অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

 
‘রাষ্ট্ররক্ষায়’ ভ্যাট বৃদ্ধি বেকারত্ব ও ঋণগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়েছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা

‘রাষ্ট্ররক্ষায়’ ভ্যাট বৃদ্ধি বেকারত্ব ও ঋণগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়েছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা


প্রতীকী ছবিঃ ভ্যাট সংগ্রহের মেশিন
প্রতীকী ছবিঃ ভ্যাট সংগ্রহের মেশিন

“আমার বাচ্চার আনার ফল পছন্দ। ভ্যাট বাড়ার আগে ৪২০ টাকা দিয়ে এক কেজি আনার কিনেছি। কিন্তু এখন সেটা দাম বেড়ে ৬০০ টাকা কেজি হয়ে গেছে। আমার যে আয়, তা দিয়ে ছেলেকে এত দাম দিয়ে আনার ফল কিনে খাওয়ানো সম্ভব নয়।” — বলছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ইমাম হোসেন।

গত ৯ জানুয়ারি শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর-মূসক (ভ্যাট) এবং সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মাঝপথে এসে হঠাৎ করে এই ভ্যাট বৃদ্ধির শিকার হয়েছেন ইমাম হোসেন। সোমবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় তিনি বলছিলেন তার অভিজ্ঞতার কথা, সাম্প্রতিক ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে তার সংসারেও।

ক্রেতার ওপর হঠাৎ যেমন বাড়তি ভ্যাটে চাপ বেড়েছে, তেমনি বিক্রেতারাও রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। ঢাকার সেগুনবাগিচার ফল বিক্রেতা আতিকুল ইসলাম ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান, দেশের বাইরে থেকে আসা ফলের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আতিকুল ইসলাম বলেন, “দাম বাড়ার কারণে মানুষ এখন পরিমাণে কম কিনছে, যে কারণে বিক্রি কমে গেছে।”

ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে জনজীবনে প্রভাব ফেললেও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাষ্ট্র রক্ষার জন্য অর্থবছরের মাঝখানে এসে ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত ‘অবিবেচনাপ্রসূত’ এবং এতে করে বেকারত্ব বাড়বে, মানুষ আরও ঋণগ্রস্ত হবে। ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা এসেছে খোদ অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও জাতীয় নাগরিক কমিটির কাছ থেকেও।

ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে আলাপকালে অর্থনীতিসংশ্লিষ্টরা জানান, বছরের মাঝপথে মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির মূল কারণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ।

২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করে। ঋণের চতুর্থ কিস্তি এখনও ছাড় হয়নি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অর্থছাড়ের উদ্দেশ্যে ভ্যাট বৃদ্ধি করেছে সরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের কারণে ইতোমধ্যে পোশাক, মিষ্টি, টিস্যু, এলপি গ্যাস, ওষুধ, ফলের রস, ড্রিংক, বিস্কুট, চশমার ফ্রেম, সিগারেটসহ নানা পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। পরে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার করা হলেও দাম আগের জায়গায় ফিরে আসেনি।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) জারি করা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর অনুসারে রেস্তোরাঁ, ওষুধ, মোবাইল ফোন, আইএসপি সেবা, মোটরগাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপসহ বেশ কিছু পণ্যের ওপর থেকে বাড়তি মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, চিকিৎসা সেবা আরও সহজ করতে ওষুধ শিল্পের ওপর ব্যবসায়িক পর্যায়ে যে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে আগের অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে। অর্থাৎ এই খাতে এখন থেকে ২ দশমিক ৪ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে।

আর চলমান ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে মোবাইল ফোনের সিম ও রিম কার্ড এবং আইএসপি সেবার ওপরও সম্পূরক শুল্ক থাকছে না। পাশাপাশি রেস্তোরাঁর খাবারের দাম সুলভ রাখতে তিন-তারকা, চার-তারকা ও পাঁচ-তারকা হোটেল ছাড়া সব রেস্তোরাঁয় আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া, মোটরগাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ, নিজস্ব ব্রান্ডের তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য পোশাক বিপণনের ওপর অতিরিক্ত আরোপিত ভ্যাট সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

নন-এসি হোটেল, মিষ্টান্ন ভান্ডার, ও নিজস্ব ব্রান্ডের তৈরি পোশাক বিপণনের ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

