চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। উত্তরের হিমেল বাতাসের কারণে ঠান্ডা জেঁকে বসেছে।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৫ শতাংশ।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি জানান, হাড় কাঁপানো বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাপমাত্রা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, বর্তমানে জেলাজুড়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সন্ধ্যা থেকে শীতল বাতাসের প্রবাহ বাড়ছে এবং রাতের তাপমাত্রা আরও কমতে শুরু করেছে।
এদিকে, শীত উপেক্ষা করে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য ঘরের বাইরে আসতে হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। হাটবাজারের শ্রমিক ও কৃষি শ্রমিকদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কাজের সন্ধানে শহরে এসে অনেকে কাজ পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। শীত উপেক্ষা করে রিকশাচালকেরা যারা শহরে গিয়েও যাত্রী পাচ্ছেন না, তাদের জন্যও পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়েছে।
জেলা সদরের সরোজগঞ্জের দিনমজুর সোহাগ মিয়া বলেন, “ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাজের জন্য চুয়াডাঙ্গা শহরে আসতে হয়। এত শীতে সাইকেল চালিয়ে শহরে পৌঁছানো খুব কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। হাত অবশ হয়ে পড়ে। শীতে কাজও তেমন একটা নেই। মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। সেই জন্য কাজও পাচ্ছি না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কাজ না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।”
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ট্রাকচালক জাকির হোসেন জানান, এ এলাকায় চরম শীত পড়েছে। কুয়াশাও রয়েছে আকাশে। কুয়াশার কারণে গাড়ি চালানো কষ্ট হয়ে পড়েছে। হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী রানা মিয়া বলেন, “শীতের জন্য মানুষ কম চলাচল করছে বাইরে। হোটেল খোলা থাকলেও বিক্রি নেই। যাদের প্রয়োজন তারাই বাজারে আসছেন। শীতের তীব্রতা খুব বেশি, দিনে ও রাতে একই রকম অনুভূত হচ্ছে।”
হিমেল বাতাসের দাপটে নওগাঁয় থমকে দাঁড়িয়েছে জনজীবন
কনকনে ঠান্ডা আর সঙ্গে হিমেল বাতাসের দাপটে উত্তরের জেলা নওগাঁয় আবারও থমকে দাঁড়িয়েছে জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। এতে নিদারুণ কষ্টে পড়েছে দিনমজুর, রিকশাচালক ও খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ।
স্থানীয়রা জানান, গত ২ দিন থেকে আবারও বেড়েছে শীতের দাপট। সকালে কুয়াশা কমলেও বেড়েছে ঠান্ডার দাপট। তাপমাত্রা কমার চেয়েও বেশি অসুবিধা হচ্ছে হিমশীতল বাতাসে। দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের দেখা থাকলেও হিমেল বাতাসে দিনভর অনুভূত হয় হাড় কাঁপানো শীত। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত।
এদিকে গত কয়েক দিন থেকেই শীতের তীব্রতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় রাস্তাঘাটে শ্রমজীবী মানুষের দেখা মিললেও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কম ছিল।
সদর উপজেলার বরুনকান্দি এলাকার রিকশাচালক লিটন হোসেন বলেন, গত ২ দিন থেকে আবার খুব শীত পড়েছে। এত বাতাস হচ্ছে সবাইকে একেবারে কাবু করে ফেলেছে। এরমধ্যে গাড়ি চালানোই কষ্ট। যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না।
নওগাঁ বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, “বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে বুধবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকালের চেয়ে তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। হিমেল বাতাসের কারণেই কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে।”
কুড়িগ্রামে মেঘলা আকাশে হারিয়েছে সূর্য, কুয়াশার রাজত্ব
শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের মানুষ। ২৪ ঘন্টায় তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও শীতের তীব্রতা একটুও কমেনি। কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাসের দাপটে শীতকষ্টে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ২ দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যেরও।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। এর আগে বুধবার তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কনকনে ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি ভুগছেন হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না, কারণ দিনের বেলা সূর্যের কোনো উত্তাপ নেই এবং হিমেল বাতাসের কারণে ঠান্ডা আরও তীব্র অনুভূত হচ্ছে।
এদিকে শীত নিবারণে জেলার ৯ উপজেলায় ৪৯ লাখ টাকা ও ১২ হাজার কম্বল বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তা বিতরণ চলমান।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, গত দেড় মাস ধরে এই অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ওঠানামা করছে। এই মাসের মধ্যে ২ থেকে ৩টি শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে, যা শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।