করোনায় তছনছ হয়ে গেছে এশিয়ার গার্মেন্ট খাত। প্রথম ঢেউয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই দরজায় কড়া নাড়ছে দ্বিতীয় ঢেউ। এর ফলে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। বুধবার জেনেভা থেকে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ এশিয়ার গার্মেন্ট খাত টিকে থাকার জন্য অবিরাম লড়াই করছে। কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের পরিস্থিতি তুলে ধরে রিপোর্টে বলেছে, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে তৈরি পোশাকের উৎপাদনকারী দেশগুলোতে করোনা এখনো আঘাত হেনে চলেছে। বৈশ্বিক চাহিদার পতন, অর্ডার পেতে বিলম্ব কিংবা বাতিলের কারণে নয়া সংকট তৈরি হয়েছে। আইএলও বলেছে, এখানেই সংকটের শেষ হয়নি। সামনে একটি বড় ধাক্কা আসতে পারে। যদি দ্বিতীয় ঢেউ আসে তাহলে গার্মেন্ট খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে। ব্যাংককে অবস্থানরত এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে আইএলও'র আঞ্চলিক অফিসের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ক্রিশ্চিয়ান ভিজেলান সংকটের নানা দিক তুলে ধরেছেন। বলেছেন, করোনা সংক্রমণের আগে যে চাহিদা ছিল এখন সে চাহিদা নেই। যেসব দেশে শিথিল বিধি-নিষেধ ছিল তার তুলনায় কড়া বিধি-নিষেধ থাকা এমন দেশগুলোতে খুচরা বিক্রি শতকরা ২৫ ভাগ কমেছে। ১০টি দেশের গার্মেন্ট খাত পরীক্ষা করে আইএলও দেখতে পেয়েছে, করোনার ক্ষতিকর প্রভাব। রিপোর্টে বলা হয়, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও শ্রীলংকায় অনেকদিন ধরে কারখানা বন্ধ ছিল। এতে করে সরবরাহ চেইনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর ফলে অনেক গার্মেন্ট কর্মী চাকরি খুইয়েছেন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতে, আগের বছরের চেয়ে চাহিদা ৭০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেই কেবল তৈরি পোশাক আমদানি কমেছে শতকরা ২৬ ভাগ। ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২৫ ভাগ। জাপানে কমেছে ১৭ ভাগ। শুধু যে চাহিদা বা রপ্তানি কমেছে তা কিন্তু নয়। অনেক শ্রমিকের বেতন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের গার্মেন্ট নিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, শতকরা ৩৮ ভাগ কারখানায় অর্ডার কমেছে। নাহয় শিপমেন্ট স্থগিত করতে বলা হয়েছে। বাতিল হয়েছে ৩৪ ভাগের অর্ডার। কাঁচামালের অভাবে শতকরা ৪ ভাগ কারখানা উৎপাদনে যেতে পারেনি। এসব কারণে বাংলাদেশে ৩৪৮ টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ৪৩ ভাগ মালিক এই সুযোগে শ্রমিক সংখ্যা কমিয়ে একই কাজ আদায় করছেন।
ওদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৬৯৬ জন।