দাম বৃদ্ধি, কমে গেছে বিক্রি

আমদানিকৃত ফলের ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। যার ফলে বাজারে আমদানি করা ফলের কেজিতে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণে ফল বিক্রিও কমে গেছে।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ইমাম হোসেন ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “আগে একদম ভালো আপেলের কেজি ২৮০ টাকা ছিল। সেটার দাম এখন বেড়ে হয়েছে ৩৯০ টাকা। একইভাবে সব ধরনের ফলের দাম কেজিতে ১২০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন আমাদের মতো পরিবারের দেশি ফল, যেমন—কুল, পেঁপে, কলা ছাড়া অন্য কিছু খাওয়া সম্ভব নয়।”

ঢাকার সেগুনবাগিচা এলাকার ফল বিক্রেতা আতিকুল ইসলাম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, গত সপ্তাহে আঙুর বিক্রি করেছি ৪৬০ টাকা কেজি। সেটা এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৬০০ টাকায়। দাম বাড়ার কারণে মানুষ এখন পরিমাণে কম কিনছে। যার কারণে বিক্রিও কমে গেছে।

রাজধানীর একটি সুপারশপের বিক্রয়কর্মী তারিফুল ইসলাম। তিনি জানান, ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে তাদের আমদানিকৃত খাদ্যপণ্যের মধ্যে কিছু জিনিসের দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণে গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় বিক্রিও কিছুটা কমেছে।

ওই সুপারশপ থেকে ভোজ্যতেল সয়াবিন ক্রয় করেছেন নাজিম উদ্দিন। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান, আগে ৫ কেজি সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৫২০ টাকা। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ৫৮৩ টাকা। একইভাবে অন্যান্য আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের প্যাকেটে ১০-২০ টাকা করে বেড়েছে।

কর বাড়লেও জিনিসপত্রের দামে প্রভাব পড়বে না: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দাবি করেছেন, "কর বাড়লেও জিনিসপত্রের দামে প্রভাব পড়বে না। আমাদের মূল্যস্ফীতির মূল ইন্ডিকেটরগুলো হলো— চাল, ডাল এগুলো। আমরা যেসব জিনিসের ওপর কর বাড়াচ্ছি, এগুলো মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই কম গুরুত্বপূর্ণ।“

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, "পৃথিবীর কোনো দেশেই, এমনকি নেপাল, ভুটানেও বাংলাদেশের মতো এত কম কর (ট্যাক্স) নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে আমরা সব সময় বলেছি, সেখানে আমরা প্রায় জিরো কর-এ নিয়ে আসব।"

অবিবেচনাপ্রসূতভাবে ভ্যাটের হার বাড়ানো হয়েছে: দেবপ্রিয়

অবিবেচনাপ্রসূতভাবে ভ্যাটের হার বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও সিটিজেনস প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজির আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে প্রত্যক্ষ করে মনোযোগ দেওয়া দরকার হলেও অন্তর্বর্তী সরকার আগের মতোই পরোক্ষ করে নজর দিচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “কোনো দেশে সরকার যদি কার্যকরভাবে কর আদায় করতে চায় তাহলে তাকে ধীরে ধীরে প্রত্যক্ষ করের দিকে নজর দিতে হবে। কিন্তু সরকারকে প্রত্যক্ষ কর আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো পরিকল্পনা দেখছি না। প্রত্যক্ষ কর বাদ দিয়ে প্রথমেই পরোক্ষ করের দিকে ঝুঁকছে সরকার। বিষয়টি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।”

“ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রণীত বাজেটের অধীনেই পরিচালিত হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার” বলে যোগ করেন ড. দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, এ সরকার সংশোধিত বাজেট পেশ না করায় আগের সরকারের দিয়ে যাওয়া বাজেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সূচকই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সুস্পষ্ট কোনো অর্থনৈতিক ইশতেহারও তৈরি করেনি বলে জানান এই অর্থনৈতিক বিশ্লেষক।

বেকারত্ব ও মানুষ আরও ঋণগ্রস্ত হবে: মাহা মির্জা

উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গীসহ বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে যুক্ত, এমন প্রভাবশালীদের কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে ইতোমধ্যে অনেক মানুষ বেকার হয়ে গেছে, কর্মসংস্থান হারিয়েছে। এখন বাড়তি ভ্যাটের বোঝায় মানুষ আরও ঋণগ্রস্ত হবে, হারাবে কর্মসংস্থান।”

