অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

 
ট্রাম্পঃ জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব অধিকার বাতিল করার আদেশ নিয়ে প্রবল বিতর্ক

ট্রাম্পঃ জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব অধিকার বাতিল করার আদেশ নিয়ে প্রবল বিতর্ক


চীন থেকে আসা অভিবাসী এবং তার যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া শিশু। ফাইল ফটোঃ ৩ জুলাই, ২০১৮।
চীন থেকে আসা অভিবাসী এবং তার যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া শিশু। ফাইল ফটোঃ ৩ জুলাই, ২০১৮।

যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিল করে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ নিয়ে এক আইনগত এবং রাজনৈতিক বিতর্ক জ্বলে উঠেছে। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার মাত্রা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

যেকেউ যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্ম গ্রহণ করলে তাঁর নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করেছে এই সংশোধনী ।

“পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র রাষ্ট্র যারা জন্মসূত্র নিয়ে এটা করে। এবং এটা একেবারেই হাস্যকর। আমাদের মনে হয় আমাদের ভাল যুক্তি আছে এবং মানুষ অবশ্যই এটা দশকের পর দশক ধরে চেয়েছে,” ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম দিন নির্বাহী আদেশ সাক্ষর করার সময় বলেন।

যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে ৩০টি দেশের মধ্যে একটি যারা এ’ধরনের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে, যাদের মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, মেক্সিকো এবং কানাডা। এই পদ্ধতি ‘জুস সোলি’ নামে পরিচিত (ল্যাটিন ভাষায় যার মানে ‘মাটির অধিকার’) কিন্তু ১৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে শর্তহীন ভাবে জুস সোলি ব্যবহার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র অনন্য।

এই সংশোধনী ১৮৬৮ সালে অনুমোদন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের পর নাগরিকত্ব প্রশ্নের সমাধান এবং ১৮৫৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের যে সিদ্ধান্ত আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের নাগরিকত্বের অধিকার অগ্রাহ্য করে, সেটা পাল্টে দেয়ার জন্য এই সংশোধনী আনা হয়।

President Donald Trump signs an executive order on birthright citizenship in the Oval Office of the White House, in Washington, Jan. 20, 2025.
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিল করে নির্বাহী আদেশে সাক্ষর করছেন। ফটোঃ ২০ জানুয়ারি, ২০২৫।

সংশোধনীতে লেখা আছেঃ “সকল মানুষ যারা যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিয়েছে বা দেশিভুত হয়েছে, এবং যারা তার আইনগত আওতায় পরে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের এবং যে রাজ্যে বসবাস করছে সে রাজ্যের নাগরিক।”

“যে সাধারণ ধারণা বোঝায় যে, যেকেউ যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম গ্রহণ করলে সে নাগরিক হয়ে যাবে, এই সংশোধনীর ভাষা সেটাকেই অনুমোদন করছে,” ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কলি স্কুল অফ ল’র অধ্যাপক এবং হুভার ইন্সটিটিউট-এর ভিসিটিং ফেলো জন ইয়ু ভিওএ-কে এক সাক্ষাৎকারে বলেন।

তবে, সমালোচকরা যুক্তি দেখাচ্ছেন যে, একটি বাক্যাংশ, “যারা তার আইনগত আওতায় পরে,” পরোক্ষভাবে বোঝায় যে, জন্মগ্রহণ করা শিশুকে নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য বাবা-মা’র অন্তত একজনের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়া প্রয়োজন।

জন ইয়ু’র মতে, এই ব্যাখ্যা ইউরোপিয়ান জুস সানজুইনিস, বা “রক্তের আইন”পদ্ধতির সাথে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ।

“আমার কাছে, ১৪তম সংশোধনীর ভাষা এবং ঐতিহাসিকভাবে তার প্রয়োগের আলোকে এই ব্যাখ্যার কোন মানে হয় না,” ইয়ু বলেন। “সুপ্রিম কোর্ট বার বার এই সংশোধনীর ব্যাখ্যা জন্মসূত্রে নাগরিকত্বর অধিকার হিসেবেই দিয়েছে।”

ট্রাম্পের আদেশের সমালোচকরা বলছেন, ১৪তম সংশোধনী হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকারের ভিত্তি।

কংগ্রেসে রিপাবলিকান দলের সদস্য টেক্সাসের ব্রায়ান বাবিন। ফটোঃ ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫।
কংগ্রেসে রিপাবলিকান দলের সদস্য টেক্সাসের ব্রায়ান বাবিন। ফটোঃ ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫।

