অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

 
ফিলিস্তিনিদের স্থানচ্যূত করার প্রচেষ্টা প্রত্যখ্যান করলো আমিরাত

ফিলিস্তিনিদের স্থানচ্যূত করার প্রচেষ্টা প্রত্যখ্যান করলো আমিরাত


যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও( মাঝখানে) অ্যাডনেক সেন্টারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহামেদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের সঙ্গে হাঁটছেন। আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ১৯ ফেব্রুয়ারি,২০২৫।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও( মাঝখানে) অ্যাডনেক সেন্টারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহামেদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের সঙ্গে হাঁটছেন। আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ১৯ ফেব্রুয়ারি,২০২৫।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে বলেন “ ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের নিজেদের ভূমি থেকে বাস্তুচ্য়ূত করার যে কোন প্রচেষ্টাকে” সংযুক্ত আরব আমিরাত(ইউ-এ-ই) প্রত্যাখ্যান করে। রুবিও যখন বুধবার আবু ধাবী সফর করছিলেন তখন তিনি এই মন্তব্য করেন।

ইউ-এ-ই’এর রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম এই মন্তব্য প্রকাশ করে এবং বলে প্রেসিডেন্ট গাজায় সংঘাত সম্প্রসারণ রোধ করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “ তিনি গাজার পুনঃনির্মাণ দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সাথে যুক্ত করে সামগ্রিক ও স্থায়ী শান্তির দিকে নিয়ে যাওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন, যা কীনা ওই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার এক মাত্র উপায়”।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যে পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন যে ফিলিস্তিনিরা গাজা ছেড়ে ওই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে চলে যাক এবং যুক্তরাষ্ট্র ওই ফিলিস্তিনি ছিঁটমহলটি পুণনির্মাণ করুক, আরব নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

রুবিওর এই সফরটি ছিল একাধিক দেশে সফরের অংশ। গাজা ভূখন্ডে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অস্ত্রবিরতির চূড়ান্ত সপ্তাহগুলিতে তিনি ইসরায়েল ও সৌদি আরবের নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

জিম্মি মুক্তি

মঙ্গলবার হামাসের একজন শীর্ষ নেতা বলেন যে তারা আরও ছয় জন জীবিত ইসরায়েলি পণবন্দিকে শনিবার গাজার বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে এবং অন্য চারজনের মৃতদেহ বৃহস্পতিবার ফেরত দিতে যাচ্ছে।

রেকর্ড করা এক বিবৃতিতে হামাস নেতা খলিল আল-হায়া এই আকস্মিক ঘোষণা করেন , বাহ্যত মনে হচ্ছে গাজা ভূখন্ডে মোবাইল ঘরবাড়ি ও নির্মাণের সাজসরঞ্জাম পাঠানোর দীর্ঘ দিনের অনুরোধ ইসরায়েল মেনে নেওয়ায়, এ ছিল হামাসের ইতিবাচক প্রতিক্রয়া।

অস্ত্র বিরতির প্রথম পর্যায় যা মার্চের শুরুতে সম্পন্ন হবে তারই অধীনে ছয় জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে হামাস আরো প্রায় ৭০ জন পণবন্দি রয়েছেন যাদের অর্ধেকজন জীবিত আছেন। আগামি সপ্তাহে আরও চারটি মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার কথা।

অস্ত্রবিরতি চলাকালে এ পর্যন্ত হামাস ২৪ জন পণবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে আর ইসরায়েল এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।

দু পক্ষকেই এখন তাদের চুক্তির সব চেয়ে কঠিন দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে আপোষ আলোচনা করতে হবে। হামাস বলছে যে তারা অবশিষ্ট জিম্মিদের তখনই কেবল মুক্তি দিবে যখন লড়াই স্থায়ী ভাবে থেমে যাবে এবং গাজা থেকে সকল ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে।

এ দিকে গাজায় হামাসের সকল প্রশাসনিক বা সামরিক ভূমিকা নির্মূল করার লক্ষ্য থেকে ইসরায়েল পিছিয়ে যায়নি।

মঙ্গলবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার বলেন যে দ্বিতীয় পর্যায়ের বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ইসরায়েল প্রস্তুত রয়েছে। অস্ত্রবিরতি চুক্তি অনুযায়ী এই আলোচনা আরও দুই সপ্তাহ আগে শুরু হওয়ার কথা ছিল।

হায়া তার মন্তব্যে জানান যে চারটি মরদেহ হস্তান্তর করা হবে তার মধ্যে “ বিবাস পরিবার” অর্থাৎ শিরি বিবাস ও তাঁর দু’টি শিশু পুত্র ও অন্তর্ভূক্ত থাকছে।

ইসরায়েল তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেনি এবং কোন “ছবি, নাম ও গুজব” প্রচার না করার জন্য নেতানিয়াহুর দপ্তর জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েল বলেছে যে তারা বিবাস পরিবার নিয়ে গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। তবে হামাস বলছে তারা আগেই যুদ্ধের সময়ে ইসরায়েলি বিমান আক্রমণের সময়ে নিহত হয়। এই পরিবারের স্বামী ও বাবা ইয়ার্দেন বিবাসকে পৃথক ভাবে অপহরণ করা হয় এবং এ মাসে মুক্তি দেওয়া হয়।

আশা করা হচ্ছে ইসরায়েল জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া অব্যাহত রাখবে। এই ফিলিস্তিনি বন্দিদের মধ্যে অনেকেই প্রাণঘাতী আক্রমণ চালানোর জন্য যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র অভিহিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস ২০২৩ সালের হামলায় প্রায় ১২০০ লোককে হত্যা করে এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে যায়। অস্ত্র বিরতি চুক্তি এবং অন্যান্য চুক্তিতে বন্দিদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং আটজনকে সামরিক অভিযানের সময়ে উদ্ধার করা হয়।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে ইসরায়েলের বিমান ও স্থল যুদ্ধে ৪৮,২০০’র ও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। তবে এই সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়নি যে কয়জন যুদ্ধে অংশ নিচ্ছিল। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে নিহতদের এই সংখ্যার মধে ১৭,০০০ জঙ্গিও রয়েছে। এই লড়াইয়ে গাজার বিশাল এলাকা ধ্বংস হয়েছে এবং ওই অঞ্চলের ২৩ লক্ষ মানুষের অধিকংশই বাস্তুচ্যূত হয়েছে।

এই প্রতিবেদনে এপি,এএফপি ও রয়টার্স থেকে কিছু তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

XS
SM
MD
LG