'গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড ও দুর্নীতির' জন্য ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে বিক্ষোভ করার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি লিখেছেন, “আমরা দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার কোনো ধরনের প্রচেষ্টাকে সুযোগ দেব না।”
আওয়ামী লীগ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রচারপত্র বিলি, অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর প্রেক্ষিতে বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ কথা লেখেন তিনি।
সরকারে থাকাকালে আওয়ামী লীগের অপকর্মের বিবরণ দিয়ে শফিকুল আলম লিখেছেন, “যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ এই গণহত্যা, হত্যাকাণ্ড এবং প্রকাশ্য দুর্নীতির জন্য ক্ষমা না চাইবে এবং যতক্ষণ না তাদের অন্যায়কারী নেতাকর্মীরা বিচার ব্যবস্থার কাছে আত্মসমর্পণ করে তাদের অপরাধের জন্য বিচারকার্যের প্রক্রিয়া শুরু করে পাপমোচন করতে উদ্যোগ না নেবে এবং যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ তাদের বর্তমান নেতৃত্ব ও ফ্যাসিবাদী আদর্শ থেকে নিজেকে আলাদা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিক্ষোভ করার অনুমতি দেওয়া হবে না।"
অগাস্টে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার কোনো নায্য বিক্ষোভ বন্ধ বা নিষিদ্ধ করেনি জানিয়ে তিনি লিখেছেন, “আমরা সমাবেশ করার স্বাধীনতা এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। আজ সকালে গণমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাড়ে পাঁচ মাসে কেবল ঢাকায় কমপক্ষে ১৩৬টি বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি বিক্ষোভের ফলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবুও, সরকার কখনো বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করেননি।”
আমাদের কি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে বিক্ষোভ করার সুযোগ দেওয়া উচিত? প্রশ্ন রেখে প্রেস সচিব লিখেছেন, “জুলাই-অগাস্টের ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায় যে আওয়ামী লীগের কর্মীরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের হত্যায় অংশ নিয়েছিল। তাদের পরিচালিত হত্যাকাণ্ডে শহিদ হয়েছেন কয়েক শ তরুণ শিক্ষার্থী, এমনকি নাবালক শিশুরাও। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় গণহত্যা, খুন ও তাণ্ডবের জন্য দায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার।”
আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজে নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতিবাদ এবং দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন দাবিতে ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি, ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ, ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ, ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক কঠোর হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ কি কোন নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল? তারপরেও তিনি আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেবেন নাঃ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের মন্তব্যের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "উনি (অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব) রাজনীতিবিদদের অসম্মান করে কথা বলেন। এ ধরনের কথা বলার কোন ম্যান্ডেট কি উনার আছে? আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক চেতনায় সমৃদ্ধ রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ কি কোন নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল? তারপরেও তিনি আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেবেন না। এটা কোন পরিভাষায় তিনি কথা বলেন?"
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ ধরনের কঠোর অবস্থানের পরেও আওয়ামী লীগের কর্মসূচি থাকবে কিনা বা কিভাবে পালন করবেন জানতে চাইলে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, "আমরা জনগণের কাছে আমাদের জবাব দিব। জনগণের সঙ্গে কথা বলব। আমরা তো কোন অনির্বাচিত ও অসংবিধানিক সরকারের কাছে ক্ষমা চাইবো না। তাদের নির্দেশে তো আমরা চলি না।"
তিনি আরও বলেন, "জনগণ চাইলে তাদের কাছে আমরা জবাবদিহি করবো৷ জনগণের কাছে গিয়ে জবাবদিহি করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের দল আওয়ামী লীগ। এটাই আমাদের ৭৫ বছরের ইতিহাস। আমাদের ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলে সমালোচনা করার অধিকার বাংলাদেশের মানুষের আছে। দেশের গণমাধ্যমেরও আছে। কিন্তু কোন ব্যক্তির আঙুলি হেলনে একটি দল পরিচালিত হতে পারে না। কোন সরকারি কর্মকর্তার নির্দেশে রাজনৈতিক দল বা রাজনীতিবিদরা কথা বলবেন, এটা দেশের মানুষও আশা করে না।"
আওয়ামী লীগ ১৬ বছর ধরে দমন-পীড়ন চালালেও প্রতিশোধ নেওয়া বিএনপির লক্ষ্য নয়: তারেক রহমান
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, আওয়ামী লীগ ১৬ বছর ধরে দমন-পীড়ন চালালেও প্রতিশোধ নেওয়া বিএনপির লক্ষ্য নয়। বরং এর জবাব হবে দলের ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে।
২৯ জানুয়ারি ৩টি ভার্চুয়াল কর্মশালায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, "আমি বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগের দমন-পীড়নের প্রকৃত প্রতিশোধ হলো আমাদের ৩১ দফা রূপরেখা বাস্তবায়ন করা।"
তারেক রহমান বলেন, "যেকোনো নির্যাতিত ব্যক্তি নিপীড়কদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চায়—আপনারা চান, আমিও চাই, সবাই চায়। তবে আমার মনে হয় বিএনপির সবাই একমত হবেন যে, আমাদের প্রকৃত প্রতিশোধ হবে ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে।"
আওয়ামী লীগের আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ২৫ জানুয়ারি বলেছেন, "দেশবিরোধী আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ যদি ফেরত আসে, তাহলে আবার ফ্যাসিবাদ ফেরত আসবে।"
মাহফুজ আলম বলেন, "বিএনপি-জামায়াতসহ অন্য রাজনৈতিক দল যারা বাংলাদেশপন্থি আছেন, তারাই নির্বাচনে থাকবেন। সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে, সব দল ইতিবাচক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশে শাসন প্রতিষ্ঠা করবে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা আর শেখ মুজিব-শেখ হাসিনাসহ ফ্যাসিবাদীদের শাসনামল চাই না। আমরা চাই এই দেশ বাংলাদেশপন্থিদের হাতে থাকবে।"
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন ১১ জানুয়ারি বলেছিলেন, “আমাদের কাজ হলো যখন আমরা শিডিউল ঘোষণা করি, তার আগে নিবন্ধিত যে কয়টি দল থাকে, তাদের মধ্যে সুন্দর একটা নির্বাচন আয়োজন করা। সময় আসুক, দেখবেন কারা কারা নিবন্ধিত অবস্থায় থাকে। যারা যারা থাকবে, তাদের নিয়ে নির্বাচন করব। অপেক্ষা করুন, আমরাও অপেক্ষা করি।”
এর আগে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে সিইসি নাসির উদ্দীন মন্তব্য করেছিলেন সরকার বা আদালত যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করে, তাহলে দলটির নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই।
(এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন হাসিবুল হাসান।)