বুধবার ব্রিটেনের সরকার ঘোষণা দিয়েছে তারা ব্রেক্সিটের পরিকল্পনায় অতিরিক্ত দুশো চল্লিশ কোটি ডলার ব্যয় করবে।এই পর্যন্ত ব্রেক্সিট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ব্রিটেন সরকার সর্বমোট ১০০০ কোটি ডলারের ও বেশী ব্যয় করেছে। কোন চুক্তি ছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়া আসার সম্ভাবনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। একটি নতুন রিপোর্টে সতর্ক করে বলা হচ্ছে এই ধরণের পদক্ষেপের কারণে আগামী বেশ কয়েক বছর ব্রিটেনের অর্থনীতি এবং রাজনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে।
তবে অনেক ব্রেক্সিট সমর্থকদের মতে, কোন চুক্তি ছাড়া বেরিয়ে আসা, একমাত্র গ্রহণযোগ্য উপায়।এই সম্পর্কে লন্ডনে আমাদের সংবাদদাতা হেনরি রিজওয়েলের প্রতিবেদন থেকে পড়ে শোনাচ্ছি আমি সানজানা ফিরোজ এবং আমার সঙ্গে রয়েছেন সেলিম হোসেন।
ব্যস্ততম কোনও দিনে ইউরোপের মূল ভূখণ্ড এবং ব্রিটেনের সঙ্গে সংযোগকারী পথ ডোভার দিয়ে দশ হাজার ট্রাক যাতায়াত করে। গাড়ীর যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে তাজা ফলমূল, গবাদিপশু এমনকি জরুরী ওষুধ ও সরবরাহ করা হয় ঐ পথ দিয়ে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে কোন তল্লাশি এবং শুল্ক ছাড়াই পার হয় এইসব পণ্য। তবে নতুন একটি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে ব্রেক্সিটের কোনও চুক্তি ছাড়া ব্রিটেনের অর্ধেক রপ্তানি সমস্যার সম্মুখীন হবে।
UK in a changing Europe program er অধ্যাপক আনান্দ মেনন বলেন,শুল্ক ব্যতীত এবং কোনও চুক্তি ছাড়া অর্থ দাঁড়াচ্ছে এই যে, এখন থেকে তল্লাশি করা হবে প্রতিটি রপ্তানিকৃত পণ্য।কোম্পানিগুলো সময়ের টানাপড়েনের মধ্যে কাজ করে থাকে।অনেক সময় তারা যানবাহনের যন্ত্রাংশ সংরক্ষণ করেনা।
এক ঘণ্টার ভেতর তারা পুরো কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এর মধ্যে যদি কোনও কারণে তাদের কাজ বিলম্বিত হয় তখন তাদের ব্যবসায়িক নীতি, খ্যাতি প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
এর মধ্যে রয়েছে, মোটর গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন নিসান, হণ্ডা এবং ফোর্ড। আরও রয়েছে এয়ারবাস যারা ব্রিটেনে প্লেনের পাখা তৈরি করে থাকে।ঐ রিপোর্টে বলা হচ্ছে পাউন্ডের দরপতন হোলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং তাজা খাবারের ঘাটতি দেখা দেবে। তবে ব্রিটেনের সরকার এমন দাবী অস্বীকার করে বলছে, তারা চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের জন্য প্রস্তুত। বুধবার তারা ঘোষণা করেছে ব্রেক্সিট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য করদাতাদের অর্থ থেকে অতিরিক্ত দুশো চল্লিশ কোটি ডলার ব্যয় করবে।
ব্রিটেনের চ্যান্সেলর সাজিদ জাভিদ বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, সীমান্তে লোকবল বৃদ্ধি করতে হবে আমাদের, বন্দরে পরিবহন অবকাঠামো বৃদ্ধি এবং ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা।জাভিদ বলেন, চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের পর ইউরোপের সঙ্গে ব্রিটেন একটি শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে পারবে।
তবে এ বিষয়ে UK in a changing Europe program er অধ্যাপক আনান্দ মেনন মনে করেন এটি খুব সহজ কাজ নয়।তিনি বলেন, চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর, ইংলিশ চ্যানেলের দুই দিকেই মন্তব্য-সমালোচনা থাকবে কেননা উভয় দিকেই অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে। ঐ পরিস্থিতিতে, রাজনৈতিকভাবে, দুই পক্ষের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য এবং সুন্দর পরিবেশে মধ্যস্ততা করা কঠিন হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনালড ট্রাম্প ব্রেক্সিটের পর ব্রিটেনের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দুই দেশ চার থেকে পাঁচ গুন বেশী বাণিজ্য করতে সক্ষম।
UK in a changing Europe program er অধ্যাপক আনান্দ মেনন বলেন,যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে আমরা যদি প্রতিটি শুল্ক অপসারণ করি, তাহলে আমরা প্রবৃদ্ধির দশমিক ৪ শতাংশ লাভ করবো। একটি চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট, আগামী দশ বছরে অর্থনীতির ক্ষতি করবে।রক্ষণশীলদের অনুমান অনুযায়ী সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির ৮ থেকে ১০ শতাংশক্ষতি হবে।
আপাতদৃষ্টিতে, ব্রাসালসে এখন চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের সম্ভাবনাই বেশী। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বুধবার ঘোষণা করেছে তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে সদস্যদের সাহায্য করার পরিকল্পনা করছে।
ইউরোপিয়ান কমিশনের মুখপাত্র মিনা এন্ড্রিভা বলেন,একটি চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের জন্য সবদিক দিয়ে প্রস্তুত থাকার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় আইনি প্রস্তাব তৈরি করেছি। পরে অনুতাপ করার চাইতে আগে থেকে নিরাপদ একটি পদক্ষেপ নেয়া ভালো।
ব্রিটেন এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, উভয়েই একটি চুক্তি চায়। তবে এমন একটি চুক্তি ব্রেক্সিটের সময়সীমা, ৩১ শে অক্টোবরের আগে হবার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ।
ওয়েস্টমিনসটারে রাজনৈতিক অচলাবস্থা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েই যাচ্ছে।