অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন


কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো রাজধানী অটাওায় এক সংবাদ সম্মেলনে লিবেরাল পার্টির প্রধান পদ থেকে তাঁর পদত্যাগ ঘোষণা করেন। ফটোঃ ৬ জানুয়ারি, ২০২৫।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো রাজধানী অটাওায় এক সংবাদ সম্মেলনে লিবেরাল পার্টির প্রধান পদ থেকে তাঁর পদত্যাগ ঘোষণা করেন। ফটোঃ ৬ জানুয়ারি, ২০২৫।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার নেতৃত্ব নিয়ে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মুখে এবং তার অর্থমন্ত্রীর আকস্মিক বিদায়ের পরে তার সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার ইঙ্গিতের কারণে সোমবার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

ট্রুডো বলেন, ‘ অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের’ অর্থ হলো, আগামী নির্বাচনে তিনি ‘ সেরা বিকল্প হতে পারবেন না’। লিবারেল পার্টের নতুন নেতা নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকার পরিকল্পনা করেছেন।

একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সংসদ অধিবেশন ২৭ জানুয়ারি পুনরায় শুরু হওয়ার কথা ছিল কিন্তু এখন সেটা ২৪ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। এই সময়ে লিবেরাল পার্টি তাদের নতুন নেতা নির্বাচন করতে পারবে। কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার স্বার্থে কথা বলেন, কারণ এ’বিষয়ে জনসমক্ষে মন্তব্য করার অনুমতি তার ছিল না।

প্রধান তিনটি বিরোধীদল বলেছে, সংসদ অধিবেশন বসার পর তারা অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে লিবেরাল পার্টিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা করছে। তার মানে, এই বসন্তে নতুন সংসদ নির্বাচন প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল।

কনজারভেটিভ পার্টির ১০ বছরের শাসনের পর ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসেন ট্রুডো। তিনি কানাডাকে আগের মত উদারপন্থি নীতির দিকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য শুরুতে অনেকে তাঁকে স্বাগত জানায়।

কিন্তু কানাডার অন্যতম বিখ্যাত প্রধানমন্ত্রীর ৫৩ বছর বয়সী এই বংশধর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খাদ্য ও আবাসনের ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং ক্রমবর্ধমান অভিবাসনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ভোটারদের কাছে ব্যাপকভাবে অজনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর সপ্তাহ দুয়েক আগেই জাস্টিন ট্রুডো দায়িত্ব থেকে সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন। ফাইল ফটোঃ ১১ অক্টোবর, ২০১৭।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর সপ্তাহ দুয়েক আগেই জাস্টিন ট্রুডো দায়িত্ব থেকে সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন। ফাইল ফটোঃ ১১ অক্টোবর, ২০১৭।

আন্তর্জাতিকভাবে কানাডার জন্য কঠিন এক মুহূর্তে এই রাজনৈতিক তোলপাড় হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন, তাঁর ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ও মাদকের প্রবাহ বন্ধ না করলে কানাডার সব পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।

তাঁর পদত্যাগের দাবীতে চাপ বৃদ্ধি পেলেও, ট্রুডো সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে জনসমক্ষে মুখ খুলেননি।

“এই রাজনৈতিক নাটকের পর ট্রুডোর দীর্ঘ নীরবতা তাঁর বর্তমান অবস্থানের দুর্বলতাই প্রকাশ করছে,” বলেন ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটি অফ মন্ট্রিয়ল-এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড্যানিয়েল বেল্যান।

কানাডার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিডল্যান্ড ট্রুডোর মন্ত্রীসভা থেকে ১৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। তিনি ট্রাম্পের হুমকির মুখে ট্রুডোর কিছু অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারের সমালোচনা করেন। আবাসন মন্ত্রীর পদত্যাগের পরপরই ফ্রিডল্যান্ড-এর পদক্ষেপ দেশকে হতবাক করে দেয় এবং ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারানো ট্রুডো আর কতদিন নিজ পদে বহাল থাকতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি করে।

লিবারেল পার্টির সদস্যদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের মুখেও ট্রুডো আগামী বছরের নির্বাচনে চতুর্থ মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করছিলেন। সম্প্রতি টরন্টো ও মন্ট্রিয়লের দুটি জেলায় অনুষ্ঠিত বিশেষ নির্বাচনে দলটি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়, যে আসনগুলো অনেক বছর ধরে তাদের দখলে ছিল।

