অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

 
কানাডার সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ: ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

কানাডার সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ: ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প


ফাইল ছবিঃ কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তব্য রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
ফাইল ছবিঃ কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তব্য রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্রতর করলেন। যুক্তরাষ্ট্রে কানাডার ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানির উপর ২৫% শুল্কের পরিবর্তে এখন ৫০% শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প। এর আগে কানাডার অন্ট্যারিও’র প্রাদেশিক নেতা বলেন যে ১৫ লক্ষ আমেরিকান ক্রেতার কাছে যে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয়, তিনি তার উপর আরও ২৫% কর আরোপ করছেন।

ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বড় বড় অক্ষরে কানাডাকে “বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ শুল্ক আরোপকারী রাষ্ট্র” বলে অভিহিত করেন। প্রেসিডেন্ট বলেন যে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকৃত ইস্পাত ও অ্যালুমিনয়ামের উপর আরোপ করা এই শুল্ক বুধবার সকাল থেকে কার্যকর হবে।

তা ছাড়াও ট্রাম্প আরও দাবি করেন যে অটোয়াকে, “যুক্তরাষ্ট্রের দুগ্ধজাত পণ্যের উপর ২৫০% থেকে ৩৯০% পর্যন্ত আরোপিত, আমেরিকান কৃষকদের বিরুদ্ধে এই শুল্ক অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে, এটিকে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ঠুরতা বলেই বিবেচনা করা হচ্ছে।"

স্বাভাবিক ভাবে কানাডা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচাইতে শক্তিশালী মিত্র এবং মেক্সিকোর পর সর্ববৃহৎ ব্যবসায়িক অংশীদার। গত সপ্তাহে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা সকল পণ্যের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেন এবং পরে তা এক মাসের জন্য বিলম্বিত করে এই বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করেন। ট্রাম্প বলেন যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন-প্রত্যাশীদের ঢল আরও কমাতে এবং অবৈধ মাদক দ্রব্য, বিশেষত প্রাণঘাতী ফেন্টানলের চোরাচালান বন্ধ করতে কানাডার উপর চাপ প্রয়োগ করছেন।

কানাডার বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণ্যের উপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এরপর অন্ট্যারিওর প্রাদেশিক গভর্ণর ডগ ফোর্ড বলেন যে কানাডার সীমান্তবর্তী যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলের যে তিনটি রাজ্য: মিশিগান, মিনেসোটা ও নিউইয়র্কে অন্ট্যারিও থেকে যে বিদ্যুৎ পাঠানো হচ্ছে তার জন্য তিনি আরও ২৫% মূল্য বৃদ্ধি করছেন।

টরন্টোতে এক সংবাদ সম্মেলনে ফোর্ড বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি আরও বাড়াবাড়ি করে আমি এই মূল্যবৃদ্ধি করতে দ্বিধাবোধ করবো না, আমি সম্পূর্ণ ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিতেও দ্বিধাবোধ করবো না”।

তিনি আরও বলেন, “বিশ্বাস করুন, আমি যখন বলি আমি এটা করতে চাই না, আমি আমেরিকান জনগণের জন্য ভীষণভাবে অনুভব করি যারা এই বানিজ্য যুদ্ধ শুরু করেনি। এর জন্য দায়ী এক ব্যক্তি । আর তিনি হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প”।

ফোর্ড বলেন, আর কানাডার এই বর্ধিত করের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের এই তিনটি রাজ্যে বাড়িপ্রতি বিদ্যুতের খরচ প্রতি মাসে প্রায় ৬৯ ডলার বৃদ্ধি পাবে।

সামাজিক মাধ্যমের পোস্টে ট্রাম্প পাল্টা জবাবে বলেন যে তিনি “এই সব হুমকি প্রাপ্ত অঞ্চলে তিনি শিগগিরই বিদ্যুৎ সংক্রান্ত জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করবেন। আর এর ফলে কানাডার এই অপমানজনক হুমকি থেকে মানুষকে রেহাই দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে যা করতে হবে তাই-ই করবে”।

ট্রাম্প ঘোষণা করেন, “যদি কানাডা দীর্ঘদিনের এই সব অন্যান্য বাজে শুল্ক প্রত্যাহার না করে, আমি এপ্রিলের ২ তারিখ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা গাড়ির উপর শুল্ক বৃদ্ধি করবো যার ফলে শেষ পর্যন্ত স্থায়ীভাবেই কানাডায় গাড়ি তৈরির ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। ওই সব গাড়ি সহজেই যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করা যাবে”।

ট্রাম্প কানাডাকে তার ৫১তম রাজ্য করার পরিকল্পনার কথাও নতুন করে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “এর ফলে সকল শুল্ক এবং সবকিছু সম্পূর্ণ উধাও হয়ে যাবে। কানাডাবাসীদের কর শেষে কমিয়ে আনা হবে, তারা আগের চাইতে সামরিক বা অন্যান্য ভাবে আরও অধিক নিরাপত্তা পাবে, তখন উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত বিষয়ক কোন সমস্যা থাকবে না এবং বিশ্বের বৃহত্তম এবং সব চেয়ে শক্তিশালী দেশটি যে কোন সময়ের তুলনায় আরও বড়, আরও উন্নত, আরও শক্তিশালী হবে – এবং কানাডা হবে তার বড় অংশ”।

তিনি বলেন কানাডার জাতীয় সঙ্গীত “ও কানাডা” গাওয়া হবে “তবে এবার তা পৃথিবীর বৃহত্তম রাষ্ট্রের ভেতরে একটি বৃহৎ ও শক্তিশালী অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করবে”।

কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে ট্রাম্পের শুল্ক-বাণিজ্য যুদ্ধ ওয়াল স্ট্রিটে আশংকা তৈরি করেছে।

স্টক মার্কেটের সূচক কিছু দিন ধরে নেমে এসেছে যেখানে ধনী আমেরিকানদের লভ্যাংশ হারিয়ে গেছে, সেই সঙ্গে প্রতিদিনের বিনিয়োগকারীদের সামান্য লাভও।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টক এক্সচেঞ্জের তিনটি প্রধান সূচকে বড় রকমের ক্ষতির পর, মঙ্গলবার প্রথম দিকের বাণিজ্যেও ক্ষতি হয়েছে কিন্তু ততটা নয়।

XS
SM
MD
LG