বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন নাহিদ ইসলাম।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টা বরাবর তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
পদত্যাগপত্র প্রধান উপদেষ্টার হাতে তুলে দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, "আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। গেল ছয় মাসে আমি আমার জায়গা থেকে কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। দুটি মন্ত্রণালয়ের বাইরেও অনেক অতিরিক্ত দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হয়েছে আমাকে। আমরা চেষ্টা করেছি। মন্ত্রণালয়গুলোতেও আমরা কিছু কাজ করেছি, সেই কাজের ফলাফল হয়ত জনগণ পাবে।"
"ছয়মাস খুবই কম সময়, তবুও আমি চেষ্টা করেছি, আমার কাজ ও তার ফল জনগণ মূল্যায়ন করবে। আজ থেকে মূলত আমি সরকারের কোনো দায়িত্বে নেই," যোগ করেন তিনি।
এই ছাত্রনেতা আরও বলেন, "নিজের জায়গা থেকে মনে করেছি, আমার বাইরে থাকা দরকার। এখনো গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন হয়নি। বিচার ও সংস্কারের যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে এ সরকার গঠন করা হয়েছিল, সেটা পূরণে এখনো দুজন ছাত্র উপদেষ্টা রয়েছেন। তারা মনে করছেন, এখনো সরকারে তাদের দায়িত্ব রয়েছে। তারা সরকারে থেকেই জনগণকে সেবা দেবে। রাজনীতিতে প্রয়োজনবোধ করলে তারা সরকার ছেড়ে দেবে।"
"নতুন যে রাজনৈতিক শক্তি ও দল গঠিত হচ্ছে, তাতে অংশগ্রহণের অভিপ্রায় আমার আছে। জনগণের সঙ্গে মিশে জনগণকে ফের ঐক্যবদ্ধ করা, আমাদের যে গণঅভ্যুত্থানের প্রতিশ্রতি বাস্তবায়নে মাঠে থাকার লক্ষ্যেই আমি পদত্যাগ করেছি।"
সরকারে থেকে যতদিন দায়িত্ব পালন করেছেন, তাতে কোনো ব্যর্থতা ছিল কিনা; এমন প্রশ্নে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা আরও বলেন, "আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিলই, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছি সবসময়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছিল।"
"আমরা এসে আমলাতন্ত্রকে যেভাবে পেয়েছি, পুলিশের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল, জুলাই গণহত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের বিষয়ে আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, তবে আমরা কাজ করেছি। জনপ্রশাসনের একটি কমিটিতে দুসপ্তাহ ছিলাম। তাতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ২০১৮ সালে যারা ডিসি ছিলেন, দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন, তাদের সরানোর উদ্যোগ নিয়েছি," বলেন নাহিদ ইসলাম।
নাহিদ ইসলাম অন্তর্বর্তী সরকারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছিলেন।
২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসছে
নাহিদকে ট্যাগ করে এক ফেসবুক পোস্টে তাকে ‘রাজপথে স্বাগত' জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। জাতীয় কাজী নজরুল ইসলামের ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ারি’ কবিতার একটি লাইন শেয়ার দিয়ে তিনি বলেন, "এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার। রাজপথে স্বাগতম সহযোদ্ধা।"
আগামী শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) নতুন এই রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। জুলাই-অগাস্ট সরকার পতনের আন্দোলনের সময় সামনের সারিতে থাকা ছাত্রনেতারাই নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদগুলোতে আসছেন।
তিনি জানান, "আগামী শুক্রবার জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া এভিনিউতে নতুন এই দলের আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে।"
দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন সারজিস আলম।
সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান, "নতুন রাজনৈতিক দল ও দলীয় প্রতীক নিয়ে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ এসেছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।"
