সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে নতুন এই বর্তমান সরকারের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দামেস্কের সাইয়েদা জায়নাব উপ-শহরে শিয়াদের একটি মাজারে বোমা বিস্ফোরণের ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর একটি পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা, জেনারেল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের নাম না জানা একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে আই.এস সেলের যে সব সদস্য এই বিষয়টির পরিকল্পনা করছিল তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কর্মকর্তাটিকে উদ্ধৃত করে তারা আরও জানায় যে গোয়েন্দা বিভাগটি “ যে কোন মতবাদের সিরীয় জনগণকে লক্ষ্যবস্তু করার সকল প্রচেষ্টাকে মোকাবিলা করার জন্য তার সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করছে”।
আই.এস ‘এর আগেও শিয়া তীর্থ যাত্রীদের উপর সাইয়েদা জায়নাবে আক্রমণ চালিয়েছে। আই.এস সুন্নি ইসলামের কট্টর ব্যাখ্যা দেয় এবং শিয়াদের কাফের মনে করে।
২০২৩ সালে শিয়াদের পবিত্র দিন আশুরার ঠিক একদিন আগে সাইয়েদা জায়নাবে , মোটর সাইকেলে রাখা একটি বিস্ফোরক ফেটে পড়লে অন্তত ৬ জন নিহত হন এবং অনেকেই আহত হন।
এবার আক্রমণটি যে প্রতিহত করা হয়েছে এই ঘোষণা যে বাশার আল আসাদের সাবেক সরকারের সমর্থক বলে যাদের মনে করা হয় তাদের সকলকে সহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দেশের নতুন নেতাদের পক্ষ থেকে এই নিশ্চয়তা প্রদানের জন্যই তা করা হয়েছে।
সংখ্যালঘু আলাওয়াইট সম্প্রদায়ের সদস্য আসাদ ইরান এবং লেবাননী শিয়া জঙ্গি হেজবুল্লাহ আর ইরান সমর্থিত ইরাকি মিলিশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন।
সাবেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম কিংবা এইচটিএস যারা গত মাসে আচমকা আক্রমণে আসাদের পতন ঘটালো তারাই এখন সে দেশের ক্ষমতাসীন দল। তারা সুন্নি েইসলামপন্থি গোষ্ঠী যাদের সঙ্গে আগে আল ক্বায়দার সম্পর্ক ছিল।
এই গোষ্ঠীটি পরে আল-ক্বায়দা থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং দামেস্কের ক্ষমতা গ্রহণের পর, এইচটিএস নেতা আহমাদ আল-শারা ধর্মীয় সহ-অবস্থানের কথাই প্রচার করছেন।
প্রতিবেশী লেবাননের সঙ্গে সম্পর্ক
শনিবার লেবাননের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি আর শারার সঙ্গে দেখা করতে সিরিয়ায় গেছেন। আসাদের সময়ে দু’টি দেশের মধ্যে সম্পর্কে টান টান অবস্থা ছিল। সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলি দু ভাগে বিভক্ত ছিল, এক পক্ষ আসাদকে সমর্থন করতো, অন্যপক্ষ আসাদের শাসনের বিরোধী ছিল।
আল শারার সঙ্গে তাঁর বৈঠকের পর মিকাতি সাংবাদিকদের বলেন যে এই দুটি দেশে সীমান্ত নির্ধারণের লক্ষ্যে কাজ করতে তারা একটি কমিটি গঠন করবে। তাদের দুই দেশের সীমান্ত কখনই নির্দিষ্ট করা হয়নি।
মিকাতি আরও বলেন যে চোরাচালান রোধ করতে তারা একত্রে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, “ সীমান্তে কিছু কিছু ব্যাপার সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, বিশেষত সীমান্তের কিছু অবৈধ পারাপারের স্থান যাতে লেবানন ও সিরিয়ার মধ্যে চোরাচালান বন্ধ করা যায়”।
চেবা ফার্মস ও গোলান মালভুমি
চেবা ফার্মস নামের একটি বিতর্কিত স্থান রয়েছে যেটি গোলান মালভূমির অংশ হিসেবে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে আছে। ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল সিরিয়ার কাছ থেকে গোলান মালভূমি দখল করে নেয এবং পরে তা অধিগ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অধিকাংশরাই মনে করেন সেই এলাকাটি অধিকৃত।
বৈরুত ও দামেস্ক বলছে চেবা ফার্মস লেবাননের অংশ। জাতিসংঘ বলছে এই এলাকাটি সিরিয়ার অংশ এবং এর ভবিষ্যত্ নিয়ে দামেস্ক ও ইসরাইলকে আপোষ রফা করতে হবে। লেবানন-সিরিয়া সীমান্তটি যে চিহ্নিত হয়নি সেই ঘটনা বিষয়টিকে আর্ও জটিল করে তুলেছে।
ওই অঞ্চলকে চিহ্নিত করা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে আল-শারা স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তিনি বলেন, “ আমার মনে হয় সীমানা চিহ্নিতকরণ নিয়ে এখনও কথা বলার সময় আসেনি । বাস্তবে সিরিয়ায় অনেক সমস্যা রয়েছে । আমরা সব সমস্যার সমাধান একবার করতে পারবো না”।
আল শারা বলেন, “ আমরা চাই আমাদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন যা না কমে বরঞ্চ আরও বৃদ্ধি পাক । সুতরাং আমাদের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে যে কোন প্রতিবন্ধকতা ভবিষ্যতে ধূর করা সম্ভব হবে তবে বিস্তারিত ভাবে এটি শুল্ক কর্মকর্তাদের দেখার বিষয়”।