আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)’এর প্রধান কৌঁশুলি বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেন যে তিনি আফগানিস্তানে উচ্চপদস্থ তালিবান নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে চাইছেন যারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করার জন্য অভিযুক্ত। এ প্রসঙ্গে তিনি সে দেশের নারীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বৈষম্যের উদাহরণ তুলে ধরেন।
করিম খান এই সন্দেহভাজনদের সনাক্ত করেছেন আর তারা হচ্ছেন তালিবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুনজাদা এবং তার প্রধান বিচারপতি, আব্দুল হাকিম হাক্কানি । তিনি বলেন এই প্রক্রিয়ায় ব্যাপক তদন্ত ও প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই তিনি এ ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
খান বলেন,“আমার দপ্তর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে এই দু’জন আফগান নাগরিক আফগান মেয়ে ও নারীদের এবং তালিবান যাদেরকে মেয়ে ও নারীদের সহায়তাদানকারী বলে মনে করে তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতন চালানোর অপরাধে দায়ী”।
তিনি বলেন যে ২০২১ সালের আগস্টে যখন তালিবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় গ্রহণ করে এবং ইসলামিক আইন বা শারিয়ার কঠোর ব্যাখ্যা চাপিয়ে দেয়, তখন থেকেই এই নির্যাতন চলে আসছে।
বিস্তারিত কিছু না বলে খান বলেন যে অন্যান্য তালিবান সদস্যের গ্রেপ্তার চেয়ে তাঁর দপ্তর আরো আবেদন জানাবে।
আখুনজাদা ও হাক্কানির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করবে কীনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আইসিসি বিচারকরা আবেদনগুলি পর্যালোচনা করে দেখবেন। বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন যে এই প্রক্রিয়ায় কয়েক সপ্তাহ এমনকী কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে।
খান বলেন,“এই আবেদনে বলা হয়েছে যে আফগান নারী ও মেয়েরা এবং এলজিবিটিকিউআই সম্প্রদায়ের লোকেরা তালিবানের নজিরবিহিন, বিবেকহীন এবং চলমান নির্যাতনের সম্মুখীন”। প্রধান কৌঁশুলি বলেন, “আমাদের কর্মতৎপরতায় এই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে নারী ও মেয়েদের প্রচলিত অবস্থান আফগানিস্তানে গ্রহণযোগ্য নয়। আফগানিস্তানে যারা রক্ষা পেয়েছেন, বিশেষত নারী ও মেয়েরা তাদের অধিকার আছে আদালতের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়ার”।
দ্য হেইগ ভিত্তিক আইসিসি’র অধিকার আছে বিশ্বের নিকৃষ্টতম অপরাধ, যেমন যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিষয়ে রায় দেবার। আদালতটির কোন পুলিশ বাহিনী নেই এবং তাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য ১২৫টি সদস্য রাষ্ট্রের উপর তারা নির্ভরশীল।
আইসিসির এই ঘোষণা সম্পর্কে তালিবান কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
দেশের দক্ষিণঞ্চলীয় শহর কান্দাহার থেকে আখুনজাদা দেশের শাসন চালাচ্ছেন।গত প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে তিনি আফগান নারী ও মেয়েদের উপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে অসংখ্য ফতোয়া জারি করেছেন যাকে জাতিসংঘ “লিঙ্গ বৈষম্যবাদ” বলে সমালোচনা করেছে।
মেয়েদের ষষ্ঠ্ শ্রেণীর বেশি শিক্ষা গ্রহণ এবং ধাত্রী ও নার্স হিসেবে প্রশিক্ষণের উপরেও তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অধিকাংশ নারীদের সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রে কাজ করা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তা ছাড়া তাদের সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত উদ্যান, শরীর চর্চা কেন্দ্র ও স্নানাগারে যাওয়া ও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তালিবান মেয়েদের জন্য এটা বাধ্যতামূলক করেছে যে প্রকাশ্য স্থানে তাদের মুখ যেন আবৃত থাকে এবং তারা পুরুষ অভিভাবক ছাড়া দূরের যাত্রা করতে পারবে না। অতএব নারী ও মেয়েদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী একমাত্র দেশ হচ্ছে আফগানিস্তান।
জাতিসংঘ এবং বিশ্বের অধিকার গোষ্ঠীগুলি এই সব নিষেধাজ্ঞার নিন্দে জানিয়েছে এবং দাবী জানিয়েছে যেন তালিবান নারীদের উপর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। কাবুল সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির ব্যাপারে আফগান কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে এগুলিই হচ্ছে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ।
তালিবান তাদের সরকার পরিচালনাকে কঠোর ভাবে সমর্থন করে বলেছে যে তাদের নীতিমালা শারিয়া ও আফগান সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তালিবান নেতারা বলছেন ইসলামি আইন অনুযায়ী সকল আফগান নাগরিকের অধিকার প্রদান করা হয়েছে।