আশিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সরকার প্রধানরা আগামীকাল থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে এক শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হচ্ছেন। ৩৫তম এই সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু প্রাধান্য পাবে এমনটাই আশা করা হচ্ছে। ব্যাংকক পোস্ট এই খবর দিয়ে বলছে, সময় যতো গড়াচ্ছে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি ততই জটিল হচ্ছে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের রাখাইন অঙ্গরাজ্যে সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল তার কোন টেকসই সমাধান হয়নি। বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি গভীরতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারে আশ্রয় দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। বিগত দুই বছরে মিয়ানমারের সঙ্গে একাধিক প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়েছে। কিন্তু কোনটিই শতভাগ কার্যকর হয়নি। ধীরে ধীরে অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে শরণার্থী শিবির। ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছেন শরণার্থীরা।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেতারা এই সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাই তারা এই বিষয়টিকে আলোচনার টেবিলে রেখেছেন। এশিয়া প্যাসিফিক রিফিউজি রাইট নেটওয়ার্কের পরিচালনা কমিটির সদস্য ও রোহিঙ্গা ওয়ার্কিং গ্রুপের ডেপুটি চেয়ারম্যান ক্রিস নেওয়ার বলেছেন, চলতি বছরের আগস্টে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন নিয়ে সমঝোতা হয়। এই ঘোষণা অনেককে অবাক করেছিল। এমনকি শরণার্থীদেরও। এখন পর্যন্ত কোন শরণার্থী স্বেচ্ছায় ফেরত যেতে চায়নি। শরণার্থীরা এর মাধ্যমে একটি বার্তা পাঠিয়েছে। আসিয়ানকে ঐ বার্তা আমলে নিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাজি হওয়ার ঘোষণায় ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখায়নি কক্সবাজারে থাকা শরণার্থীরা। তারা জানায়, রাখাইনে ফিরে গেলে নির্যাতন সহিংসতার শিকার হতে হবে। সেখানে তাদের নাগরিকত্ব নেই। স্বাধীনভাবে শিক্ষা ও চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ নেই।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামীকালের শীর্ষ সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর ৫ই নভেম্বর একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসবে।
গত সম্মেলনে দেওয়া এক বিবৃতিতে থাইল্যান্ড জানিয়েছিল, রাখাইনে সকল সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। থাইল্যান্ড আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান।
দ্য রাখাইন এডভাইজরি কমিশন এক সুপারিশে সহায়ক পরিস্থিতি তৈরিতে আসিয়ানের সমর্থনের একটি প্রতিচিত্র তৈরির আহবান জানিয়েছে।
ওদিকে ঢাকায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমারের প্রতিনিয়ত মিথ্যা অপপ্রচারের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে বলা হয়, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৩শে অক্টোবর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে তার বক্তব্যে রোহিঙ্গা বিষয়টি উত্থাপন করেন। কিন্তু মিয়ানমারের মন্ত্রী চ থিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ঐ বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন।
বাংলাদেশে আরসা বা অন্য কোন সন্ত্রাসী সংগঠনের অস্তিত্ব নেই এটা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইনে কয়েকজন রোহিঙ্গা ফেরত যাওয়া সম্পর্কে মিয়ানমার যে দাবি করেছে তার সঙ্গে বাংলাদেশে আশ্রয়রত ১০ লাখ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কোন সম্পর্ক নেই।