থাইল্যান্ড দেশটি ভেবেছিল যে, সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি হওয়া জনস্বাস্থ্য সঙ্কটের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি থেকে তারা নিজেদের দেশকে বাঁচাতে পেরেছে। কিন্তু তার পরিবর্তে এই আক্রমণ তাদের অর্থনীতিকে একেবারে পঙ্গু করে দিয়েছে। এপ্রিল মাসের প্রথম থেকে শুরু হওয়া নতুন এই সংক্রমণে এখনও পর্যন্ত ৪০০ জন মারা গেছেন, যা সেখানে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে মারাত্মক বলেই বিবেচিত হয়েছে। টীকা দান কর্মসূচী খুব ধীর গতিতে এগোচ্ছে, এবং এই প্রক্রিয়াকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের প্রধান বিমানবন্দর সুবর্ণভূমি টীকা প্রদানের কেন্দ্র হিসেবে একটি সম্ভাবনাময় জায়গা হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে ব্যাংকক ভিওএর সংবাদদাতা বিজিত্রা দুয়াংদীর প্রতিবেদন থেকে জয়তী দাশগুপ্ত জানাচ্ছেন যে, ইনোকুলেশন অর্থাৎ টীকা দেওয়ার জন্য প্রথমে চেক ইন করা হচ্ছে।
থাইল্যান্ডের মূল বিমানবন্দর হল সুবর্ণভূমি, মহামারীর সময় এখানে অল্প সংখ্যক যাত্রী সমাগম হচ্ছে, মালপত্র টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা যে গাড়িগুলি ব্যবহার করে থাকেন, সেগুলি শূন্য এবং পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখা আছে। কভিড ১৯ মহামারী মোকাবিলায় দেশটিকে সাহায্য করার জন্য তাই এই বিমানবন্দরটিকেই একটি গণ টীকা দান কেন্দ্রে পরিণত করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বিমানবন্দরের চেক-ইন ডেস্কগুলি চীন-এর সিনোভাক ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য মিনি-ক্লিনিক অর্থাৎ ছোট ছোট ক্লিনিকে রূপান্তরিত করা হয়েছে, এবং যে সব জায়গায় আমরা বিমান উড়ানের আগে বসে অপেক্ষা করি, সেই প্রতীক্ষার স্থান সদ্য টিকা নিয়েছেন এমন মানুষদের বিশ্রাম নিতে এবং টিকা পাওয়ার পরে তাদের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। পর্যটন নির্ভর এই দেশে, বিমানবন্দরের চার হাজার কর্মচারীকে প্রথম ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে।
বিমানবন্দরটি বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম মোকাবিলা করতে অভ্যস্ত এবং এই জীবাণুর তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলা করার জন্য সরকার এখন গণটিকা প্রদান কর্মসূচীর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, এবং বিবেচনা করা হচ্ছে যে, এখনও পর্যন্ত যত আক্রমণ হয়েছে তার মধ্যে এই তৃতীয সংক্রমণই হবে সব চেয়ে মারাত্মক। সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরের উপ-মহাব্যবস্থাপক কিট্টিপং কিটিকাচর্ন বলেন, “মহামারীর আগে আমরা দিনে দুই লক্ষ আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারী পেতাম, এখন দিনে মাত্র এক হাজার পাচ্ছি। বিমানবন্দরে ইতিমধ্যে চেক-ইন কাউন্টার এবং অন্যান্য সরঞ্জামগুলিকে টিকা প্রদান ক্লিনিকে পরিণত করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।”
এপ্রিল মাসে ভাইরাসের পুনরুত্থানের পর থাইল্যান্ডে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। থাইল্যান্ডে দৈনিক আক্রমণের সংখ্যা প্রায় ২,০০০, যদিও সর্বোচ্চ মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলির তুলনায় এই সংখ্যাটি খুবই কম, তবে এটি এমন একটি দেশের জন্য একটি বিশাল সংখ্যা, যে দেশ এ বছরের মার্চ মাস নাগাদ মনে করেছিল যে, তারা লকডাউন এবং সীমান্ত বিধিনিষেধ প্রয়োগের মাধ্যমে ভাইরাসটির আক্রমণ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পেরেছে।
এই মহামারীর প্রাদুর্ভাব শ্লথ টীকাদান কর্মসূচী দ্রুত করার জন্য প্রায়ূথ চান-ওচা সরকারের উপর চাপ অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে।এখনও অবধি প্রায় সাত কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র সাত লক্ষ থাইল্যান্ডবাসী টিকার দুটি ডোজ পেয়েছেন।ভাগ্যবানদের মধ্যে অন্যতম সরায়ুত জাম্পা। থাইল্যান্ডের সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট সরায়ুত জম্পা বলেন, “টীকা নিয়ে আমি শারীরিক ভাবে সুস্থতাই অনুভব করছি, ভ্যাকসিনের এই ডোজ সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করবে। ভ্যাকসিনটি আমাদের ১০০ শতাংশ রক্ষা করতে পারে না, তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই টীকা নেওয়ার পরে আমি যদি ভাইরাসে সংক্রমিত হই, তবে অসুস্থতা এখন অনেক কম হবে”।
এই বিমানবন্দর কর্মীরা এমন একটি দেশের প্রথম সারিতে আছেন, যে দেশের অর্থনীতি পর্যটন শিল্পের উপরে নির্ভর শীল এবং গত মার্চ থেকে পর্যটকদের সংখ্যা কিন্তু অনেক হ্রাস পেয়েছে। যদিও এই দেশ এখনও এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে, জুলাই মাসের শুরু থেকে বিদেশী পর্যটক, যারা টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন, সেই সব বিদেশী পর্যটকদের কাছে আবার থাইল্যান্ডের সমুদ্র সৈকত চালু করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এর মানে হল শীঘ্রই এই বিমানবন্দর আবার ব্যস্ত হয়ে উঠতে পারে। তবে দেশের সরকারী হাসপাতালের শয্যাগুলি সব পূর্ণ, অল্প শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছেন এবং অর্থনীতির পতন যখন দ্রুত হারে ঘটছে, থাইল্যান্ডের জন্য এগুলি বড়ই উদ্বেগের দিন।থাইল্যান্ডের বিমানবন্দরের যাত্রী পরিষেবা ক্লার্ক, প্যাচারিন বোরান বলেন, “আমি এখনও ভয় পাই কারণ ভাইরাসটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি আমি যদি অতিরিক্ত সতর্কও থাকি, তা হ’লে কিন্তু আমি এখনও এই ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারি।"
মহামারীটি শেষ হওয়ার আশায় দেশটি এখন যেন দম বন্ধ করে অপেক্ষা করছে।