বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত ২০শে এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেয়।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের কাছে সময় বাড়ানোর আবেদন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, "শেখ হাসিনার মামলায় তদন্ত কাজ প্রায় শেষের দিকে আছে। দুই মাস সময় চাইলেও তার আগেই প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবেন বলে আশা করছেন।"
তিনি জাতিসংঘের প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে বলেন, "জুলাই-অগাস্টে বাংলাদেশে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, তা ছিল বিস্তৃত এবং সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায়।"
ছাত্র-জনতাকে দমন করার জন্য সরকারের সকল ফোর্স, আগ্নেয়াস্ত্র, মারণাস্ত্র, হেলিকপ্টার ব্যবহার করে তাদেরকে হত্যা করেছে, বলে জানান তিনি।
এই অপরাধের প্রধান নির্দেশদাতা হিসাবে জাতিসংঘ শেখ হাসিনাকে চিহ্নিত করেছে জানান চিফ প্রসিকিউটর।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই ও অগাস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের সময় দেশের তৎকালীন সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত কিছু সহিংস লোকজন সাথে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল।
১২ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ে (ওএইচএসিএইচআর) বাংলাদেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
“ওএইচএসিএইচআর যৌক্তিক কারণে মনে করে যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই সব ঘটনা বিক্ষোভ এবং ভিন্নমত দমনের কৌশল হিসেবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের অবগতি, সমন্বয় এবং নির্দেশনায় পরিচালিত হয়েছে,” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইনের প্রেক্ষিতেও উদ্বেগ সৃষ্টি করে। এই অপরাধগুলো কোন মাত্রায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়েও পরে কি না, তা যাচাই করার জন্য আরও তদন্তের প্রয়োজন আছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুই শতাধিক মামলা হয়েছে বলে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "তার বিরুদ্ধে প্রতিদিনই মামলা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন থানায় ঢালাওভাবে খুনের মামলা দেওয়া হচ্ছে। এটার শেষ কোথায় আমরা জানি না।”
শেখ হাসিনা ও দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা হত্যা মামলাগুলো আইনিভাবে মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তার জন্য দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে যারা এসব মামলায় সহযোগিতা করতে পারে, তাদের সাহায্য নেবে দলটি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে আইনি মোকাবিলা করার সুযোগ নেই বলে দাবি তাদের।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম ২০২৪-এর ডিসেম্বরে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “অবশ্যই আমরা এসব মামলা আইনিভাবে মোকাবিলা করব। আমাদের সিনিয়র ও তরুণ আইনজীবীরা চেষ্টা করছেন। তবে এখন আইনি মোকাবিলা করার মতো পরিস্থিতি আদালতে নেই।”
“আইনি লড়াইয়ের জন্য দেশি এবং আন্তর্জাতিক; বহির্বিশ্বে যে-সব আইনজীবী, যারা এসব মামলায় আইনি সহায়তা দিতে পারেন, তাদেরও সহযোগিতা আমরা নেব” বলে জানান নাছিম।