তিনি বলেন, “বেকারত্ব, আগের সরকারের ভ্যাট, মূল্যস্ফীতি—সবকিছু মিলিয়ে মানুষ এখনই অসম্ভব রকমের চাপের মধ্যে আছে। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। মানুষ যখন অতিরিক্ত চাপ ও ঋণগ্রস্ত হয়ে আছে, সেই সময়ে আশা করা হয়েছিল যে নতুন বাংলাদেশে, নতুন সরকার, নতুন কিছু হবে। যেখানে অনেক সংস্কারের কথা হচ্ছে, সেখানে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা ছাড়াই ভ্যাট বৃদ্ধির অধ্যাদেশ জারি করা প্রচণ্ড মাত্রায় অগণতান্ত্রিক।” আইএমএফ চেয়েছে বলে সরকার চাপিয়ে দিয়েছে—এটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় বলে এই অর্থনীতিবিদ জানান।

মাহা মির্জা বলেন, "সরকার বলছে এটা ছাড়া তাদের কোনো উপায় ছিল না। আপনি আইএমএফের চাপে জনগণের পকেট থেকে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা বের করে নেবেন! অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের মহার্ঘ ভাতা বাড়াবেন, যা সরকারের হিসাবে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। যেখানে সচিব, উপসচিব উচ্চ বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। রাজস্ব ঘাটতির দোহাই দিয়ে ভ্যাট বাড়ানো, অন্যদিকে মহার্ঘ ভাতা বাড়ানো—এটা কোনোভাবেই মেলে না। এতে সরকারের ভেতরে অসামঞ্জস্যের চিত্র ফুটে উঠেছে।”

এমনিতেই দেশের অর্থনীতিতে একটা অচলাবস্থা চলছে, তার ওপর বাড়তি ভ্যাট ও করের ফলে উৎপাদক যদি উৎপাদন কমিয়ে দেয়, তখন মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে। অন্যদিকে মানুষ যদি কেনাকাটা কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়, সেটা বাজারের জন্য ভালো নয়। অর্থনীতির গতি তো তখনই সঞ্চার হয়, যখন মানুষ কেনাকাটা করতে পারে। সেখানে ভ্যাট বাড়ানোর ফলে মানুষের যখন ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে, তখন সেটা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন মাহা মির্জা।

সরকারের রাজস্ব ঘাটতি প্রসঙ্গ টেনে মাহা মির্জা বলেন, “আমাদের প্রত্যক্ষ কর বা রাজস্ব বাড়ানোর অনেক জায়গা আছে। আমি যতটুকু জানি রাজস্বের ৩০-৪০ শতাংশ আসে প্রত্যক্ষ কর থেকে। যেটা ভারতে ৫০ শতাংশের ওপর। অন্যান্য দেশে সেটা ৭০-৮০ শতাংশ।”

“আমাদের এখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বড় অংশ কর দেয় না। আবার করযোগ্য আয়ের অনেক মানুষ, ঢাকা শহরের অনেক ফ্ল্যাটের মালিক আছে, যারা কর দেয় না কিংবা কর ফাঁকি দেয়। এগুলো প্রত্যক্ষ করের একটা বড় জায়গা। সরকার সেটা বাদ দিয়ে বারবার ভ্যাট বাড়াচ্ছে। আসলে সহজ উপায় জনগণের ওপর চাপিয়ে দিলে তারা দিতে বাধ্য” — মাহা মির্জা যোগ করেন।

রাষ্ট্রকে বাঁচাতে আমাদের এটা করতে হয়েছে: এনবিআর চেয়ারম্যান

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “একটা কথা আছে—প্রয়োজন কোনো আইন মানে না। এখন রাষ্ট্রের প্রয়োজনে, রাষ্ট্রকে বাঁচানোর জন্য আমাদের এটা করতে হয়েছে। এটাই হচ্ছে মূল কথা।”

আবদুর রহমান খান আরও বলেন, “অর্থনীতিবিদরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অবশ্যই সঠিক কথা বলছেন যে, বছরের মাঝখানে এটা করা ঠিক না। কিন্তু এখন আমাদের অনেক কিছু করতে হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্র, অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিকে ঠিক রাখার জন্য।”

ভ্যাটসংক্রান্ত মামলায় এনবিআরের মাঠে অনাদায়ি রাজস্ব ৫০ হাজার কোটি টাকা উদ্ধারে পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, এগুলো উদ্ধারে নানা পদক্ষেপ চলমান। এগুলো ট্রাইব্যুনাল, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগ ও অ্যাটর্নি জেনারেল সবাই পর্যবেক্ষণে রাখছেন। তারা চেষ্টা করছেন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য।

