ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধীদল-সমর্থিত প্রেসিডেন্ট যোরান মিলানোভিচ বিপুল ভোটে রবিবার পুনঃনির্বাচিত হয়েছেন। মিলানোভিচ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং পশ্চিমা নিরাপত্তা জোট নেটোর কড়া সমালোচক।
ভোট গণনা প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে দেখা যাচ্ছে মিলানোভিচ ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের প্রার্থীকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছেন।
প্রদত্ত ভোটের ৭০ শতাংশের বেশি গণনা হবার পর ক্রোয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় নির্বাচন কর্তৃপক্ষর প্রকাশ করা ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, মিলানোভিচ প্রায় ৭৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ড্রাগান প্রিমোরাচ পেয়েছেন ২৬ শতাংশ।
এই ফলাফল ৫৮-বছর বয়সী মিলানোভিচের জন্য বড় এক অর্জন। তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে পশ্চিমা সামরিক সাহায্যর বিরোধিতা করেন। তিনি ক্রোয়েশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনিতিক এবং প্রতিপক্ষ রাজনিতিকদের সাথে জোরালো ভাষায় কথা বলার ধরনের জন্য তাকে প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্পের সাথে তুলনা করা হয়।
মিলানোভিচের বিজয় দেশের ক্ষমতাবান প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রে প্লেনকোভিচের সাথে তাঁর বৈরী সম্পর্ক চালু রাখার ক্ষেত্র তৈরি করলো। মিলানোভিচের প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বাক-বিতণ্ডা ক্রোয়েশিয়ার রাজনীতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল।
গত ২৯ ডিসেম্বর মিলানোভিচ খুব সহজেই নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে প্রথম স্থান লাভ করেন। তবে তিনি সরাসরি বিজয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশর চেয়ে মাত্র ৫,০০০ ভোট কম পান। এর ফলে, দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফরেনসিক বিজ্ঞানী প্রিমোরাচের সাথে তাঁর দ্বিতীয় পর্বের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
'রাশিয়া বান্ধব'
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং নেটো জোটের সদস্য ও ৩৮ লক্ষ বাসিন্দার ক্ষুদ্র এই দেশ সম্প্রতি উচ্চ মূল্যস্ফীতি, দুর্নীতি কেলেঙ্কারি এবং জনবলের ঘাটতি নিয়ে সমস্যায় রয়েছে।
রবিবার মিলানোভিচ পুনরায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদর দফতর ব্রাসেলস-এর সমালোচনা করে বলেন তারা “অনেক দিক থেকে অগণতান্ত্রিক” এবং অনির্বাচিত কর্মকর্তাদের হাতে পরিচালিত। মিলানোভিচ ইইউ-র “তুমি যদি আমার মত চিন্তা না করো তাহলে তুমি আমার শত্রু” নীতিকে “মানসিক সহিংসতা” বলে বর্ণনা করেন।
“যে আধুনিক ইউরোপে আমি বসবাস এবং কাজ করতে চাই, এই ইউরোপ সেটা না,” তিনি বলেন। “আমি পরিবর্তনের জন্য কাজ করবো, একটা ক্ষুদ্র দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে যতটুকু করা যায়।”
মিলানোভিচ নিয়মিত প্রধানমন্ত্রী প্লেনকোভিচ এবং তার ক্রোয়েশিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন পার্টির বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। অন্যদিকে, প্লেনকোভিচ মিলানোভিচকে “রুশ-পন্থি” হিসেবে বর্ণনা করেন এবং অভিযোগ করেন যে তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রোয়েশিয়ার মর্যাদার প্রতি একটি হুমকি।
ক্রোয়েশিয়ায় প্রেসিডেন্টের পদ মূলত আনুষ্ঠানিক, কিন্তু তা সত্ত্বেও একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক প্রভাব আছে এবং তিনি সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক।
গত বছর মিলানোভিচ অস্বীকার করেন যে তিনি রুশ-পন্থি। কিন্তু তিনি জার্মানিতে ইউক্রেনকে প্রশিক্ষণ এবং নিরাপত্তা সহায়তা দেবার জন্য নেটোর কর্মসূচিতে ক্রোয়েশিয়ান অফিসার পাঠানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেননি। তিনি অঙ্গীকার করেছেন যে নেটোর কোন মিশনের অংশ হিসেবে ইউক্রেনে ক্রোয়েশিয়ান সৈন্য পাঠানোর কোন প্রস্তাব তিনি অনুমোদন করবেন না।
তবে প্লেনকোভিচ এবং তার সরকার বলেছে সৈন্য পাঠানোর কোন প্রস্তাব টেবিলে নেই।