যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ সমাপ্তির প্রচেষ্টা সম্পর্কে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার সৌদি আরবের জেদ্দায় এক বৈঠকে মিলিত হন। উভয় পক্ষই বলছে কিয়েভ যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত ৩০ দিনের অস্ত্রবিরতি সমর্থন করে।
বৈঠকের পর প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “অবিলম্বে একটি অন্তর্বর্তী অস্ত্রবিরতি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব গ্রহণের ব্যাপারে ইউক্রেন প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। এই অস্ত্রবিরতির সময়সীমা সংশ্লিষ্ট পক্ষের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বাড়ানো যাবে তবে শর্ত হচ্ছে তা রুশ ফেডারেশনকে গ্রহণ করতে হবে এবং একই সময় থেকে তা প্রয়োগ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে জানাবে যে রাশিয়ার অনুরূপ দৃষ্টিভঙ্গি শান্তি অর্জনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।"
এতে আরও বলা হয় যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে গোয়েন্দা তথ্য জানানোর উপর বিরতি প্রত্যাহার করে নেবে এবং ইউক্রেনকে আবার নিরাপত্তা সহযোগিতা প্রদান শুরু করবে।
২০২২ সালের প্রথম দিকে রাশিয়ার পুরোদমে ইউক্রেন আক্রমণের মধ্য দিয়ে যে যুদ্ধ শুরু হয় সেটি দ্রুত শেষ করতে মধ্যস্থতার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের চাপের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালট্জ জেদ্দায় এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি মঙ্গলবারের এই বৈঠকে অংশ নেননি। ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলে ছিলেন চিফ অফ স্টাফ আন্দ্রিই ইয়ারম্যাক, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ এবং সামরিক কমান্ডার পাভলো পালিসা।
মঙ্গলবারের বৈঠক শুরু হবার ঠিক আগে ইয়ারম্যাক সংবাদদাতাদের বলেন যে “শান্তি অর্জনের জন্য সবকিছু করতে” ইউক্রেন প্রস্তুত আছে।
যখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয় যে ইউক্রেন কি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইছে, ইয়ারম্যাক বলেন, "হ্যাঁ" এবং ইউক্রেন এই নিশ্চয়তাও চায় যে রাশিয়া যেন তার আগ্রাসনের পুনরাবৃত্তি না করে।
সোমবার রুবিও বলেন যে যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে ইউক্রেনকে সাহায্য প্রদানে এই বিরতির নিস্পত্তি হবে।
তিনি বলেন যুক্তরাষ্ট্র শ্রোতার ভূমিকায় আছে এবং বুঝতে চায় ইউক্রেন কী ধরণের ছাড় দিতে ইচ্ছুক।
জেদ্দায় অবতরণের আগে একটি সামরিক বিমানে রুবিও সংবাদদাতাদের বলেন, “আমরা যখন কথা বলছি, তখন ইউক্রেনীয়রা ইতোমধ্যে সমস্ত প্রতিরক্ষামূলক গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছে। আমি মনে করি সহায়তার বিরতির সমস্ত বিষয় আমরা সমাধান করতে পারি। অবশ্যই আমি মনে করি আগামীকাল যা ঘটবে তা এর মূল চাবিকাঠি হবে।”
রুবিও বলেন, “আমরা একটি ঘরে বসে মানচিত্রে দাগ কাটবো তাতো নয়, কিন্তু একটি সাধারণ ধারণা পাবো যে তাদের (ইউক্রনীয়দের) ধারণার মধ্যে সম্ভাব্য কী ধরণের ছাড় দেওয়ার বিষয় আছে। তিনি আরও বলেন যে এই যুদ্ধের কোন সামরিক সমাধান নেই এবং রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়কেই “কঠিন কাজ করতে হবে”।
সোমবার দিনে আরও পরের দিকে লোহিত সাগরের বন্দর নগরী জেদ্দায় সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিনসালমানের সঙ্গে রুবিও’র বৈঠক হয়।
দিনে আরও আগের দিকে রিয়াদে সালমান জেলেন্সকির সঙ্গে একটি পৃথক বৈঠক করেন।
খনিজ চুক্তি
ট্রাম্প ইউক্রেনের কাঁচামাল ব্যবহারের শর্তে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বিভিন্ন ধরণের রেয়ার আর্থ, নিকেল ও লিথিয়ামসহ ৩৬টিরও বেশি খনিজ পদার্থকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও জাতীয় প্রতিরক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। ইউক্রেনে ইউরেনিয়াম, লিথিয়াম এবং টাইটানিয়ামের বিশাল মজুদ রয়েছে।
মঙ্গলবারের আলোচনার পর, এক যৌথ বিবৃতিতে “ইউক্রেনের অর্থনীতির সম্প্রসারণ ঘটাতে এবং ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের উন্নয়নের ব্যাপারে যত শিগগির সম্ভব একটি সমন্বিত চুক্তি সম্পন্ন করতে” উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
আশা করা হয়েছিল যে এ ব্যাপারে গত মাসেই ট্রাম্প ও জেলেন্সকির মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে কিন্তু ২৮ ফেব্রুয়ারি ওভাল অফিসের বৈঠকে তাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে তা বাতিল হয়ে যায়।
রুবিও দায়িত্ব গ্রহণের পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার সৌদি আরব সফরে গেলেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি তিনি এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা রিয়াদে রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। জি-সেভেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে যোগ দিতে বুধবার তার কানাডা যাওয়ার কথা।
(এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এপি,এএফপি ও রয়টার্সের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে।)