৪৩তম বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাদ পড়া ২৬৭ জন প্রার্থীর অধিকাংশই পুনরায় চাকরিতে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেসুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) ক্ষতিগ্রস্ত প্রার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
মোখলেসুর রহমান বলেন, “তদন্ত শেষ হয়েছে এবং আমরা দ্রুত প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার জন্য কাজ করছি।”
বাদ পড়া প্রার্থীদের অধিকাংশের পুনরায় নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বর্তমানে তাদের আবেদনের পুনর্মূল্যায়ন চলছে।
এ সময় ড. মোখলেসুর রহমান সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা প্রবর্তনের সরকারি সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করেন। খুব শিগগিরই এটি বাস্তবায়িত হবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পড়ে, তবে কমিটির সদস্য হিসাবে আমি নিশ্চিত করতে পারি, ২টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আলোচনা ইতিমধ্যে এগিয়েছে। এই ভাতা একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হবে এবং এবার পেনশনভোগীরাও উপকৃত হবেন, যা অতীতে ছিল না।”
সরকারি চাকরিজীবীদের টেকসই আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করে পরবর্তী ইনক্রিমেন্ট পিরিয়ডে মূল বেতনের সঙ্গে ভাতা সমন্বয় করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাস্তবায়নের সময়সীমা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মোখলেসুর রহমান চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই এই ভাতা চালু হবে বলে আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, “আগামী ৩০ জুন বা তারও আগে ইনশাআল্লাহ এটি কার্যকর হবে।” অর্থ উপদেষ্টা এবং অর্থ সচিব নির্দিষ্ট শতাংশ এবং সময়সীমার বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দেবেন।
৪৩তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য নতুন প্রজ্ঞাপন, ১৬৮ জন বাদ
৪৩তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০২৪ সালের ১৫ অক্টোবরের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে নতুন করে ৩০ ডিসেম্বর (সোমবার) আবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে বাদ পড়েন ১৬৮ জন প্রার্থী।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সুপারিশপ্রাপ্ত ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থীকে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারের প্রবেশ পদে নিয়োগ দেওয়া হলো। এসব প্রার্থীকে ১৫ জানুয়ারি (২০২৫) চাকরিতে যোগ দিতে হবে।
এর আগে ১৫ অক্টোবর ৪৩তম বিসিএসের নিয়োগের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ওই প্রজ্ঞাপনে ২ হাজার ৬৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে নতুন প্রজ্ঞাপনে বাদ পড়েন ১৬৮ জন।
বাদ পড়া ১৬৮ জনের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ২৬ জন, পররাষ্ট্র ক্যাডারের ৩ জন এবং পুলিশ ক্যাডারের ৮ জন।
৪৩তম বিসিএস থেকে ২ হাজার ১৬৩ জনকে ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর সুপারিশ করেছিল সরকারি কর্ম কমিশন। সুপারিশের দীর্ঘ ১০ মাস পর ১৫ অক্টোবর (২০২৪) যে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছিল সেখানে বিভিন্ন ক্যাডারে বাদ পড়েছিলেন ৯৯ জন। সব মিলিয়ে ৪৩তম বিসিএস থেকে বাদ পড়েন মোট ২৬৭ জন।
৪৩তম বিসিএসের গেজেট বাতিলের দাবি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের
৪৩তম বিসিএসের গেজেট থেকে বিভিন্ন ক্যাডারের প্রার্থীদের মধ্য থেকে ১৬৮ জন প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭১ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের (৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪) প্রকাশিত ওই প্রজ্ঞাপনের প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
প্রকাশিত এই গেজেটের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বলেছে, এমন গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ যে হীন মানসিকতার স্পষ্টত প্রতিফলন হয়েছে, তা সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
অনতিবিলম্বে ‘বৈষম্যপূর্ণ’ গেজেট প্রত্যাহার করে ৪৩তম বিসিএসের বাদ পড়া সবাইকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানানো হয়।
বাদ পড়া ২৬৭ জনের সচিবালয়ে সামনে অবস্থান
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন থেকে বাদ পড়া ৪৩তম বিসিএসের চাকরিপ্রার্থীরা ১ জানুয়ারি (বুধবার) সচিবালয়ের সামনে জড়ো হন।
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশ পাওয়ার পর দ্বিতীয় প্রজ্ঞাপনে তারা কেন বাদ পড়েছেন—তা জানতে সেখানে যান বলে জানা গেছে। এ সময় তারা প্রজ্ঞাপনে আবারও অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান।
সচিবালয়ে যাওয়া একজন গণমাধ্যমকে বলেন, “পড়ালেখা করে ৪ বছর পর পিএসসির সুপারিশ পেলাম। নতুন চাকরিতে জয়েন করার আগে গেজেট থেকে বাদ পড়েছি।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন প্রার্থী বলেন, “বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার কথা বলা হচ্ছে, অথচ নতুন চাকরিতে ঢোকার আগেই বৈষম্যের শিকার হলাম। আমাদের সহযাত্রীরা যোগ দেবেন, আর আমরা মুছব চোখের পানি। আমরা এই বৈষম্য থেকে রেহাই চাই।”