অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

গাজায় অস্ত্রবিরতি ও পণবন্দি চুক্তিকে স্বাগত জানালেন জাতিসংঘ প্রধান



জাতিসংঘের সদরদপ্তরে নিরাপত্তা পরিষদের বাইরে ইসরায়েল ও হামাস অস্ত্রবিরতি চুক্তি সম্পর্কে বক্তব্য রাখার পর মহাসচিব আন্তোনিও গুয়েতেরেস সাংবাদিকদের স্বাগত জানাচ্ছেন। নিউ ইয়র্ক, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫।
জাতিসংঘের সদরদপ্তরে নিরাপত্তা পরিষদের বাইরে ইসরায়েল ও হামাস অস্ত্রবিরতি চুক্তি সম্পর্কে বক্তব্য রাখার পর মহাসচিব আন্তোনিও গুয়েতেরেস সাংবাদিকদের স্বাগত জানাচ্ছেন। নিউ ইয়র্ক, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫।

গাজায় অস্ত্রবিরতি ও পণবন্দি চুক্তির ঘোষণাকে বুধবার স্বাগত জানিয়েছন জাতিসংঘের মহাসচিব। এই চুক্তি রবিবার থেকে কার্যকর হবে।

আন্তোনিও গুতেরেস সংবাদদাতাদের বলেন,“আমি, মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীদের এই চুক্তি সম্ভব করার লক্ষ্যে তাদের নিবেদিত প্রচেষ্টার প্রশংসা করছি। একটি কূটনৈতিক নিস্পত্তি খুঁজে পেতে তাদের অবিচল প্রতিশ্রুতি এই অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তাদের প্রতিশ্রুতিকে বহাল রাখতে এবং এটা নিশ্চিত করতে যে এই চুক্তি যেন সম্পুর্ণ ভাবে বাস্তবায়িত হয়”।

যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের সঙ্গে এই মধ্যস্ততায় যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল-সানি দোহায় সংবাদদাতাদের বলেন যে এই চুক্তির প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ হচ্ছে ৪২ দিন। এই সময়ের মধ্যে, হামাস ৩৩ জন পণবন্দিকে মুক্তি দিবে যারা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়লে সন্ত্রাসী হামলার সময় থেকে হামাসের হাতে বন্দি হয়ে রয়েছে। এর পরিবর্তে ইসরায়েলও বহু ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিবে।

আল সানি বলেন প্রথম পর্যায়টি বাস্তবায়িত হওয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের বিস্তারিত বিষয়টি সম্পর্কে সম্মতি পাওয়া যাবে।

১৫ মাস আগে হামাসের আক্রমণের ফলে এই সংঘাত শুরুর সময় থেকেই জাতিসংঘের প্রধান অস্ত্রবিরতি ও পণবন্দিদের মুক্তির দাবি করে আসছেন। এই সংঘাত গাজার কুড়ি লক্ষেরও বেশি অধিবাসীর জন্য মারাত্মক মানবিক সংকট তৈরি করেছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে গাজায় ৪৬,০০০ ‘এর ও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং আরও হাজার হাজার লোক আহত হয়েছে।

গুতেরেস বলেন, “আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে এই সংঘাতে যে মারাত্মক দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তার প্রশমন করা। জাতিসংঘ এই চুক্তি বাস্তবায়নকে সমর্থন দিতে এবং অসংখ্য ফিলিস্তিনি যারা দূর্ভোগের শিকার তাদের জন্য মানবিক ত্রাণ বৃদ্ধি করতে প্রস্তুত।

মানবিক সাহায্য

বলা হচ্ছে এই চুক্তির প্রথম পর্যায়ে প্রতিদিন গাজায় ৬০০টি ট্রাক ভর্তি মানবিক সহায়তা পাঠানোর বিধান রয়েছে। আইন লংঘন ও ফিলিস্তিনিদের বেপেরায়া হয়ে ওঠায় যানবহরগুলো প্রায়শই লুট করা হয়। গুতেরেস বলেন এটা জরুরি যে গাজা জুড়ে ত্রাণ বিতরণে “ উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা” দূর করতে হবে যাতে ত্রাণ বিতরণ বৃদ্ধি করা যায়।

মহাসচিব বলেন, “ আমাদের পক্ষ থেকে আমরা তাই-ই করবো যা মানবিক ভাবে সম্ভব এটা জেনেও যে আমরা গুরুতর চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবো। আমরা আশা করি আমাদের এই প্রচেষ্টার পাশাপাশি অন্যান্য মানবিক সংগঠন, বেসরকারি ক্ষেত্র ও দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগও এ ধরণের প্রচেষ্টা চালাবে”।

গুতেরেস বলেন যে আন্তর্জাতিক সমাজ যেন ভুলে না যায় বৃহত্তর লক্ষ্যের কথা- ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য দুইটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা।

তিনি বলেন, “আমি সকল পক্ষ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে ফিলিস্তিনি, ইসরায়েলি ও ব্যাপকতর অঞ্চলের জন্য উন্নত ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্যে একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ সৃষ্টির সুযোগ গ্রহণ করতে। দখলদারিত্ব শেষ করে এবং আলোচনার মাধ্যমে দু’টি রাষ্ট্র সমাধানের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন, জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট প্রস্তাব ও আগেকার সমঝোতা অনুযায়ী শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সৃষ্টি এখন জরুরি অগ্রাধিকারের বিষয়”।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুয়েতেরেস ২০২৫ সালের অগ্রাধিকার সম্পর্কে সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিচ্ছেন। নিউ ইয়র্ক , ১৫ জানুয়ারি,২০২৫। (এএফপি)
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুয়েতেরেস ২০২৫ সালের অগ্রাধিকার সম্পর্কে সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিচ্ছেন। নিউ ইয়র্ক , ১৫ জানুয়ারি,২০২৫। (এএফপি)

বৃহত্তর অঞ্চল

তাঁর ২০২৫ সালের কর্মসূচির বিষয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বুধবার দিনে আরও আগে দেওয়া ভাষণে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দিকে এবং বাশার-আসাদ পরবর্তী সিরিয়া ও পরিবর্তিত ইরানের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে গুতেরেস বলেন মধ্যপ্রাচ্য নতুন রূপ নিচ্ছে যদিও এর ফলাফল অনিশ্চিত।

গুতেরেস ওই অঞ্চলের ক্রীড়কের প্রসঙ্গে বলেন, “ গোটা অঞ্চলে উগ্রবাদিদের আমাদের অস্বীকার করা উচিৎ যারা শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের প্রতি বাধা স্বরূপ”।

XS
SM
MD
LG