আইএমএফের শর্ত পরিহারের উপায় ছিল না সরকারের: টিআইবি

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "আমি সাধারণভাবে যেটা বুঝি, দুইটা কারণে সরকার এটা করতে বাধ্য হয়েছে। প্রথমত, প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায়ে বিশাল ঘাটতি। দ্বিতীয়ত, আইএমএফের কাছ থেকে যে ঋণ নেওয়া হয়েছিল, তার শর্ত হিসেবে ভ্যাট বাড়িয়েছে। আইএমএফের শর্ত পরিহার করার কোনো উপায় ছিল না সরকারের কাছে।"

ভবিষ্যতে (এই অর্থবছরের বাকি সময়ে) প্রত্যক্ষ করের মাধ্যমে রাজস্ব ঘাটতি পূরণের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, “এমনিতে বাংলাদেশে পরোক্ষ করের তুলনায় প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ খুবই কম। তারপর বছরের এই সময়ে প্রত্যক্ষ কর যেটুকু আদায় হওয়ার কথা এবং সামনে যে সময়টুকু বাকি আছে, তাতে তা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ প্রত্যক্ষ করের সবচেয়ে বড় উৎস যারা, তাদের অনেকে বিভিন্ন কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে দূরে আছে। আবার অনেকের বিরুদ্ধে মামলা আছে, অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ আছে, যেগুলো চলছে, সেগুলো স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি। সব মিলিয়ে প্রত্যক্ষ কর আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এটা করতে বাধ্য হয়েছে বলে আমি মনে করি।”

ইফতেখারুজ্জামানের মতে সরকার যেটা বলছে যে, জনগণের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, দ্রব্যমূল্য ও মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। এটা আসলে সরকারের উচ্চাভিলাষী বক্তব্য ছিল। কারণ এই ধরনের কর বা ভ্যাট যখন আরোপিত হয়, সেটার প্রভাব শুধু যে বস্তুর ওপর আরোপ হয় তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। সার্বিকভাবে দ্রব্যমূল্য থেকে সব সেবার মধ্যে গিয়ে পড়ে এর প্রভাব। কাজেই ভ্যাট বাড়ানোর নেতিবাচক প্রভাব নিম্ন-মধ্যবিত্তের ওপর গিয়ে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের মতে, "আগেও পরোক্ষ করের ওপর আমরা নির্ভরশীল ছিলাম, এখনও আছি। অদূর ভবিষ্যতেও এ নির্ভরতা থাকবে। কারণ যারা ক্ষমতায় থাকেন, তাদের প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহের যে ক্ষমতা থাকা দরকার, সেটা আমাদের কর কর্তৃপক্ষের নেই। কারণ যারা ক্ষমতার থাকেন, তাদের ক্ষমতার ভিত্তিতে যারা থাকেন, তাদের সিংহভাগই কর ফাঁকির ভূমি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেন। যার কারণে রাজস্ব আদায়ের প্রত্যাশিত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারছি না।”

‘পণ্য ক্রয় বন্ধ ও শ্রমিকের জীবনে অনিশ্চয়তা নেমে আসবে’

বাংলাদেশে এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সূত্র থেকে বলা হয়েছে, গত ৯ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে। সেখানে মেশিনে প্রস্তুতকৃত বিস্কুট, কেক, আচার, চাটনি, টমেটো তৈরি পণ্য, আম, আনারস, পেয়ারা ও কলার পাল্প ইত্যাদি পণ্যের ওপর মূসক ৫ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলের রস ও ফ্রুট ড্রিংকসের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করেছে। ফ্লেভার ড্রিংকস ও ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক শূন্য থেকে বাড়িয়ে বর্তমানে তা ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ী পর্যায়ে আগে ৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপ ছিল; যা বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে বাপার সভাপতি ব্যবসায়ী এম এ হাশেম বলেন, “চায়ের দোকান থেকে অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ সকালে এক কাপ চা, একটি বিস্কুট কিংবা কেক খেয়ে কাটিয়ে দিচ্ছেন। এখন যদি বিস্কুট ও কেকের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর সাথে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পায়, তবে ৫ টাকার একটি বিস্কুট তৈরি সম্ভব হবে না। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষটি সহজে ক্ষুধা নিবারণের পথটি হারাবেন।”

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী জানান, প্রান্তিক কৃষকের আম, টমেটো, আনারস, কলাসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে জুস, ড্রিংকস, আচার, সস তৈরি করা হয়। এসব পণ্যের ওপর মূসক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রান্তিক চাষিরা। ভ্যাট ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে যেসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, অনেকেই সেসব পণ্য ক্রয় বন্ধ করে দেবেন। এর প্রভাবে কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে অসংখ্য শ্রমিকের জীবনে অনিশ্চয়তা নেমে আসবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

