শনিবার আফ্রিকান নেতাদের নিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর সংকট মোকাবিলার জন্য অনুষ্ঠিত একটি শীর্ষ সম্মেলনে পাঁচ দিনের মধ্যে "তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির" আহ্বান জানানো হয়।
এম২৩ সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে একটি আক্রমণ চালিয়ে দ্রুত বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করেছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠীটিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে চিহ্নিত করেছে। জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র এটিকে একটি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে।
তানজানিয়ায় শীর্ষ সম্মেলনটিতে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে এবং কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স চিসেকেদি একত্রিত হন, পাশাপাশি পূর্ব আফ্রিকান সম্প্রদায় জোট এবং ১৬ সদস্যের দক্ষিণ আফ্রিকার উন্নয়ন সম্প্রদায়ের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।
কাগামে ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হন, আর চিসেকেদি ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগ দেন।
শীর্ষ সম্মেলনের চূড়ান্ত বিবৃতিতে উভয় সম্প্রদায়ের সেনাপ্রধানদের পাঁচ দিনের মধ্যে বৈঠক করে "তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়নে কারিগরি দিকনির্দেশনা দেওয়ার" আহ্বান জানানো হয়েছে।
সম্মেলনে নিহত ও আহতদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য মানবিক করিডোর খোলারও আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে, দক্ষিণ কিভুর প্রাদেশিক রাজধানী বাকুভু থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে যুদ্ধ অব্যাহত ছিল, স্থানীয় এবং নিরাপত্তা সূত্রগুলো এএফপিকে জানায়।
গত সপ্তাহে এম২৩ উত্তর কিভু প্রদেশের রাজধানী, কৌশলগত শহর গোমা দখল করে এবং বর্তমানে প্রতিবেশী দক্ষিণ কিভুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই সংঘর্ষ অঞ্চলটির দশকব্যাপী অস্থিরতার সর্বসাম্প্রতিক ঘটনা।
স্থানীয় আশঙ্কা
২০২১ সালে এম২৩ পুনরায় আবির্ভুত হওয়ার পর থেকে অ্যাঙ্গোলা এবং কেনিয়ার আয়োজিত শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয় এবং একাধিক যুদ্ধবিরতি অকার্যকর হয়।
যদিও রুয়ান্ডা এম২৩-কে সামরিক সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি অব্যাহতভাবে অস্বীকার করছে, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের একটি প্রতিবেদন গত বছর জানায়, রুয়ান্ডার প্রায় ৪,০০০ সৈন্য গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে অবস্থান করছিল এবং দেশটি থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ এবং কোল্টান পাচার করে লাভবান হচ্ছিল। কোল্টান ফোন এবং ল্যাপটপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খনিজ।
রুয়ান্ডা ডিআরসি-কে ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস ফর দ্য লিবারেশন অফ রুয়ান্ডা নামক সশস্ত্র গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে।এটি হুতু জাতিগত সদস্যদের দ্বারা গঠিত একটি সশস্ত্র দল যারা ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যার সময় তুতসিদের গণহত্যা করে।
এই শীর্ষ সম্মেলনটি এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন রিপোর্ট এসেছে এম২৩ দক্ষিণ কিভুর কাভুমু শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।কাভুমু শহরে কঙ্গোলিজ সেনা সরবরাহের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর রয়েছে।
প্রাদেশিক রাজধানী বুকাভুতে আতংকেরও খবর পাওয়া গিয়েছে। বাসিন্দারা দোকানগুলি বন্ধ করে পালানোর চেষ্টা করছে।
গণধর্ষণ, দাসত্ব
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভল্কার টুর্ক শুক্রবার সতর্ক করে বলেন, "যদি কিছু না করা হয়, তবে পূর্ব ডিআরসির মানুষের জন্য আরও খারাপ কিছু আসতে পারে, এবং এই বিপদ দেশের সীমানার বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।"
টুর্ক বলেন, এম২৩ জানুয়ারীর ২৬ তারিখ কগোমাতে প্রবেশের পর থেকে প্রায় ৩০০০ জন মানুষ নিহত এবং ২৮৮০ জন আহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং চূড়ান্ত পরিসংখ্যান অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।