যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ ইউরোপের প্রতিরক্ষায় নেটোর ইউরোপীয় সদস্যদের আরও বেশি ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগর সংলগ্ন তাদের মিত্রদের প্রতিরক্ষার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
তিনি বলেন এই জন্য ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতিরক্ষা ব্যয় সম্ভবত উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে হবে, বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনের ২% থেকে ৫% তে উন্নীত করতে হবে।
“আমরা মূল্যবোধ সম্পর্কে যত খুশি কথা বলতে পারি। মূল্যবোধ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু আপনি মূল্যবোধকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন না, পতাকাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন না, এবং কড়া ভাষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন না। সামরিক শক্তির কোন বিকল্প নেই," বৃহস্পতিবার ব্রাসেলস’এ নেটো সদর দপ্তরে হেগসেথ সংবাদদাতাদের বলেন।
নেটোর ইউরোপীয় মিত্ররা ২০১৪ সালে ২% প্রতিরক্ষা ব্যয়ের লক্ষ্য ধার্য করার পর, গত বছর প্রথমবারের মত তারা একত্রে তাদের মোট দেশজ উৎপাদনের ২% অর্থাৎ প্রায় ৩৮ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করে। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে প্রতিরক্ষা ব্যয় হিসেবে তাদের মোট দেশজউৎপাদনের ৩.৫% খরচ করে। কানাডা ও ইউরোপীয় নয় নেটোর এমন মিত্র রাষ্ট্রগুলি প্রতিরক্ষা খাতে তাদের মোট দেশজ উৎপাদনের ১.৪% খরচ করে।
“নোটো একটি দারুণ জোট, ইতিহাসে সব চেয়ে বেশি সফল প্রতিরক্ষা জোট কিন্তু ভবিষ্যতে এটি অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের অংশীজনদের ইউরোপের প্রতিরক্ষার জন্য আরও অনেক কিছু করতে হবে," হেগসেথ বলেন। তিনি জোর দিয়েই বলেন “ প্রশান্ত অঞ্চলে” চীনের আগ্রাসন প্রতিহত করতে “বস্তুত কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দিতে পারে।"
তিনি বলেন যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে কোন সংঘাত চায় না, এ রকমও অনুভব করে না যে চীনের সঙ্গে সংঘাত অনিবার্য, তবে তিনি বলেন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে মিত্রদের সঙ্গে কাজ করতে হবে, আর এই প্রতিরোধ হবে “ কঠোর প্রতিরোধ, কেবল সুনাম অর্জনের জন্য নয়।"
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
বুধবার হেগসেথ বলেন রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের যুদ্ধ পূর্ববর্তী সীমান্তে ফিরে যাওয়াটা “ অবাস্তব লক্ষ্য” হবে, যেমন অসম্ভব লক্ষ্য হবে ইউক্রেনের নেটোতে যোগ দেওয়া। তিনি ইউরোপীয় ও ইউরোপীয় নয় এমন দেশগুলির সৈন্যদের সমর্থনে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে আপোষ আলোচনার মাধ্যমে এই যুদ্ধ বন্ধ করার পক্ষে বক্তব্য দেন। কিন্তু এতে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী অন্তর্ভুক্ত থাকবে না।
হেগসেথের মন্তব্যের প্রসঙ্গে জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেন নেটোতে ইউক্রেনের সম্ভাব্য সদস্যপদ লাভ এবং তারা কোন অঞ্চল ছেড়ে দিবে কী না সে বিষয়ে শান্তি আলোচনা শুরুর আগে সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। তিনি হেগসেথের মন্তব্যকে যুক্তরাষ্ট্রের "ছাড় দেয়া" বলে উল্লেখ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সুবিধা প্রদান কমিয়ে আনছে কী না জানতে চাওয়া হলে হেগসেথ বলেন, “ভ্লাদিমির পুতিন শক্তিতে সাড়া দেন”। পুতিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সব কিছু চাইলেই কেউ সবিকছু পাবে না। প্রথমেই বুঝতে হবে কে আগ্রাসন চালিয়েছে।"
নেটোর মহাসচিব মার্ক রুটও প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় বৃদ্ধিকে আবার সমর্থন করেন এবং মনে হচ্ছে তিনি ওই জোটে ইউক্রেনের যোগদানের বিষয়ে হেগসেথের মন্তব্যকে সমর্থন করেন। বৃহস্পতিবার রুট বলেন যে নেটোকে “এটা নিশ্চিত করতে হবে যে ভ্লাদিমির পুতিন আর কখনো যেন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আক্রমণ না চালান।" আর তিনি বলেন যে, "ইউক্রেনকে এটা কখনই প্রতিজ্ঞা করা হয়নি যে চুক্তির অংশ হিসেবে তারা নেটোতে যোগ দিতে পারবে।"
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই শীর্ষ কূটনীতিক সতর্ক করে দেন যে ইউক্রেন কিংবা ইউরোপীয় ইউইনয়নকে বাদ দিয়ে , যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যকার যে কোন চুক্তি ব্যর্থ হবে।
এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এপি , এফপি ও রয়টার্স থেকে নেওয়া হয়েছে।