কিন্তু, নির্বাহী আদেশের সমর্থকরা যুক্তি দেখান যে, সংশোধনীর আরও সংকুচিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁর আমেরিকাকে পুনরায় মহান করার দর্শনের কেন্দ্রে রয়েছে আমাদের অভিবাসন সিস্টেমে ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনা এবং ১৪তম সংশোধনীর আসল উদ্দেশ্য রক্ষা করা,” কংগ্রেসে রিপাবলিকান দলের সদস্য টেক্সাসের ব্রায়ান বাবিন গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন।

রক্ষণশীল গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র লিগাল ফেলো এমি সোয়েরার ২০১৯ সালের এক রিপোর্টে লিখেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্ম নেয়া সবাইকে নাগরিকত্ব দেয়ার দীর্ঘস্থায়ী নীতি পুনর্বিবেচনা করার ভাল কারণ যুক্তরাষ্ট্রের আছে।

সোয়েরার যুক্তি দেখান যে, ১৪তম সংশোধনীর উদ্দেশ্য ছিল জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব শুধু যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া সেই সব শিশুদের দেয়া, যাদের বাবা-মা, “মুক্তি পাওয়া ক্রীতদাসের মত, যুক্তরাষ্ট্রের আইনগত আওতায় ছিল। আধুনিক অভিবাসনের পটভূমিতে এর মানে হবে যে, সংবিধান জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব অনুমোদন করে শুধুমাত্র নাগরিক এবং আইনগত বাসিন্দাদের যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া শিশুদের জন্য।”

আইনগত চ্যালেঞ্জ

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ উল্লেখযোগ্য আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে এবং একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। ডেমোক্র্যাট-শাসিত ২২টি রাজ্য একটি মামলা দায়ের করে যুক্তি দিয়েছে যে, ট্রাম্পের আদেশ ১৪তম সংশোধনী লঙ্ঘন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিসট্রিক্ট বিচারক জন কাফেনোর। ফাইল ফটো।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিসট্রিক্ট বিচারক জন কাফেনোর। ফাইল ফটো।

সিয়াটলে এক ফেডেরাল বিচারক জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব অধিকার বাতিলের আদেশ কার্যকর করার বিরুদ্ধে সাময়িকভাবে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার, যুক্তরাষ্ট্রের ডিসট্রিক্ট বিচারক জন কাফেনোর আদেশটিকে “নির্লজ্জভাবে অসাংবিধানিক” আখ্যা দিয়ে সাময়িকভাবে আটকে দেন।

কিন্তু এই মামলা যদি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়, তাহলে তার ফলাফল নাগরিকত্ব নিয়ে এই জাতীর ধারণা পুনর্গঠন করতে পারে। যদি আদালত ট্রাম্পের পক্ষে রায় দেয়, তার প্রভাব তাৎক্ষনিকভাবে পড়বে সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর উপর যারা এখনো জন্ম সনদ বা সোশাল সিকিউরিটি নাম্বার পায়নি।

“এই রায় পূর্ববর্তীভাবে কীভাবে কাজ করবে, তা বোঝা খুবই জটিল। যারা এ’দেশে জন্ম নিয়েছে কিন্তু বাবা-মা নাগরিক ছিলেন না, এই রায় কি তাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করবে? কত দূর পেছনে যাওয়া হবে? এই সব বিষয় এড়ানোর জন্যই ১৪তম সংশোধনী তৈরি করা হয়েছিল,” ইয়ু ভিওএ-কে বলেন।

যদিও সবার মনোযোগ আইনগত চ্যালেঞ্জের দিকে, ইয়ু বললেন কংগ্রেস বিষয়টি আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে পারে।

“কংগ্রেস আইনের মাধ্যমে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বর অধিকার এগিয়ে নিতে পারে, এবং সাধারণ ধারণাকে পুনরায় নিশ্চিত করতে পারে। তবে বর্তমানে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিবেশে কংগ্রেস কতটুকু করতে পারবে, তা পরিষ্কার না,” ইয়ু বলেন।

কিন্তু তারপরও, তিনি বিশ্বাস করেন সুপ্রিম কোর্ট জন্মসূত্রে নাগরিকত্বর অধিকার সমুন্নত রাখবে।

XS
SM
MD
LG