চার বছর আগে ইয়ালদা কখনই ভাবেনি যে সে আর তার শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারবে না কিংবা তার গ্রাজুয়েট হবার স্বপ্ন অর্জিত হবে না।
নিরাপত্তার কারণে নিজের পুরো নাম জানাতে চায়নি ইয়ালদা । সে বলে,“আমার বাবা-মা প্রায়ই তালিবানের প্রথম শাসনামলের [১৯৯০ ‘এর দশকে] কথা বলেন । আমি ভাবতাম আমি সৌভাগ্যবতী যে সে সময়ে আমার জন্ম হয়নি। দূর্ভাগ্যবশত, এখন আমরা একই নিয়তির শিকার”।
২০২১ সালের আগস্টে তালিবান যখন আফগানিস্তানের শাসন ভার গ্রহণ করে তখন ইয়ালদা ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। সে হচ্ছে আফগানিস্তানের ১৫ লক্ষ মেয়ের মধ্যে একজন যারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্কুল যাওয়ার বয়সী অধিকাংশ মেয়েদের মতো সেও এখন তার ঘরে বন্দি হয়ে রয়েছে।
ইয়ালদা বলে,“আমার মনে হয় আমি যেন জেলখানায় রয়েছি। আমি আশাহত এবং মনে হয় আমি যদি মেয়ে হিসেবে নাই-ই জন্মাতাম সেটাই ভাল হতো ”।
মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া থেকে মেয়েদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়াও তালিবান তাদের সরকারি ও বেসরকারি কাজ করা থেকে এবং কোন ঘনিষ্ঠ পুরুষ আত্মীয় ছাড়া দীর্ঘ ভ্রমণে আর পার্কে, গণ শৌচালয়ে এমনকী স্যালনে যাওয়াও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
আফগানিস্তানে জাতিসংঘের সহযোগিতা মিশন ৮ মার্চ জারি করা এক বিবৃতিতে “নারী ও মেয়েদের অস্তিত্ব জনজীবন থেকে ক্রমশই মুছে ফেলার” নিন্দা করেছে এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে তালিবানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
ওই মিশনটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এই বিধিনিষেধগুলি কেবল যে মানবাধিকারের লংঘন তাই নয় বরঞ্চ তা আফগানিস্তানের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাস্বরূপ, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে দারিদ্র ও বিচ্ছিন্নতাকে আরও গভীর করে তুলছে”।
তালিবান জাতিসংঘের এই আহ্বানকে এই বলে প্রত্যাখ্যান করে যে আফগানিস্তানের নারীদের “ইসলামের শারিয়া আইন অনুযায়ী” যথার্থ অধিকার দেওয়া হয়েছে।
তারা বলে, “বর্তমানে আফগান নারীরা সম্পুর্ণ ভাবে শারিরীক ও মনস্তাত্বিক নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করছেন”।
একজন আফগান শিক্ষয়িত্রী পাল্টা ব্যবস্থার আশংকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন যে আফগান নারীরা সে দেশে নিরাপদ বোধ করেন না।
এই শিক্ষয়িত্রী বলেন, “আমাদের কোন নিরাপত্তা নেই। আমি আর পড়াতে পারছি না। আমাদের কোন ভবিষ্যত্ নেই। এ দেশে আমাদেরকে সমান মানুষ হিসেবে আর বিবেচনা করা হয় না”।
নারীদের অন্তর্ভুক্তি, ন্যায্যতা ও নিরাপত্তার পরিমাপে জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির বৈশ্বিক নারী শান্তি ও নিরাপত্তার হিসেবে বিশ্বের ১৭৭ টি দেশের মধ্যে আফগানিস্তানের স্থান ১৭৭তম ।
এই শিক্ষয়িত্রী বলেন যে আফগানিস্তানে নারীরা হতাশাগ্রস্ত এবং বলেন “এই গোষ্ঠীটি যে কোন পরিবর্তন আনবে সেটার সম্ভাবনা নেই”।
প্যারিসে জরুরি শিক্ষা বিষয়ক ইউনেস্কোর কর্মসূচির সমন্বয়ক হোডা জাবেরিয়ান তালিবানের এই নিষেধাজ্ঞাকে “নারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ” বলে অভিহিত করেন।
তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন যে আফগানিস্তানে নারী অধিকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অগ্রাধিকারের বিষয় হওয়া উচিত্।
জাবেরিয়ান বলেন, “এটি নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব যে আফগান নারী ও মেয়েদের অধিকার অনতিবিলম্বে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হোক”।
কোন দেশই তালিবানকে আফগানিস্তানের বৈধ সরকার হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রে আফগানিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত আদেলা রাজ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে নারীদেরকে তাদের অধিকার প্রদানে সেই গোষ্ঠীর ব্যর্থতা।
তিনি আরও বলেন যে জাতিসংঘের সঙ্গে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলি এবং প্রতিবেশী দেশগুলির উচিত্ হবে নারী অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে তালিবানের উপর চাপ প্রয়োগ করা।
তিনি বলেন নারীদের অধিকার সমুন্নত রাখতে তালিবানের উপর চাপ প্রয়োগের ব্যাপারে “প্রতিবেশি দেশগুলির অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ কারণ এক অর্থে এই দেশগুলির সঙ্গে তালিবানের একটা সম্পর্ক রয়েছে”।
ইয়ালদা বলছে সে এবং আফগানিস্তানের অন্যান্য মেয়েরা আশা হারাচ্ছে।
ইয়ালদা বলে, “তারা [তালিবান] গত সাড়ে তিন বছরে বদলায়নি। আমার মনে হয় না তারা বদলাবে”।