ব্যাপক বিতর্কের পর পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। আজ দুপুরে তিনি প্রধানমন্ত্রী বরাবর এ পদত্যাগপত্র পাঠান। তার পদত্যাগপত্রে তিনি কারণ ব্যক্তিগত বলে উল্লেখ করেছেন। পদত্যাগপত্র পাঠানোর পর তিনি ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তিনি বলেছেন, মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে তিনি ক্ষমা চাইছেন। প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি তা মেনে নেবেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পদত্যাগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, গত তিন মাস ধরে ডা. মুরাদ হাসানের মধ্যে অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছিল। তার কিছু বক্তব্য সরকার ও দলকে বিপদে ফেলে দিয়েছে।
জানা গেছে, বিএনপি নেতা তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে নোংরা মন্তব্য ও অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির সঙ্গে কথোপকথনের নোংরা অডিও টেপ প্রকাশকে ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক ও প্রতিবাদের কারণে এর আগে তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হবে। এ নিয়ে আগামী বৈঠকে আলোচনা হবে। তবে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ আজ বৈঠক করেছে এ নিয়ে। তারা মুরাদের বহিষ্কারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ডা. মুরাদ হাসান জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক। তিনি জামালপুর-৪ সরিষাবাড়ী এলাকার এমপি এবং উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য। উপজেলা আওয়ামী লীগের বৈঠক হবে কাল। তার কারণে আওয়ামী লীগ বিব্রত বলে জানান, দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফারুক চৌধুরী। মুরাদকে বহিষ্কারের দাবিতে তার জেলা সদর ও নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে আওয়ামী লীগ। মিছিল ও সমাবেশ থেকে বলা হয়েছে, মুরাদের কারণে জামালপুর আওয়ামী লীগ বিব্রত। তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ডা. মুরাদ হাসানের সঙ্গে অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির কথোপকথনের নেতিবাচক অডিও টেপ প্রকাশকে ঘিরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অভিনেতা ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আজ। ইমন পুলিশকে বলেছেন, সেই দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এর বাইরে তার কিছু করার ছিল না। অন্যদিকে নায়িকা মাহিয়া মাহি এখন সৌদি আরবে রয়েছেন পবিত্র ওমরাহ হজ পালন করতে। তিনি মিডিয়াকে বলেছেন, সেই দিন তিনি অসহায় ছিলেন। তারও কিছু করার ছিল না। একজন প্রতিমন্ত্রীর কাছে এমনটা তিনি আশা করেননি। অভিনেত্রী মাহি দেশে ফিরলে তার সঙ্গে পুলিশ কথা বলবে বলে জানিয়েছেন ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, প্রয়োজনে মুরাদকেও ডাকা হবে।
এদিকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের আরও কিছু ভিডিও ও অডিও ক্লিপ সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সর্বশেষ একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, তিনি একটি অনুষ্ঠান ত্যাগ করছেন অশ্লীল, অশালীন, প্রকাশের অযোগ্য ভাষায় গালাগাল করতে করতে। তাকে বিরত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি কোনো কিছু শুনছেন না। আরেক ফেসবুক লাইভে দেখা গেছে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ও শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছেন। ছাত্রলীগ নেত্রীদের পাঁচ তারকা হোটেলে যাওয়া নিয়ে বলছেন অশ্লীল কথা। বাংলাদেশের উচ্চ আদালত সামাজিক মাধ্যম থেকে মুরাদের সব অশ্লীল ভিডিও ও অডিও ক্লিপ সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিটিআরসিকে। আজ বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের আদালত এক আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে এই নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, ডা. মুরাদ হাসান একজন অভিনেত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে অশালীন ভাষায় কথা বলা ছাড়াও বিভিন্ন টকশো ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশালীন ভাষায় বক্তব্য রেখে বিতর্ক সৃষ্টি করেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কন্যা জাইমা রহমানকেও তিনি নোংরা ভাষায় আক্রমণ করেন। বাংলাদেশের নারী নেত্রীরা এর তীব্র সমালোচনা করেন। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সরকারি দল। এ কারণে তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয় সরকার থেকে। এখন তাকে দল থেকেও সরতে হচ্ছে।
ডা. মুরাদ হাসান ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ২০১৪ সালে তাকে মনোনায়ন দেওয়া হয়নি। ২০১৮ সালে আবার মনোনায়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর তাকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়। তিনি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে একজন রোগী দেখতে গিয়ে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে মারপিটে লিপ্ত হন। সেই মারপিটের ছবি স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছিলেন। এরপর তার দফতর বদল হয়। তাকে পাঠানো হয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করে। এই দফাতেও মন্ত্রী হয়ে তিনি নানামুখী বিতর্ক থেকে সরেননি। বরং এমন কিছু কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন যা ক্ষমতাসীন দলকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।