সেলিম হোসেন
বাংলাদেশের রাজনীতি অর্থনীতি সমাজ বিজ্ঞান প্রযুক্তি ধর্ম, নানা বিষয় আলোচনায় এনে, সকল পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন-অগ্রগতি অব্যাহত রাখার আহবান জানালেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে ক্যাম্পাসে তিনদিনব্যাপী বিডিআই (বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ) সম্মেলনে বক্তারা।
‘বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র : সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সম্মেলনে অংশ নেন অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, সুইডেন, কানাডা, বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক, বিশেষজ্ঞ এবং নীতি-নির্ধারকরা। এতে অংশ নেন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান থেকে শুরু করে প্রকৌশলী, অর্থনীতিবিদ কুটনীতিক ব্যাংকার ছাত্রছাত্রীও।
তিন দিনের এই সম্মেলন বাংলাদেশের সত্যিকারের উন্নয়নে কতোটা কাজে লাগবে এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড. আতিয়ার রহমান আশার কথা বলেন।
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহানও বললেন ইতিবাচক প্রভাবের কথা।
সম্মেলনের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক প্যানেল আলোচনায় বক্তারা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে সত্যিকার অর্থে বিকাশের পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করার আহবান জানান।
নানা পর্বে আলোচনা হয় রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রবাসী বালাদেশী ও বিদেশীদের আকৃষ্ট করার বিষয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখার উপায়, পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এমন টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সহায়তার উপায়, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন বিষয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরু পাল বলেন, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রতহ্যায় নিতে পারি আমরা এ ধরনের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে।
তিনি বলেন, কারো চাপের মুখে নয় এই সম্মেলনে অংশগ্রহনকারীরা স্বাধীন মুক্তভাবে বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে এমন নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন; বৈচিত্রপূর্ন বিষয়াবলীর ওপর আলোকপাত করেছেন বক্তারা; তারা সমালোচনা করেছেন সরকার থেকে শুরু সকল পর্যায়ের নেতিবাচক বিষয়ে।
বাংলাদেশি-আমেরিকান সুবীর চৌধুরী এবং মালিনী চৌধুরীর নামে বার্কলে ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত ‘চৌধুরী স্টাডিজ সেন্টার’ এবং ‘ইন্সটিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজে’র সহায়তায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করা এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ড. নূরল ইসলামকে এবারের সম্মেলনে ‘বিডিআইয়ের আজীবন সম্মাননা’ এওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
সম্মেলন আয়োজনের লক্ষ্য তুলে ধরেন বিডিআইয়ের প্রেসিডেন্ট ড. মুনীর কুদ্দুস।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া ব্লুম বার্নিকেটের বক্তব্য উপস্থাপন করেন তাঁর মুখপাত্র আমেরিকান সেন্টারেরর পরিচালক দূতাবাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ্যান ম্যাককনেল। তিনি বলেন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র।
বার্নিকাট তার বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ নির্মূল তথা সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক গুড়িয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে।
বাংলাদেশে বিদেশি নাগরিক হত্যা, ব্লগার হত্যাসহ আইন শৃংখলা অবস্থার অবনতি নিয়ে সমালোচনা করেন বক্তারা সম্মলনের বিভিন্ন পর্বের আলোচনায়। এ অবস্থার কারনে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগে ভাটা পড়তে পারে এমন আশংকাও করেন কেউ কেউ।
বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়েও বিশ্লেষণ করেন পলিসি রিসার্চ ইন্সটিউিউটের বোর্ড অব ট্রাস্টি সদস্যরা। রাজনীতির উন্নয়ন ব্যতিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়-এমন একটি সেশনে বক্তব্য রাখেন ড. রওনক জাহান, অধ্যাপক আলী রিয়াজ এবং রিয়াজ পার্থ খান; আহরার আহমেদ।
পরে এই সম্মেলনের সফলতা বিষয়ে কথা বলেন ড. আলী রিয়াজ।
‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র : উপলব্ধি, প্রস্তুতি, অংশগ্রহণ’ শীর্ষক পর্বে বক্তব্য রাখেন ড. আলী রিয়াজ, নাফিসা আকবর, প্রশান্ত ত্রিপুরা, অধ্যাপক শেলি ফেল্ডম্যান। প্রশান্ত ত্রিপুরা বলেন বাংলাদেশের উন্নয়নের সুফল টেকসই করতে, সব মানুষ যাতে তা ভোগ করতে পারে তার জন্যে দরকার টেকসই নীতিমালা।
বিডিআই এর অন্যতম প্রধান সংগঠক ড. ফরিদা খান বলেন এ ধরনের সম্মেলন থেকে ভিবষ্যতে নিশ্চই উপকার হবে।
বাংলাদেশ থেকে আসা প্রাইভেট ব্যাংক ইস্টার্ন ব্যাংক প্রধান আলী রেজা বলেন এ ধরনের সম্মেলন দেশের সঙ্গে প্রবাসী এবং বিদেশীদের মধ্যে ভালো যোগাযোগ ঘটায় যা বিনিয়োগসহ নানাভাবেব কাজে লাগে।
একই ধরণের মন্তব্য করেন ষ্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী আবরার এ আনোয়ার।
১৯৯৫ সালে ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গে ‘বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন’ শীর্ষক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের উদ্যোগে এই বিডিআই কনফারেন্সের যাত্রা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে একটি কনফারেন্স হয়েছে ঢাকায় ২০১১ সালে। বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে হয়েছে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে। ২০১৩ সালের কনফারেন্স হয়েছে এই বার্কলে-তেই।