দুর্নীতি এবং দুর্বৃত্তায়নের বলি সাধারণ মানুষ: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

হাজার-হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি এবং দুর্বৃত্তায়নের বলি সাধারণ মানুষ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “এখানে দীর্ঘদিনের দুর্নীতির সংস্কৃতি লালন করা হয়েছে, হাজার-হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। যে পরিমাণ অর্থনৈতিক লুটপাট হয়েছে বলে আমাদের শ্বেতপত্রে এসেছে, তা ভয়াবহ। ফলে এটাকে পুনর্বহাল করার জন্য রাষ্ট্রকে এখন পরোক্ষ করের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। অন্যদিকে আমাদের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় এখনও পুরোনো দুর্বৃত্ত স্টাইল রয়ে যাওয়ার কারণে একজন ভোক্তার কাছে পণ্য স্বাভাবিকভাবে পৌঁছানো যাচ্ছে না। মাঝখানে মধ্যস্বত্বভোগীদের দুর্বৃত্তায়নের প্রভাব পড়ছে সাধারণ জনগণের ওপর। ফলে ভ্যাট বৃদ্ধি ভোক্তাদের কষ্ট বাড়াবে।”

ভ্যাট সরাসরি মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে বলে উল্লেখ করে আলীম আখতার খান বলেন, “আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়সীমা যদি বেশি থাকত, তাহলে এটা তেমন প্রভাব ফেলত না। চাল, ডাল, তেল বা মোবাইল ফোনের ব্যবহারে ভ্যাট বাড়লে এটা সরাসরি জনগণের ওপর চাপ বাড়ায়।"

মাঝপথে কর বৃদ্ধি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি করছে: ঢাকা চেম্বার

অর্থবছরের মাঝপথে হঠাৎ কর বৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি করছে বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ।

তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ভ্যাট বা শুল্ক বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। ফলে অনেক ব্যবসায়ীর পক্ষে প্রতিযোগিতামূলক দাম রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষত যদি তারা আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। উচ্চ শুল্ক বা কর ব্যবস্থার কারণে বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হতে পারেন। নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ কমে যেতে পারে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে।”

বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রেক্ষাপটে ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, “ভোক্তারা যখন বেশি দাম দিতে বাধ্য হয়, তখন তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়। এটি সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে চাহিদা কমিয়ে দেয় এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।”

“ভোক্তাদেরর চাহিদা কমে গেলে রাজস্ব আয় কমে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শুল্ক ও ভ্যাট বেশি হলে ব্যবসাগুলো অনানুষ্ঠানিক খাতে চলে যায়। এই পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল—প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি বা হ্রাস করা, ভ্যাট ব্যবস্থার সরলীকরণ এবং ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে কর সংগ্রহের দক্ষতা বৃদ্ধি করা। ভ্যাট কমিয়ে করের আওতা বৃদ্ধির মডেল বাস্তবায়ন দীর্ঘ মেয়াদে আরও কার্যকর হতে পারে।“

পরোক্ষ কর বাড়ানোর মাধ্যমে সাময়িকভাবে রাজস্ব বৃদ্ধি করা সম্ভব হলেও তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ক্ষতিকর বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা। তিনি বলেন, “এর পরিবর্তে প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহ বাড়ানোর মাধ্যমে রাজস্ব বৃদ্ধির প্রচেষ্টা একদিকে আয়বৈষম্য কমাবে এবং অন্যদিকে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।”

ভ্যাট বৃদ্ধি নিয়ে কেন সেভাবে সরব নয় বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো?

সরকারের ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের পর এক সংবাদ সম্মেলন করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হলেও মাঠের কোনো কর্মসূচিতে যায়নি বিএনপি। শুধু বিএনপি নয়, কোনো রাজনৈতিক দলই তা প্রত্যাহারের দাবিতে এখন পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করেনি। দলগুলো বলছে, বর্তমান সরকার গণবিরোধী সরকার নয়। তারা জনগণের কষ্টকে বিবেচনায় নিয়ে বাড়তি ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। তা সমন্বয় করে নেবে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনসমর্থিত ও আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সরকার বলে উল্লেখ করেন বিএনপির সিনিয়র ‍যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “আমার বিশ্বাস, গণবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত হলে সরকার তা সংস্কার করে নেবে। জনগণের ইচ্ছার সাথে তাদের সিদ্ধান্তের সমন্বয় থাকবে। তাই যে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেটা বিবেচনায় নিয়ে সরকার দ্রুত একটা কার্যকর সিদ্ধান্ত নেবে। যাতে জনগণের ওপর যে বাড়তি চাপ পড়েছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যে বাড়তি ভ্যাট আরোপ করেছে, তা প্রত্যাহার করে নেবে।”

