অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

র‍্যাবের সাবেক ডিজির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি


র‍্যাবের সাবেক ডিজি হারুন উর রশিদ
র‍্যাবের সাবেক ডিজি হারুন উর রশিদ

গত বছর জুলাই এবং অগাস্ট মাসে বিক্ষোভের সময় হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে 'গণহত্যার' অভিযোগে করা মামলায় র‍্যাবের সাবেক ডিজি হারুন উর রশিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

রবিবার (২৬ জানুয়ারি) প্রসিকিউশনের আবেদেনের পরিপ্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেয়।

এছাড়া আশুলিয়ায় ৬ জনের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার মামলায় পুলিশের এস আই মালেক ও কনস্টেবল মুকুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্ত সংস্থাকে অনুমতি দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

গত বছরের ৫ জুন থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত র‍্যাবের ডিজি ছিলেন হারুন উর রশিদ। তার বিরুদ্ধে ওই সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা, নির্বিচারে মানুষকে হত্যা, প্ররোচনা, অধঃস্তনদের বাধা না দেওয়ার অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন।

অপরাধের প্রাথমিক প্রমাণ থাকার কথা জানিয়ে র‍্যাবের সাবেক ডিজির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানায় প্রসিকিউশন।

এছাড়া, জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় আশুলিয়ায় ছয়জনের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার এস আই মোহাম্মদ আবদুল মালেক ও কনস্টেবল মুকুল চোকদারের বিষয়েও আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

"জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় হেলিকপ্টার থেকে যে গুলি করা হয়েছে, তার প্রমাণ আমাদের তদন্ত সংস্থা পেয়েছে," দুপুরে ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান।

"র‌্যাবের যে ডিজি ছিলেন হারুন অর রশীদ, তিনি পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ছিলেন। ছাত্র-জনতার ওপর নির্যাতন এবং হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার যে নির্দেশ বা পরিকল্পনা ছিল, তিনি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অধীনস্থ কর্মকর্তাদের দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেন," ইসলাম বলেন।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, "র‌্যাবকে ব্যবহার করে তিনি এত ধরনের অপরাধ করেছিলেন, যার প্রমাণ আমাদের তদন্ত সংস্থা পাচ্ছে। সেই প্রমাণের ভিত্তিতে তদন্ত সংস্থা তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য প্রসিকিউশনের কাছে আবেদন করে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পিটিশন দিয়েছি। আদালত তাকে গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন।"

তাজুল ইসলাম বলেন, "অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির অভিযোগ আছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করার যে নির্দেশনা ছিল, সেটি তার দেওয়া।"

এখন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল থেকে ৯৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলেন তাজুল ইসলাম।

এর অধিকাংশই পুলিশ বাহিনীর সদস্য এবং কিছু আছে সিভিলিয়ান (বেসামরিক)। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের নেতারা আছেন। আর একমাত্র সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে জিয়াউল আহসান আছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র‍্যাব

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র‍্যাবের সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দফতর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়।

ঢাকায় ধর্মঘট চলাকালে পাহার দিচ্ছেন বাংলাদেশের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) সদস্যরা। ফাইল ফটোঃ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২।
ঢাকায় ধর্মঘট চলাকালে পাহার দিচ্ছেন বাংলাদেশের র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) সদস্যরা। ফাইল ফটোঃ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২।

ওই কর্মকর্তারা হলেন র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খান। তাঁদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র‍্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত।

বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র‍্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র‍্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছেন বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।

XS
SM
MD
LG