অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

 
সম্মানজনক পুনর্বাসনই রোহিঙ্গা সমস্যার প্রাথমিক সমাধানঃ ফিলিপো গ্র্যান্ডি

সম্মানজনক পুনর্বাসনই রোহিঙ্গা সমস্যার প্রাথমিক সমাধানঃ ফিলিপো গ্র্যান্ডি


জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য এই জনগোষ্ঠীকে সম্মানের সাথে, স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং টেকসই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করাটাই প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে তিনি বলেন, এই লক্ষ্যপূরণের জন্য রোহিঙ্গারা যেখান থেকে এসেছেন সেখানে ফেরত পাঠানোর জন্য যথাযথ পরিবেশ তৈরি করা, সেখানে বসবাসরত অন্য গোষ্ঠীর সাথে শান্তিপূর্ন সহাবস্থান নিশ্চিত করায় জোর দেয়া দরকার।

বাংলাদেশকে দারুণ 'হোস্ট' আখ্যা দিয়ে গ্র্যান্ডি বলেন শুরু থেকেই বাংলাদেশ এই সংকট নিরসনের কাজ করে আসছে, "স্থানীয়রা যে স্বল্প সম্পদ রয়েছে তা শরণার্থীদের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছে"।

রবিবার চারদিনের সফর শেষ করে তিনি, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য জাতিসংঘের শরণার্থীদের জন্য হাইকমিশনের দৃঢ় প্রত্যয়ের ওপর জোর দেন।

প্রায় আট বছর ধরে এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য গ্র্যান্ডি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের কাছে বাংলাদেশের মানুষের উদারতার প্রশংসা করেছেন।

কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে গ্র্যান্ডি বলেন, শরণার্থীরা প্রতিকুল পরিবেশে বাস করছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকছেন তারা এবং তাদের মৌলিক চাহিদার জন্য প্রায় সম্পূর্ণরূপে মানবিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল, এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি টেকসই আর্থিক সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান গ্র্যান্ডি।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভুলে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে গ্র্যান্ডি বলেন, "সময়ের সাথে সাথে এবং সুনির্দিষ্ট সমাধানের ঘাটতির কারণে আপাতত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সম্পদ সহজলভ্য করা একদিকে যেমন কঠিন এবং এমনই এটাকেই অগ্রাধিকার দেয়া দরকার।"

তিনি শংকা প্রকাশ করে বলেছেন, "যদি হুট করে রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার, দাতা সংস্থাগুলো এবং শরনার্থীদের ওপর বাজেভাবে প্রভাব পড়বে হাজারো মানুষ ক্ষুধা, রোগ ও অনিরাপত্তায় ভুগবে"।

হাইকমিশনার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতা থেকে সম্প্রতি কক্সবাজারে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের সাথে কথা বলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের তীব্র সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার আরও বেড়েছে, যার ফলে অনেকের কাছে বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।

এছাড়া গ্র্যান্ডি ইমাম, নারী ধর্মীয় শিক্ষক ও ক্যাম্পে নানা সহিংস ঘটনায় দুশ্চিন্তায় থাকা মায়েদের সাথে কথা বলেন।

আত্মউন্নয়ন ও স্বনির্ভরতার সম্ভাবনা থাকলেও ক্যাম্পে সহিংসতা, সন্ত্রাসী ও নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে বলে জানান তারা।

সকলেই আমার সাথে তাদের আকাঙ্ক্ষা ভাগ করে নিয়েছিলেন যে তারা তাদের বাড়িতে ফিরে যাবেন, যখন প্রত্যাবাসনের পরিস্থিতি নিরাপদ হবে এবং স্বেচ্ছায় টেকসই প্রত্যাবাসনের সুযোগ থাকবে,” তিনি বলেন।

একটি দক্ষতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তরুণ শরণার্থীদের সাথে কথা বলার সময় হাই কমিশনার বলেন, “ক্যাম্পগুলিতে নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশের চেষ্টাকে অব্যাহত রাখতে সাহায্য করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অবশ্যই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যারা, বিশেষ করে সহিংসতা থেকে বেঁচে ফেরা নারীদের জন্য কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে এবং তরুণদের দক্ষতা এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে সহায়তা করতে হবে।”

গ্র্যান্ডি বলেন, এই তরুণেরা শিক্ষিত হতে এবং দক্ষ হতে কাজ করছে, তারা তাদের প্রতিভা কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে কাজ করে চলেছে, যদি আন্তর্জাতিক সাহায্য বাধাপ্রাপ্ত হয় সেক্ষেত্রে তাদের সীমানা আরও কোণঠাসা হয়ে যাবে, আমাদের এই আশা টিকিয়ে রাখতে কাজ করে যেতে হবে।"

কক্সবাজার ও ভাসানচরের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সাইক্লোন, বন্যা, ভূমিধ্বস সহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকেন।

বড় একটি ভূমিধ্বসে ক্ষতিগ্রস্থ জায়গা পরিদর্শন করে সরকারের নানা অংশীদারদের সাথে আলাপের সময় এসব জায়গায় ঝুঁকি কমিয়ে আনার ব্যাপারে সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন হাই কমিশনার।

এটি বাংলাদেশে হাই কমিশনারের ষষ্ঠ সফর।

XS
SM
MD
LG