অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

‘অর্থের বিনিময়ে তথ্য গোপন’ মামলার রায়ে ডনাল্ড ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত তবে কোন শাস্তি দেওয়া হয় নাই


নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প(ডানে) তাঁর অ্যাটর্নি টড ব্লাঞ্চের সঙ্গে এই মামলার রায় শোনার জন্য ভার্চুয়ালি হাজির হন। নিউ ইয়র্কের ফোজদারি আদালতে তথ্য গোপন করতে অর্থ প্রদানের অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। নিউ ইয়র্ক ১০ জানুয়ারি,২০২৫।
নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প(ডানে) তাঁর অ্যাটর্নি টড ব্লাঞ্চের সঙ্গে এই মামলার রায় শোনার জন্য ভার্চুয়ালি হাজির হন। নিউ ইয়র্কের ফোজদারি আদালতে তথ্য গোপন করতে অর্থ প্রদানের অভিযোগে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। নিউ ইয়র্ক ১০ জানুয়ারি,২০২৫।

‘অর্থের বিনিময়ে তথ্য গোপন’ করার মামলায় নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তবে বিচারক তাঁকে কোন শাস্তি দিতে অস্বীকৃতি জানান। এই রায়ে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হলো কিন্তু তাঁর উপর কোন রকম জেল-জরিমানার হুমকি না থাকায় তিনি অবলীলাক্রমে হোয়াইট হাউসে ফিরে যেতে পারবেন।

ট্রাম্পকে নিঃশর্ত ভাবে এই মুক্তি দেওয়ায় নিয়মের ব্যতয় ঘটলো এই প্রাক্তন ও ভবিষ্যত প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে যাঁকে ৩৪টি গুরুতর অপরাধের অভিযোগে প্রায় দু মাস ধরে বিচার করা হয় এবং প্রত্যেকটিতে জুরি তাঁকে অপরাধী সাব্যস্ত করেন। তবে আইনের দীর্ঘ পথ এবং সম্পর্ক বিষয়ে একটি ঘটনা লুকানোর প্রচেষ্টার বিস্তারিত আদালতে প্রকাশ করার পরও ভোটদাতাদের কাছ থেকে তিনি কোন ক্ষতির শিকার হননি এবং তাঁরা তাঁকে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত করেছেন।

নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানের বিচারক হুয়ান এম মার্চান ৭৮ বছর বয়সী এই রিপাবলিকানকে চার বছর মেয়াদ পর্যন্ত কারাদন্ড দিতে পারতেন। তা না করে তিনি বিতর্কিত সাংবিধানিক বিষয়গুলো এড়িয়ে কার্যত মামলাটির পরিসমাপ্তি টানেন তবে এটা নিশ্চিত করেন যে ট্রাম্প হবেন এমন একজন প্রেসিডেন্ট যিনি অপরাধ করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত।

মার্চান বলেন, যে কোন বিবাদির ক্ষেত্রে শাস্তি আরোপ করার আগে তাঁর বিবেচনা করতে হয় কিছু গুরুতর বিষয় তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প যে আইনি সুরক্ষা পাবেন,“সেই বিষয়টি অন্য সব বিষয়কে ছাড়িয়ে গেছে”।

মার্চান বলেন,“এই সব আইনি সুরক্ষা অনেকখানি বিস্তৃত থাকা সত্ত্বেও, একটি ক্ষমতা এখানে দেওয়া নেই যে এটি জুরির রায়কে মুছে ফেলতে পারে না”।

ম্যানহাটানের আদালত কক্ষে ভিডিওর মাধ্যমে তথ্য গোপন করতে অর্থ প্রদানের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের রায় শুনছেন। নিউ ইয়র্ক, ১০ জানুয়ারি,২০২৫।
ম্যানহাটানের আদালত কক্ষে ভিডিওর মাধ্যমে তথ্য গোপন করতে অর্থ প্রদানের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের রায় শুনছেন। নিউ ইয়র্ক, ১০ জানুয়ারি,২০২৫।

ট্রাম্প তাঁর ফ্লোরিডার বাড়ি থেকে ভারচুয়াল পদ্ধতিতে আদালতের উদ্দেশ্যে বলেন, তাঁর অপরাধের বিচার ও শাস্তি “ অত্যন্ত ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা” এবং জোর দিয়ে বলেন তিনি কোন অপরাধ করেননি।

এই সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট, তাঁর অভিষেকের ১০ দিন আগে ভিডিওতে এই মামলাটিকে আবার ব্যঙ্গ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে চারটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার মধ্যে এটি হচ্ছে এক মাত্র মামলা যাতে তিনি বিচারের সম্মুখীন হন এবং সম্ভবত এটিই তাঁর ক্ষেত্রে তেমনই একমাত্র মামলা হয়ে থাকবে।

ট্রাম্প বলেন, “এটি হচ্ছে রাজনৈতিক হয়রানি । আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য এটা করা হয়েছিল যাতে আমি নির্বাচনে হেরে যাই এবং দেখাই গেল, সেটা কাজে লাগেনি।

ট্রাম্প এই মামলাটিকে “ সরকারের অস্ত্রীকরণ” এবং “ নিউ ইয়র্কের জন্য অস্বস্তিকর” বলে অভিহিত করেছেন।

ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের মাত্র ১০ দিন বাকি থাকায়, মার্চান এমন আভাস দেন যে তিনি তাঁকে শাস্তিবিহীন দোষী সাব্যস্ত করেছেন এবং নিঃশর্ত খালাসের আহ্বান জানাচ্ছেন, এবং বাদিপক্ষের আইনজীবিরা ‘এর কোন বিরোধীতা করেননি।