বিএনপির এই নেতার মতে, “আইনগত সংস্কার দরকার আছে। যাতে (কোনো) সরকারই কাণ্ডজ্ঞানহীন ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধি করতে না পারে।”

রুহুল কবির রিজভী মনে করেন, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকারকে বিভিন্ন সংস্কারের জন্য চাপ দেয়। তাদের কথা শুনতে হয়। কারণ তারা ঋণ দেয়। সে ক্ষেত্রে কিছু প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, যাতে কোনোভাবে জিনিসপত্রের দাম না বাড়ে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ যেন ঠিক থাকে, বাজারে কেউ যেন সিন্ডিকেট করতে না পারে। এ রকম কিছু পদক্ষেপ নিলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না বলে বিশ্বাস রুহুল কবির রিজভীর।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, যারা অত্যাচারী, অনির্বাচিত শাসক, জোর করে ক্ষমতায় আসে, তাদের সব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আমাদের ক্ষোভ থাকে। কিন্তু এই সরকার ইচ্ছা করে ক্ষমতায় আসেনি, জনগণ তাদের নিয়ে এসেছে। তাদের কাজের ভুলত্রুটির সমালোচনা, প্রতিবাদ জামায়াত গণতান্ত্রিক পন্থায় করছে। যদি মনে হয় সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এসব দুর্বলতা দূর করছে না, স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠছে, তখন তারা (জামায়াত) বিক্ষোভ কিংবা প্রতিবাদের মাত্রা আরও বাড়াবে।

গোলাম পরওয়ার বলেন, “ভ্যাট বাড়ানোর বিষয়ে সরকারও তার ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারা বলেছে— জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করছে। কিন্তু ভ্যাট বাড়ানো ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না। আমি মনে করি, এই সরকারের বিরুদ্ধে এখনই ক্ষুব্ধ হওয়া সঠিক হবে না। কারণ, সরকার এখনও জনগণের বিরুদ্ধে যায়নি।”

সরকারের আয়ের অন্যতম একটা উৎস রাজস্ব বলে উল্লেখ করে জামায়াত নেতা বলেন, জনবান্ধব সরকার চেষ্টা করে দুর্ভোগ না বাড়িয়ে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য। তাই সরকারের জনদুর্ভোগ না বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ভ্যাট নিয়ে মন্তব্য করতে চান না গভর্নর

অর্থবছরের মাঝপথে ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি রিজার্ভ নিয়ে কথা বলেন।

আহসান এইচ মনসুর ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "আমাদের যে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল, চলতি হিসাবে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল। সেটা এখন অনেকটাই নেই। নতুন করে আমাদের রিজার্ভের আর পতন হয়নি, বরং একটু বেড়েছে। আরও বেশি বাড়ানো দরকার।“

গভর্নর বলেন, "বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারও অপরিবর্তিত রয়েছে। গত চার মাসে ২ টাকা পরিবর্তন হয়েছে। এই সূচকগুলোতে একটা স্থিতিশীলতা এসেছে। এখানে উন্নতির গতিও ভালো এবং আমরা সন্তুষ্ট।“

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কাজ চলছে জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, "পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে আমাদের সরবরাহ ও চাহিদা নিয়ে একটা তথ্য নেওয়া হয়েছে।"

"চালের দামটা কিছুটা বাড়তি। এটা নিয়ে কিছু করার নেই। কারণ, চালের দাম বাংলাদেশের চাইতে বিশ্ববাজারে বেশি। এতে গ্রামের কৃষকরা কিছুটা লাভবান হবে।"

আটকে থাকা রাজস্ব প্রশাসনিকভাবে দ্রুত আদায় করা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, “তবে প্রশাসনিক প্রক্রিয়াতে অবশ্যই আমাদের যেতে হবে, কিন্তু সেটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আইন পরিবর্তন, অটোমেশন পদ্ধতি করা—এটা অনেক সময়ের ব্যাপার। এটা করতে দুই-তিন বছর লেগে যাবে। তাই রাজস্ব ঘাটতি পূরণের সহজ পদ্ধতি এটাই (পরোক্ষ কর)।”

XS
SM
MD
LG