গত বছর জুলাই-অগাস্ট মাসের আন্দোলনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত রিপোর্ট নিয়ে জেনেভায় বুধবার (৫ মার্চ) আলোচনাকালে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশনার ফলকার টুক বাংলাদেশকে “প্রতিশোধের চক্র” থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতা এবং মানবাধিকার রক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে টুক বলেন, বাংলাদেশের সামনে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে তার অতীত মোকাবেলা করে সত্য উদঘাটন এবং ক্ষত নিরাময় করার।
“দেশের যে প্রতিশোধের চক্র আমরা অতীতে দেখেছি, সেটা থেকে বেরিয়ে আসার এটা আসলেই একটা ঐতিহাসিক সুযোগ,” টুক বলেন। “জাতীকে ঐক্যবদ্ধ করার, আস্থা গড়ে তোলার জন্য কাজ করার।”
টুক ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত রিপোর্টের সারমর্ম উল্লেখ করে বলেন যে, তাদের বিশ্বাস প্রাক্তন সরকারের কর্মকর্তা, নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য এবং প্রাক্তন ক্ষমতাসীন দলের সাথে সম্পৃক্ত সহিংস ব্যক্তিরা গুরুতর, সংগঠিত এবং নিয়মমাফিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে যার মধ্যে ছিল শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বেআইনিভাবে আটক এবং নির্যাতন।
তবে টুক বলেন যে ৫ অগাস্ট-এর পর প্রতিশোধমূলক কর্মকাণ্ডও তারা নথিভুক্ত করেছে।
“প্রতিবাদ বিক্ষোভ শেষ হবার পর, প্রাক্তন ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক, পুলিশ অফিসার এবং কোন কোন ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীসহ সংখ্যালঘুদের উপর গুরুতর প্রতিশোধের ঘটনা আমরা নথিভুক্ত করেছি,” তিনি বলেন।
জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশনার সদস্য রাষ্ট্র এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে তাদের রিপোর্টের তথ্য এবং সুপারিশ নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকটি হয়, যার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে জবাবদিহিতা, ন্যায় বিচার এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত সংস্কার এগিয়ে নেয়া।
'মুসলিম বেশি, সংখ্যালঘু কম'
আলোচনার এক পর্যায়ে, জাম্বিয়ার এক কর্মকর্তা বলেন তাঁর মতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণকে ‘প্রতিশোধ’ বলা ঠিক হবে না। তিনি বলেন মব সংগঠিত করে সহিংসতা চালানো হয়েছে।
এই মন্তব্যের জবাবে প্যানেল সদস্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন ও বিচার উপদেষ্টা ডঃ আসিফ নজরুল বলেন যে, আওয়ামী লীগ সরকারের লোকজন, যারা বছরের পর বছর “নির্যাতন করেছে, হত্যা করেছে,” তাদের বিরুদ্ধে কিছু সহিংসতা হয়েছে।
“কিছু সংখ্যক লোক, যারা আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে গভীরভাবে জড়িত ছিল, তাদের আক্রমণ করা হয়েছে, সেরকম কিছু ঘটনা ঘটেছে,” নজরুল বলেন। “এবং আমরা শক্তভাবে সেটার নিন্দা করেছি।“
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কতজন আওয়ামী লীগ সমর্থক নিহত হয়েছে, তার কোন সরকারী পরিসংখ্যান নেই। পুলিশ সদর দফতর থেকে জানানো হয়েছে আন্দোলনের সময় ৪৪জন পুলিশ সদস্য নিহত হন।
তবে আইন উপদেষ্টা বলেন যারা নিহত হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই মুসলিম এবং সংখ্যালঘুর সংখ্যা খুবই কম।
“কাজেই, আপনি যদি এটাকে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ হিসেবে বর্ণনা করেন, তাহলে আমি আপনার সাথে দ্বিমত পোষণ করবো,” তিনি বলেন।
জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশনার বলেন ফৌজদারি মামলা আইনসম্মত প্রক্রিয়ায় পরিচালনা করা, এবং সংখ্যালঘুসহ সকল প্রতিশোধমূলক সহিংসতা তদন্ত করা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে।