অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

 
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের পরমাণু বিষয়ক আলোচনার ধারণা নাকচ করে দিলেন খামেনি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের পরমাণু বিষয়ক আলোচনার ধারণা নাকচ করে দিলেন খামেনি


ফাইল ছবিঃ তেহরানে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি (৮ মার্চ, ২০২৫)।
ফাইল ছবিঃ তেহরানে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি (৮ মার্চ, ২০২৫)।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে পরমাণু চুক্তির বিষয়ে আলোচনার আহ্বান সম্বলিত চিঠি পাওয়ার পর বুধবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প জানান যে পরমাণু বিষয়ক আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে খামেনিকে তিনি একটি চিঠি পাঠিয়েছেন তবে সতর্ক করে দেন যে “ইরানকে নিয়ন্ত্রণ করার দুটি উপায় রয়েছে: সামরিক ভাবে কিংবা চুক্তি করে” যাতে তেহরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা যায়।

চিঠিটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ বুধবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির কাছে হস্তান্তর করেন।

রাষ্ট্রীয় মাধ্যম জানিয়েছে, আরাকচি ও গারগাশের মধ্যে যখন বৈঠক চলছিল, খামেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি দলকে বলেন আলোচনার জন্য ট্রাম্পের প্রস্তাব “এক ধরণের প্রতারণা, যার লক্ষ্য হচ্ছে জনমতকে বিভ্রান্ত করা”।

খামেনিকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রীয় মাধ্যম জানায় “আমরা যখন জানিই যে তারা এটির মর্যাদা দেবে না, তা হলে আলোচনার অর্থ কী? সুতরাং আলোচনার এই আমন্ত্রণ জনমতকে প্রতারিত করা”।

খামেনি বলেন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায়, “নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর হবে এবং ইরানের উপর চাপ বৃদ্ধি পাবে”। তিনি বলেন ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি-দাওয়া অত্যাধিক।

২০১৮ সালে ট্রাম্প তেহরানের সঙ্গে বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন এবং আবার নিষেধাজ্ঞা জারি করেন যা ইরানের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এক বছর পর প্রতিক্রিয়ায় ইরান চুক্তিতে থাকা পারমাণবিক নিষেধাজ্ঞাগুলি লংঘন করে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী খামেনি গত সপ্তাহে বলেন যে “অত্যধিক দাবিদাওয়া” ও হুমকি দিয়ে তেহরানকে ভয় দেখিয়ে আলোচনায় নেওয়া যাবে না।

মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের প্রধান নিরাপত্তা সহযোগী যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা রয়েছে সেই সংযুক্ত আরব আমিরাত তেহরানের সঙ্গেও উষ্ণ সম্পর্ক রেখে চলেছে। অতীতের উত্তেজনা সত্ত্বেও দুটি দেশের মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্য-সম্পর্ক রয়েছে এবং এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে দুবাই ইরানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক কেন্দ্র হয়ে রয়েছে।

যদিও তেহরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তির পথ খোলা রেখেছেন ট্রাম্প, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম মেয়াদে ইরানকে বৈশ্বিক অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে এবং দেশটির তেল রপ্তানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে যে “সর্বাত্মক চাপ” প্রয়োগের অভিযান চালিয়েছিলেন সেই কথাটি পুনর্ব্যক্ত করেন।

পরমাণু অস্ত্র তৈরির বিষয়টি ইরান বারবার অস্বীকার করে এসেছে।

খামেনি বলেন, “আমরা যদি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে চাইতাম, যুক্তরাষ্ট্র তা ঠেকিয়ে রাখতে পারতো না। আমরা নিজেরাই সেটা চাই না”।

তবে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা গত মাসে জানিয়েছে ইরানের ৬০% পর্যন্ত পরিশোধিত ইউরেনিয়াম রয়েছে যা প্রায় অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজন ৯০%-এর কাছাকাছি।

বুধবার আরাকচি ইরানের পারমানবিক কর্মতৎপরতা নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের সমালোচনা করে বলেন এটি হচ্ছে এক নতুন প্রক্রিয়া যা অনুরোধকারী দেশগুলির সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।

এই পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ৬টি সদস্য- ফ্রান্স, গ্রীস, পানামা, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র – ইরানে অস্ত্র নির্মাণ মানের ইউরেনিয়ামের মওজুদ বৃদ্ধির বিষয়ে বৈঠকের অনুরোধ করে। আরাকচি বলেন ইরান শিগগিরই ফ্রান্স, ব্রিটেন ও জার্মানির সঙ্গে পঞ্চম দফা বৈঠকে বসবে। এ তিনটি দেশ ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির অংশ ছিল।

রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদনে প্রকাশিত আরাকচির ভাষ্যে বলা হয়েছে, “ইউরোপীয়দের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলমান এবং তা অব্যাহত থাকবে তবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কিংবা জাতিসংঘের পরমাণু নজরদারি সংস্থার বোর্ড অফ গভর্ণরের কোন সিদ্ধান্তে যদি আমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়, তাহলে এ জাতীয় আলোচনার বৈধতা প্রশ্নসাপেক্ষ হয়ে উঠবে।"

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে চীন ও রাশিয়া শুক্রবার বেইজিং-এ পৃথক ভাবে ইরানের পারমাণবিক বিষয়ে আলোচনার জন্য ইরানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।

XS
SM
MD
LG