মামলায় বাদিপেক্ষর আইনজীবিরা শুক্রবার বলেন যে তাঁরা শাস্তি ছাড়া দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টিকে সমর্থন করেন, তবে তাঁরা মামলার সময়ে এবং পরে আগাগোড়া আইনি পদ্ধতির উপর ট্রাম্পের আক্রমণের তিরস্কার করেন।

বাদিপক্ষের আইনজীবি জোশুয়া স্টেইংল্যাস বলেন, “ যুক্তরাষ্ট্রের এক সময়কার এবং আগামি দিনের প্রেসিডেন্ট ‘এর বৈধতাকে খর্ব করতে সমন্বিত অভিযানে লিপ্ত রয়েছেন”।

স্টেইংল্যাস বলেন, অনুশোচনা না করে ট্রাম্প জুরির রায় এবং বিচার ব্যবস্থাকে তাচ্ছিল্য করেছেন এবং যারা এই মামলার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার, এমনকী বিচারককে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে , “ বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের ধারণাকে নষ্ট করেছেন এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের বিপন্ন করে তুলেছেন”।

ফ্লোরিডার বাসায় সাবেক প্রেসিডন্টের পাশে তাঁর আইনজীবি টড ব্লাঞ্চ বসেছিলেন । তাকে তিনি তাঁর আসন্ন সরকারের বিচার বিভাগের দ্বিতীয় উচ্চতম পদধারী ব্যক্তি হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন।

ব্লাঞ্চ বলেন, “ আইনত এই মামলা আনাই উচিৎ হয়নি”।

রিপাবলিকান ট্রাম্প হচ্ছেন এমন প্রথম ব্যক্তি যিনি গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে, প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন।

“ অর্থের বিনিময়ে তথ্য গোপন”মামলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে যে তিনি যে পর্ণ অভিনেত্রী স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ১,৩০,০০০ ডলার দিয়েছিলেন তা লুকানোর জন্য তিনি তাঁর ব্যবসার রেকর্ডে গোঁজামিল দিয়েছেন। ট্রাম্পের ২০১৬ সালের নির্বাচনী অভিযানের সময়ে তিনি তাকে এই অর্থ দিয়েছিলেন যাতে তাদের মধ্যে একদশক আগে যে যৌন সম্পর্ক ছিল সে কথা যেন জনগণকে বলা না হয়। ট্রাম্প বলছেন তাদের মধ্যে যৌন কিছুই হয় নাই এবং তিনি বলেন যে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা তাঁর ক্ষতি সাধনের জন্য এই ভিত্তিহীন অভিযোগ আনেন।

নব- নির্বাচিত রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে গত সপ্তাহে লেখেন,“আমি কখনো আমার ব্যবসার রেকর্ডে কোন রকম মিথ্যাচার করিনি, এটি একটি ভূয়া অভিযোগ ”। ম্যানহাটান ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি, যার দপ্তর থেকে এই অভিযোগ করা হয়, তিনি একজন ডেমক্র্যাট।

সোমবার ব্র্যাগের দপ্তর আদালতে অভিযোগ করে যে ট্রাম্প “ এমন গুরুতর অপরাধ করেছেন যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এবং নিউ ইয়র্কের আর্থিক বাজারে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে”।

বাদিপক্ষের আইনজীবিরা বলছেন সেই সময়ে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত উকিল মাইকেল কোহেনের মাধ্যমে ড্যানিয়েলসকে সব অর্থ দেয়া হয়। এটি ট্রাম্পের বিয়ে বহিরভূত সম্পর্কের বিষয়ে ভোটাররা যাতে কিছু জানতে না পারে সেই ব্যাপক প্রচেষ্টারই অংশ।

এ রকম যোগাযোগের বিষয়টি ট্রাম্প অস্বীকার করেন। তাঁর আইনজীবিরা বলছেন, তিনি এসব কাহিনী পরিহার করতে চেয়েছিলেন, তাঁর নির্বাচনী প্রচারাভিযানের জন্য নয়, পরিবারের জন্য।

গত নভেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভের পর ট্রাম্পের আইনজীবিরা যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে তাঁর প্রেসিডেন্ট পদে আসন্ন আসীন হওয়ায় এবং ওভাল অফিসে তাঁর প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করা এড়ানোর জন্য এই মামলা খারিজ করে দেয়া উচিৎ।

প্রথমে জুলাই মাসে নির্ধারিত এই মামলার রায় মার্চান, যিনি একজন ডেমক্র্যাট, স্থগিত করেন। কিন্তু গত সপ্তাহে তিনি এই শুক্রবারের তারিখটি নির্ধারণ করে বলেন এটা এবার চূড়ান্ত হওয়া প্রয়োজন। তিনি লেখেন ট্রাম্পের প্রশাসন চালানো, সুপ্রিম কোর্টের রেহাই সংক্রান্ত নির্দেশ, জুরির রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং জনগণের প্রত্যাশা যে “ কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়” এ সব কিছুর মধ্যে তিনি ভারসাম্য আনার চেষ্টা চালান।

ট্রাম্পের আইনজীবিরা এই রায় প্রদান বন্ধ করার জন্য শেষ মূহুর্তে চেষ্টা চালান। তবে তাঁদের শেষ আশাটি বিনষ্ট হয় যখন সুপ্রিম কোর্ট ৫-৪ রায়ে মামলার রায় বিলম্বিত করতে নাকচ করে দেয়।

XS
SM
MD
LG