অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ট্রাম্পের ছেলে ডনাল্ড জুনিয়রের গ্রিনল্যান্ড ভ্রমণ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা


গ্রিনল্যান্ডের রাজধানীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্পের ছেলে ডনাল্ড জুনিয়র। ফটোঃ ৭ জানুয়ারি, ২০২৫।
গ্রিনল্যান্ডের রাজধানীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্পের ছেলে ডনাল্ড জুনিয়র। ফটোঃ ৭ জানুয়ারি, ২০২৫।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্পের জ্যেষ্ঠ পুত্র মঙ্গলবার ব্যক্তিগত সফরে গ্রিনল্যান্ডে পৌঁছেছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রশাসন খনিজ সমৃদ্ধ ডেনিশ অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইতে পারে বলে জল্পনা-কল্পনা জোরদার করেছে।

ডেনিশ রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম জানিয়েছে যে, ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের বিমানটি বরফে ঢাকা বিস্তীর্ণ অঞ্চলের রাজধানী নুকে অবতরণ করেছে, যেখানে প্রায় ৫৭ হাজার মানুষ বসবাস করে। স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত ফুটেজে ট্রাম্প জুনিয়রকে বরফে ঢাকা টারম্যাক পার হতে দেখা যায়।

এক বিবৃতিতে গ্রিনল্যান্ড সরকার জানিয়েছে, ট্রাম্প জুনিয়রের সফর সরকারি সফর হিসেবে নয় এটা তার “ব্যক্তিগত” সফর এবং গ্রিনল্যান্ডের সরকারি প্রতিনিধিরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন না। গ্রিনল্যান্ড একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল যা ডেনমার্কের অংশ।

গ্রিনল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব মিনিংগুয়াক ক্লেইস্ট বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস বলেন, কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে যে ট্রাম্প জুনিয়র চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সেখানে থাকবেন।

ক্লেইস্ট বলেন, ট্রাম্প জুনিয়রের প্রতিনিধি দল অথবা গ্রিনল্যান্ডের সরকারি কর্মকর্তারা কোন পক্ষই সাক্ষাত করার অনুরোধ করেননি।

তারপরও, এই সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে।

প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ট্রাম্প তার প্রথমবারের শাসনামলের মতো এবারও সম্প্রতি আর্কটিক অঞ্চল অধিগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এই অঞ্চলটি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও অন্যদের জন্য কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা।

গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুকের বিমানবন্দরে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বিমান। ফটোঃ ৭ জানুয়ারি, ২০২৫।
গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুকের বিমানবন্দরে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বিমান। ফটোঃ ৭ জানুয়ারি, ২০২৫।

গ্রিনল্যান্ড বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ। আটলান্টিক এবং আর্কটিক মহাসাগরের মাঝখানে অবস্থিত এবং সেখানে আমেরিকার একটি বড় সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। গ্রিনল্যান্ডের ৮০ ভাগই বরফের ঢাকা থাকে।

সোমবার রাতে প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ট্রাম্প তার সামাজিক মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মের এক পোস্টে “মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন” স্লোগানের কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমি শুনছি গ্রিনল্যান্ডের মানুষ 'ম্যাগা'। আমার ছেলে ডন জুনিইয়ার এবং অন্যান্য প্রতিনিধি সেখানে সবচেয়ে চমৎকার দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করবেন।"

“গ্রিনল্যান্ড একটি অবিশ্বাস্য জায়গা এবং এটি যদি, এবং যখনই আমাদের দেশের অংশ হবে তখনই এর মানুষ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে,” ট্রাম্প লিখেছেন। "বাইরের ঘৃন্য জগতের হাত থেকে আমরা একে রক্ষা করব এবং লালন করব। গ্রিনল্যান্ডকে আবার মহান করে তুলুন!”

গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুচ্চে এগেদে নববর্ষের ভাষণে ডেনমার্ক থেকে স্বাধীন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে এটি হবে গ্রিনল্যান্ডকে তার ঔপনিবেশিক অতীত থেকে মুক্ত করার একটি উপায়। তবে এগেদে বলেছেন, গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়ার ব্যাপারে তার কোন আগ্রহ নেই।তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই দ্বীপ বিক্রির জন্য নয়।

ডেনমার্কের রাজা দশম ফ্রেডেরিক। ফাইল ফটোঃ ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪।
ডেনমার্কের রাজা দশম ফ্রেডেরিক। ফাইল ফটোঃ ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪।

ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডেরিকসেন মঙ্গলবার বলেছেন, গ্রিনল্যান্ডের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে গ্রিনল্যান্ড এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ডেনমার্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে উল্লেখ করেন।

ডেনমার্কের রাজা দশম ফ্রেডরিক গ্রিনল্যান্ডের পাশাপাশি উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জের উপর এই রাজ্যের অধিকার প্রয়োগ করে আসছেন। স্ব-শাসিত ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জ আইসল্যান্ড ও নরওয়ের মাঝা-মাঝি অবস্থিত।

“আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ এবং আমরা প্রত্যেকে ডেনমার্ক রাজ্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ,” নববর্ষের ভাষণে রাজা বলেন। তিনি যোগ দেন,“ একেবারে গ্রীণল্যান্ড অবধি।"

গত মাসে রাজা ডেনমার্কের কোট অব আর্মস পরিবর্তন করে গ্রিনল্যান্ড ও ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জের প্রতিনিধিত্বকারী ক্ষেত্রগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেন। গ্রিনল্যান্ডের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতীক হচ্ছে একটি রূপালী ভালুক যার জিহ্বাটি লাল রংএর। রাজকীয় ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে ১১৯৪ সাল থেকে রয়্যাল কোট অফ আর্মস হচ্ছে “দৃশ্যত রাষ্ট্র এবং রাজার বৈধতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিন্ডেন্ট-নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে, গ্রিনল্যান্ড কেনার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেছিলেন। গ্রিনল্যান্ড ১৯৭৯ সালে ডেনমার্কের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন লাভ করে। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালের আগস্টে এই ধারণা নাকচ করে দেওয়ার পর তিনি তার নির্ধারিত ডেনমার্ক সফরটি বাতিল করে দেন।

গত মাসে ডেনমার্কের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মনোনয়ন ঘোষণার সময় এক বিবৃতিতে বিষয়টি পুনরুজ্জীবিত করে ট্রাম্প লিখেছিলেন: “বিশ্বজুড়ে জাতীয় নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত প্রয়োজন।”

ট্রাম্পের বড় ছেলে তার বাবার রাজনৈতিক কর্মকান্ডের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন। তিনি তার বাবার প্রেসিডেন্সিয়াল ট্রানজিশন টিমের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং হোয়াইট হাউসের আসন্ন স্টাফ নির্বাচন করতেও সাহায্য করেছেন।

XS
SM
MD
LG