যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, তিনি চান যুক্তরাষ্ট্র গাজা দেখভালের দায়িত্ব গ্রহণ করুক। এর আগে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত ঐ ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতিবেশী দেশ জর্ডান ও মিশরে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
“যুক্তরাষ্ট্র গাজা ভূখণ্ডের দায়িত্ব নেবে, এবং আমরা সেখানে কাজ করব”, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরে, তাদের নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশে পায়ে হেঁটে রওনা হয়েছে। হামাসের সঙ্গে জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েল তাদেরকে বাড়ি ফেরার অনুমতি দেয়।
ট্রাম্প বলছেন, তিনি এই অঞ্চলকে তার ভাষায় “মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা” হিসেবে গড়ে তুলতে চান।
“আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা সবাই আমেরিকার কাছে এই ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ থাকা, এর উন্নয়ন ঘটানো ও হাজার হাজার চাকরি তৈরির চিন্তাধারা পছন্দ করেছেন। তাদের মতে, এসব অসামান্য কার্যক্রমে ঐ এলাকাটিও অসামান্য হয়ে উঠবে।”
নেতানিয়াহু বলেছেন, যুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল হামাস যাতে আর কখনো ইসরায়েলের প্রতি হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হতে না পারে। নেতানিয়াহু এবার বললেন, ট্রাম্প একে (তার এই লক্ষ্যকে) “নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন”।
“আমার মনে হয় এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হবে। এবং এই চিন্তাধারা অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়া অবশ্যই লাভজনক হবে”, যোগ করেন তিনি।
কীভাবে ১৫ মাসের যুদ্ধে বিধ্বস্ত গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবেন, তার বিস্তারিত তথ্য জানাননি ট্রাম্প। তবে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মোতায়েনের সম্ভাবনাও নাকচ করেননি তিনি।
“যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা সেটা (সেনা মোতায়েন) করব। আমরা ওই জায়গার নিয়ন্ত্রণ নেব এবং সেখানে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালাব”, বলেন তিনি।
তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে গাজার জনগোষ্ঠীকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার আলোচনায় আপত্তি জানাবে ফিলিস্তিনিরা। এখন যে ভূখণ্ডের নাম ইসরায়েল, সেখান থেকেই অতীতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে বিতারণ করা হয়েছিল। ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সময়কালে এবং পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে যখন গাজা ভূখণ্ড এবং পশ্চিম তীর অবরুদ্ধ করে ইসরায়েল, তখন দুই দফায় তারা নিজ ভূখণ্ড থেকে বিতাড়িত হন।
জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এ মুহূর্তে গাজায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস।
বুধবার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে ট্রাম্পের প্রস্তাব “আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন”।
মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছে। তারা উল্লেখ করেছে, “গাজা ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনিদের না সরিয়ে” যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে পুনর্নির্মাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন।
চীন, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক ও ফ্রান্স এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
ট্রাম্প নিজে তার অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে আব্রাহাম চুক্তির সম্প্রসারণ ঘটিয়ে রিয়াদকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছেন। কীভাবে গাজা দখল এই লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তিনি ২০২০ সালে ওই চুক্তি বাস্তবায়ন করেছিলেন, যার মাধ্যমে ইসরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সৌদি আরব দ্রুত ট্রাম্পের গাজা সংক্রান্ত মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, তারা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন ব্যতিরেকে ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করবে না। একইসঙ্গে তারা জানিয়েছে, তাদের এই অবস্থান নিয়ে কোনো দরকষাকষি সম্ভব হবে না।