কোভিড মহামারি মোকাবেলায় তাঁর সরকারের সাফল্য থাকলেও, অনেকের কাছে তাঁর বাধ্যতামূলক টিকা নীতি ক্ষোভ সৃষ্টি করে। ফাইল ফটোঃ ২৩ এপ্রিল, ২০২১।
কোভিড মহামারি মোকাবেলায় তাঁর সরকারের সাফল্য থাকলেও, অনেকের কাছে তাঁর বাধ্যতামূলক টিকা নীতি ক্ষোভ সৃষ্টি করে। ফাইল ফটোঃ ২৩ এপ্রিল, ২০২১।

এক শতাব্দীর বেশি সময়ের মধ্যে কানাডার কোন প্রধানমন্ত্রী টানা চারবার নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি।

আর সর্বশেষ জরিপের ভিত্তিতে ট্রুডোর সাফল্যের সম্ভাবনা ক্ষীণ মনে হচ্ছে। মানুষের সর্বশেষ জরিপে লিবারেলরা কনজারভেটিভদের চেয়ে ৪৭ থেকে ২১ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে।

প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার সময় উদারপন্থীভিত্তিক অনুকূল নানান ইস্যু গ্রহণ করেছেন। তিনি এমন এক সময়ে অভিবাসনের পক্ষে কথা বললেন যখন অন্যান্য দেশ তাদের সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের চেষ্টা করছিল। তিনি বৈচিত্র ও লিঙ্গ সমতার চ্যাম্পিয়ন ছিলেন, এমন একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন যেখানে নারী ও পুরুষের সমান অংশগ্রহণ ছিল। তিনি গাঁজাকে বৈধতা দিয়েছেন।

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পরিবেশ সংরক্ষণের মাঝে ভারসাম্য রাখতে তাঁর প্রচেষ্টা বাম এবং ডানপন্থী, উভয়ের দিক থেকেই সমালোচিত হয়। তিনি কার্বন নির্গমনের উপর বাড়তি কর আরোপ করেন, এবং আলবের্টা প্রদেশের তেল আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি আটকে যাওয়া পাইপলাইন প্রকল্প উদ্ধার করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট রনাল্ড রেগানের সাথে পিয়ের ট্রুডো। ফাইল ফটোঃ ২৯ এপ্রিল, ১৯৮৩।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট রনাল্ড রেগানের সাথে পিয়ের ট্রুডো। ফাইল ফটোঃ ২৯ এপ্রিল, ১৯৮৩।

কোভিড মহামারিতে অন্যান্য জায়গার তুলনায় কানাডায় কম লোক মারা যায় এবং তাঁর সরকার ব্যাপক অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়। কিন্তু যারা বাধ্যতামূলক টিকার বিরুদ্ধে ছিল, তাদের মধ্যে ক্ষোভ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

মফস্বল এলাকায় ট্রুডোর ছবির উপড়ে গালি-গালাজ লেখা পতাকা সাধারণ দৃশ্যে পরিণত হয়।

কেলেঙ্কারি এবং জনপ্রিয় নয় এমন কিছু নীতির ফলে তাঁর সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে।

ট্রুডোর পিতা ১৯৬৮ সালে ক্ষমতায় আসেন এবং ১৬ বছর ধরে কানাডাকে নেতৃত্ব দেন। কানাডার ইতিহাসে পিয়ের ট্রুডোর নাম জায়গা করে নেয়, বিশেষ করে অভিবাসীদের জন্য দেশের দরজা খুলে দেয়ার জন্য।

পিয়ের ট্রুডো’র সাথে প্রায়ই জন এফ কেনেডিকে তুলনা করা হয় এবং তিনি হাতে গোনা কয়েজন কানাডিয়ান রাজনিতিকদের একজন যাকে আমেরিকায় মানুষজন চেনে।

লম্বা এবং চিকন, সাথে সিনেমা নায়কের মত চেহারা, জাস্টিন ট্রুডো’র তারকা খ্যাতি ছিল, যদিও তাঁর পিতার রাজনৈতিক প্রভাব ছিল না।

তিনি কানাডার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন। তিনি যখন ক্ষমতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তখন তাঁর প্রতিপক্ষ বলেছিল তাঁর বয়স তাঁর বিরুদ্ধে কাজ করবে। কিন্তু তিনি ২০১৫ সালে পিছিয়ে থাকার পরও ব্যাপক ম্যান্ডেট নিয়ে জয়লাভ করেন।

ট্রুডো এক সময় নাইটক্লাবে বাউন্সার হিসেবে কাজ করেছেন এবং একজন প্রাক্তন শিক্ষক।

XS
SM
MD
LG