শনিবার হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ২০০ জন ফিলিস্তিনি বন্দী বা আটক ব্যক্তিদের বিনিময়ে রেড ক্রসের কাছে চারজন ইসরায়েলি নারী জিম্মিকে মুক্তি দেয়।
এই চারজন ইসরায়েলি সৈন্য হাসি মুখে গাজার শহরের ফিলিস্তিন স্কোয়ার থেকে মঞ্চে দাঁড়িয়ে জনতার দিকে হাত নাড়েন এবং থাম্বস-আপ দেখান। তাদের দু'পাশে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত বিদ্রোহীরা ছিল এবং হাজার হাজার জনতা তাদের দেখছিল। তারপর এই চারজন ইসরায়েলি সৈন্য রেড ক্রসের অপেক্ষমাণ যানবাহনে উঠে যান।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তারা সম্ভবত চাপের মধ্যে ছিলেন। পূর্বে মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিরা বলেছেন যে, তাদের অত্যন্ত কঠোর পরিস্থিতিতে রাখা হয়েছিল এবং তারা প্রচারণামূলক ভিডিও রেকর্ড করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ইসরায়েলের কারাগার পরিষেবা জানিয়েছে, তারা ২০০ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া সম্পন্ন করেছে। এদের মধ্যে ১২০ জনকে ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী হামলার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। মিশরের রাষ্ট্র পরিচালিত কাহেরা টিভি অনুসারে, প্রায় ৭০ জন বন্দীকে মিশরে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
মিশর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি আলোচনার মূল মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করে।
বন্দীদের বহনকারী বাসগুলিকে শুভেচ্ছা জানাতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি দখলকৃত পশ্চিম তীরের শহর রামাল্লায় আসেন এবং অনেক মানুষ ফিলিস্তিনি পতাকা বা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির পতাকাগুলি ওড়াতে থাকেন।
যখন চারজন ইসরায়েলি সৈন্যকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছিল, তখন শত শত লোক তেল আবিবের হোস্টেজ স্কয়ারে উল্লাসধ্বণির মাধ্যমে এই ঘটনা উদযাপন করছিল। সেখানে একটি বিশাল টেলিভিশনের পর্দায় তারা ঘটনাগুলো দেখছিলেন।
হামাস বলে, চারজন নারী হলেন আলবাগ, কারিনা আরিয়েভ, ড্যানিয়েলা গিলবোয়া এবং নামা লেভি। চারজনের প্রত্যেকেই ইসরায়েলি সৈন্য যাদেরকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের নাহাল ওজ বেস থেকে অপহরণ করা হয়েছিল। এই দিনে হামাস তাদের সন্ত্রাসী হামলা চালায় এবং ১,২০০ জনকে হত্যা ও ২৫০ জনকে জিম্মি করে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে, হামাস ইসরায়েলের কাছে থাকা ফিলিস্তিনি পণবন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দিবে। সেই সাথে মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি করা হবে এবং গাজার কিছু অংশ থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে প্রত্যাহার করা হবে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় ৪৭,০০০ ‘এরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। তারা বেসামরিক এবং যোদ্ধাদের সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য করে না। তবে তারা ইতিপূর্বে বলেছে, নিহতদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নারী এবং শিশু। ইসরায়েলের অভিযান অঞ্চলটির বেশিরভাগ জনসংখ্যাকেও বাস্তুচ্যুত করেছে এবং অধিকাংশ ছিটমহলকে ধ্বংস করে ফেলেছে।
পশ্চিম তীরে সহিংসতা
শনিবারের বন্দী বিনিময়ের আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় শুক্রবার সতর্ক করে যে দখলকৃত পশ্চিম তীরে সহিংসতা বৃদ্ধি গাজায় যুদ্ধবিরতিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
পশ্চিম তীরে মঙ্গলবার থেকে ইসরায়েলের করা অভিযানগুলি কমপক্ষে ১২ জন ফিলিস্তিনিদের হত্যা করেছে এবং ৪০ জনকে আহত করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র সামিন আল-খিতান জানান, “তাদের বেশিরভাগই নিরস্ত্র ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।”
বৃহস্পতিবার পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে একটি বড় ধরনের অভিযানের তৃতীয় দিনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বেশ কয়েকটি বাড়ি ধ্বংস করলে শত শত জেনিনবাসী তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
ইসরায়েল ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকে জর্দান নদীর পশ্চিম তীর দখল করে রেখেছে, যা ফিলিস্তিনিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের কেন্দ্র হিসেবে দেখতে চায়।
বেশিরভাগ দেশই সেখানে ইসরায়েলের গড়ে তোলা ইহুদি বসতিগুলোকে অবৈধ হিসেবে দেখে। তবে ইসরায়েল ঐ অঞ্চল নিয়ে ইতিহাস ও বাইবেলের সাথে সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে।