ববাজারে রপ্তানীর জন্য থাই কৃষকরা এখনও নারিকেল পাড়তে বানরের অপব্যবহার করে চলেছে বলে অভিযোগ করেছে পিপল ফর দ্যা এথিকাল ট্রিটমেন্ট অফ এনিমেলস (পেটা) -এর এশিয়া শাখা। ২০২০ সালে প্রকাশিত পেটা এশিয়ার এক তদন্তে দেখা যায়, থাইল্যান্ডের নানান বানর প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো আজও শুধু চালুই নেই, পাশাপাশি অগাধে চলছে বানর দিয়ে নারিকেল পাড়ানোর বর্বোরোচিত প্রতিযোগিতা।
“শিশু বানরদের বেআইনিভাবে পরিবার থেকে ধরে এনে জোর করে খাঁচায় ভরা হয়, নারিকেল পাড়তে শেখানো হয়। কেউ আত্মরক্ষা করতে চাইলে তার শ্বাপদ দাঁত তুলে ফেলা হয়,” নিজস্ব ওয়েবসাইটে বলছে পেটা। ২০১৯ সালে পেটার প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ হলে পর ‘টার্গেট’, ‘কস্টকো’ ইত্যাদি চেইন সহ বিশ্বব্যাপী ৩৩ হাজারেরও বেশি দোকান ‘চাওকহ্’ এবং আর যে সব নারিকেলজাত পণ্য উৎপাদনকারী থাই প্ল্যান্টেশন ও ব্র্যান্ড পশুশ্রমের ব্যবহার করে চলেছে, তাদের পণ্য বয়কট করে।
এবছরের জুন মাসে প্রকাশিত রয়টারের খবর অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে থাইল্যান্ডের নারিকেলের দুধ এবং নারিকেলজাত পণ্যের বিক্রি অনেক কমেছে। (তথ্যসূত্রঃ পেটা)
৯. কেনেডির নারিকেল-খোলের পেপার-ওয়েইট
আমেরিকার সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টদের একজন জন এফ কেনেডি। তাঁর পুরো শাসনকালে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসের ডেস্কে শোভা পেত একটি নারিকেল খোলের পেপার-ওয়েইট। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় থেকে তিনি কখনো হাতছাড়া করেননি সেটি।
১৯৪৩ সালে তরুণ লেফটেন্যান্ট কেনেডি ছিলেন একটি পেট্রল টর্পিডো বোটের অধিনায়ক। ২ অগাস্ট একটি জাপানিজ ডেস্ট্রয়ারের আঘাতে ধ্বংস হয়ে যায় তাঁর নৌকা। বহুক্ষণ সাঁতরে ক্রুওসহ কোনমতে উঠেন সলোমন দ্বীপপুঞ্জের এক দ্বীপে। দু’দিন কেনেডি ও তাঁর লোকজন শুধু গাছপাড়া নারিকেল খেয়ে বেঁচে থাকেন। শেষমেশ কিছু বন্ধুভাবাপন্ন দ্বীপবাসীর দেখা মেলে। একটি নারিকেলের খোলে বার্তা খোদাই করে স্থানীয়দের মারফত মিত্রবাহিনীর কাছে তা পাঠাতে সক্ষম হন কেনেডি। উদ্ধার করা হয় আমেরিকানদের। (তথ্যসূত্রঃ বিবিসি)
১০. নারিকেল গাছে উঠে বক্তৃতা দিলেন মন্ত্রী
২০২০ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর। আঞ্চলিক ভোক্তাদের তীব্র চাহিদার কারণে শ্রীলঙ্কা রয়েছে ৭০ কোটি নারিকেলের সংকটে। অবস্থার গুরুত্ব বোঝাতে কলম্বো থেকে ১৪০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত নিজের এলাকা ডানকোটুয়া শহরের একটি নারিকেল গাছে চড়ে বসলেন তদানিন্তন নারিকেল, তালজাতীয় বৃক্ষ ও রবার বিষয়ক মন্ত্রী অরুন্ডিকা ফারনান্দো। এক জ্বালাময়ী ভাষণে বললেন, “খালি আছে এমন প্রতিটি জমিতে নারিকেলের চাষ করে এই শিল্পকে উজ্জীবিত করবো, দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথকে সুগম করবো – এই আমাদের প্রত্যাশা।”
‘দ্যা হিন্দু’তে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, স্থানীয়রা পুরো ঘটনাটি ধারণ করে ইন্টারনেটে ছাড়লে ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। (তথ্যসূত্রঃ দ্যা হিন্দু)
