পাকিস্তানে পুলিশ সোমবার (৩ মার্চ) জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বালুচিস্তান প্রদেশে একটি সামরিক গাড়ি বহরের কাছে একজন নারী আত্মঘাতী বোমারু নিজেকে বিস্ফোরিত করলে নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত একজন নিহত আর চারজন আহত হয়।
আধা-সামরিক বাহিনী ফ্রন্টিয়ার কোর-এর একজন কমান্ডার কালাত জেলার এই বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হননি।
স্থানীয় পুলিশ অফিসার হাবিবুল্লাহ হতাহতের ঘটনা নিশ্চিত করেন। তিনি ভিওএ’কে টেলিফোনে জানান যে, তদন্তকারীরা হামলাকারীর শরীরের বিভিন্ন অংশ খুঁজে পেয়েছে এবং সেগুলো থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বোমারু একজন নারী ছিলেন।
কালাত হামলার জন্য কেউ তাৎক্ষনিক দায়িত্ব দাবী করে নি। তবে, অতীতে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই বালুচিস্তানে নারী বোমারু সহ অন্যান্য সহিংস হামলার জন্য নিষিদ্ধ বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) দায়িত্ব দাবী করেছে।
পাকিস্তানে আত্মঘাতী নারী বোমারু খুব বিরল ঘটনা। একজন নারীর আত্মঘাতী বোমা হামলা শেষবার ঘটে ২০২২ সালে, যখন একজন বোমারু একটি ভ্যান লক্ষ্য করে হামলা চালায়, যে ভ্যান কয়েকজন চীনা শিক্ষককে করাচী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়ে যাচ্ছিল। ভ্যান চালক এবং তিনজন শিক্ষক নিহত হয়।
বিএলএ'র আক্রমণ বৃদ্ধি
বালুচিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনী এবং পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশ, বিশেষ করে পাঞ্জাব থেকে আসা মানুষের উপর বিএলএ-এর নেতৃতে আক্রমণ সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। ইরান এবং আফগানিস্তানের সাথে বালুচিস্তানের সীমান্ত রয়েছে।
গত মাসে, কালাতে বিএলএ যোদ্ধারা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যদের একটি বাসে হামলা চালিয়ে ১৮জনকে হত্যা করে। তার কয়েকদিন পরই, শহরে রাস্তার ধারে একটি বোমা বিস্ফোরণে ১১জন কয়লা খনি শ্রমিক নিহত হয়।
একই সময়, চীন-পরিচালিত একটি মাইনিং কোম্পানির গাড়ি বহর পাহারা দেয়ার সময় একটি সামরিক যানে হামলার কৃতিত্ব দাবী করে বিএলএ। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ জানায় যে, গাড়ি বহর কালাতের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় আক্রান্ত হয়, যার ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর আটজন আহত হয়।
বিএলএ চীনের অর্থায়নে পরিচালিত অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে আক্রমণের পক্ষে যুক্তি দিয়েছে এই দাবী করে যে, বেইজিং স্থানীয় সম্পদ শোষণ করতে ইসলামাবাদকে সাহায্য করছে, কিন্তু গরীব বালুচ অধিবাসীদের সাথে সুফল ভাগ করছে না।
পাকিস্তান এবং চীন অভিযোগ অস্বীকার করে। তারা দাবী করে যে, বালুচিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত করার লক্ষেই বিএলএ এবং অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।
বিএলএ সহ বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর একটি জোট এক যৌথ বৈঠকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের “সামরিক, অর্থনৈতিক এবং লজিস্টিকাল স্বার্থ ব্যাহত করার জন্য বালুচিস্তানের সকল গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক অবরোধ” বাস্তবায়ন করে “পাকিস্তান ও চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” ত্বরান্বিত করার অঙ্গীকার করার একদিন পরই সোমবারের বোমা হামলার ঘটনা ঘটলো।
সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ইমেইলের মাধ্যমে সাংবাদিকদের সাথে তথ্য শেয়ার করে, কিন্তু তাদের বৈঠকের স্থান বা সময় জানায়নি। ধারণা করা হয় যে বিএলএ হচ্ছে বালুচিস্তানের সবচেয়ে বড় এবং প্রাণঘাতী সংগঠন। যুক্তরাষ্ট্র বিএলএ’কে একটি বৈশ্বিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে।