যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়েছে, প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের আগে তারা যেন ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন; কেননা প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিলেন। তেমনটা আবারও তিনি করতে পারেন বলে উদ্বেগ রয়েছে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা কী তা এখনও অনিশ্চিত থাকলেও কয়েক ডজনের বেশি স্কুল নানা নির্দেশিকা জারি করেছে। ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই কিছু স্কুলে বসন্তকালীন সেমেস্টার শুরু হয়ে যাবে; ফলত শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরতেই হবে। তবে, যে সব শিক্ষার্থীর আমেরিকায় থাকা নির্ভর করছে অ্যাকাডেমিক ভিসার উপর, তারা বলছেন, ঝুঁকি কমিয়ে ২০ জানুয়ারির আগে ক্যাম্পাসে ফিরে আসাই উত্তম।
ট্রাম্প অতীতে কী করেছেন?
সাতটি মুসলিম প্রধান দেশের (ইরাক, সিরিয়া, ইরান, সুদান, লিবিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেন) নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে একটি কার্যনির্বাহী নির্দেশিকা জারি করেছিলেন। ওই সব দেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের হয় ফ্লাইটে উঠতে বাধা দেওয়া হয়েছে নয়ত যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরে নামার পর তাদের আটক করা হয়েছে। এই ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যবসায়ি, পর্যটক এবং বন্ধু ও পরিবারের কাছে আসা ভ্রমণার্থীও।
ট্রাম্প পরে কয়েকটি দেশের নাম তালিকা থেকে বাদ দিলেও আরও কয়েকটি দেশের নাম যোগ করেন; তার প্রেসিডেন্সি চলাকালে কোনও না কোনও সময় ১৫টি দেশ আক্রান্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বক্তব্য অনুযায়ী, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ৪০ হাজারের বেশি মানুষের ভিসা শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছিল। ২০২১ সালে ক্ষমতায় এসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করেন।
শিক্ষার্থীরা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন?
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের অর্থায়নে চলা তথ্য প্রকল্প ‘ওপেন ডোরসে’র বক্তব্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ১১ লক্ষের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীর নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীদের অর্ধেকের বেশি ভারত ও চীনের শিক্ষার্থী এবং ভ্রমণ নিয়ে ট্রাম্পের কড়াকড়ির ফলে আক্রান্ত ১৫টি দেশ থেকে রয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার ৮০০ জন শিক্ষার্থী।
বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যার তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জ্যাকি লি ২১ ডিসেম্বরে নিজের দেশ চীনে ফিরে যাবেন এবং ১৬ জানুয়ারিতে ফিরে আসবেন। যদিও বার্কলির কর্মকর্তারা নির্দেশিকা পাঠানোর কয়েক মাস আগেই তিনি পরিকল্পনা করে নিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে।
ট্রাম্প এখন কী করতে পারেন?
চলতি সপ্তাহে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্পের ক্ষমতা হস্তান্তর বিষয়ক দল কোনও জবাব দেয়নি, তবে আগে তিনি বলেছেন, ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা তিনি আবার ফিরিয়ে আনবেন এবং এতে আরও বহু বিষয় যোগ করবেন; “ভয়ানক বখাটে, ঘৃণাপোষণকারী, ধর্মান্ধ ও ক্ষ্যাপাটে” অ-আমেরিকান নাগরিকদের আটকাতে নতুন “মতাদর্শগত পরীক্ষা”র কথা বলেছেন তিনি।
২০২৩ সালের অক্টোবরে আইওয়াতে এক প্রচার সভাতে ট্রাম্প বলেছিলেন, “গাজা, সিরিয়া, সোমালিয়া, ইয়েমেন বা লিবিয়া বা আমাদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে এমন দেশ থেকে কাউকে আমরা আসতে দেব না।” ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেছিলেন, “আমাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আমেরিকা ও ইহুদি-বিদ্বেষী বিদেশিদের শিক্ষার্থী-ভিসা বাতিল” করা হবে।