১১. নারিকেলের প্রাসাদ
মনে আছে কি সেই ফিলিপিনো প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি ইমেল্ডা মার্কোসের কথা? নারিকেলের দেশ ফিলিপাইনের এক কালের সর্বেসর্বা একনায়ক ফার্দিনান্দ মার্কোসের স্ত্রী কুখ্যাত ছিলেন তাঁর মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের জন্য। তাঁর ৩০০০ জোড়া জুতার গল্প আজও পপ-সংস্কৃতিতে এক মুখরোচক আলাপ।
লেডি মার্কোসের একবার খেয়াল চাপল, একটা নারিকেলের প্রাসাদ বানাতে হবে। ১৯৭৮ সালে তিনি আদেশ দিলেন তাঁর সাধের কোকোনাট প্যালেস বানানোর জন্য – পুরোটাই জনগণের টাকায়। সরকারি অতিথিশালা হিসেবে বানানো এই প্রাসাদের নির্মাণ বাবদ সেই আমলে খরচ হয়েছিল ৩.৭ কোটি পেসো। ভবনটির কাঠামোর ৭০ শতাংশ এসেছে নারিকেলজাত কিছু না কিছু থেকে।
অষ্টভূজ আকৃতির এই প্রাসাদটি উপর থেকে দেখতে ঠিক যেন একটি সদ্য কেটে পরিবেশন করা ডাবের মত। মূল স্তম্ভগুলো তৈরি বিশেষ প্রকৌশলে নির্মিত নারিকেলের তক্তা দিয়ে। ১০১ টি নারিকেল দিয়ে বানানো একটি মোহনীয় ঝাড়বাতি ভবনটির সজ্জার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। খাবারের টেবিলটি তৈরি করতে লাগে নারিকেলের খোলের ছোট ছোট ৪০ হাজার টুকরো।
১৯৮১ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল ফিলিপাইন এলে তাঁকে কোকোনাট প্যালেসে থাকতে দেয়া হয়। সে সময় ও দেশে খুব মন্দা চলছে। সাধারণ মানুষ আধাপেটা আছে। পোপের রুচিতে বাধে এত বিলাস-বাহুল্যের মধ্যে থাকতে। তিনি নারিকেলের তৈরি এ প্রাসাদে থাকার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
পরে অবশ্য অভিনয়শিল্পী ব্রুক শিল্ড্সসহ অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তিই এখানে থেকেছেন।
বিশ্বখ্যাত কোকোনাট প্যালেস এখন ফিলিপাইনের উপরাষ্ট্রপতির কার্যালয় ও বাসভবন। (তথ্যসূত্রঃ এসকোয়ার)
১২. মাথায় নারিকেল পড়ে মৃত্যু - শহুরে কিংবদন্তী?
বারাক ওবামার সফরকে মাথায় রেখে নিরাপত্তার ঝুঁকি এড়াতে মুম্বাইয়ের গান্ধী জাদুঘরের সব গাছের নারিকেল পেড়ে ফেলেছিল ভারত সরকার ২০১০ সালে, দ্যা গার্ডিয়ানে প্রকাশ।
১৯৭৭ সালে হাওয়াইয়ের জুরিবর্গ এক পুলিশ অফিসারের পক্ষে ৩৯ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণের রায় দেন। কর্মরত অবস্থায় লাহাইনা শহরের এক ফুটপাথে অফিসারটির মাথায় গাছ থেকে নারিকেল পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন বলে রিপোর্ট করে দ্যা স্পোক্সম্যান রিভিউ।
বাংলাদেশের নোয়াখালীর এক গ্রামে বেড়াতে গিয়ে মাথায় নারিকেল পড়ে আরিয়ান নামে এক বছরের শিশু নিহত হয় গত নভেম্বরে। এর আগে লক্ষ্মীপুরে আরেক তিন বছরের শিশু মারা যায় ২০১৬ সালে।
সংবাদপত্র ঘাঁটলে কদাচিৎ চোখে পড়ে মাথায় নারিকেল পড়া জনিত কোন দুর্ঘটনার খবর। অবশ্য নারিকেল গাছ থেকে পড়ে বা দুর্যোগের সময় মাথায় নারিকেল গাছ ভেঙ্গে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা অতটা দুর্লভ নয়।
(তথ্যসূত্রঃ https://news.google.com/newspapers?id=LfBLAAAAIBAJ&pg=1912,389405)