ফ্রান্সের এক আদালত এক নারীকে মাদক খাইয়ে গণধর্ষণ করার মামলায় ৫১ জন আসামিকেই দোষী সাব্যস্ত করেছে। ওই অপরাধের বৃত্তান্ত জেনে শিউরে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। তবে, নির্যাতিতা জিসেল পেলিকটকে এই ঘটনা একেবারে বদলে দিয়েছে; তিনি হয়ে উঠেছেন সাহস ও অদম্য জেদের প্রতীক।
পেলিকট ৫০ বছর ধরে ডমিনিক পেলিকটের সঙ্গে সংসার করেছেন। তারপর তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। ডমিনিক প্রায় এক দশক ধরে নিজের স্ত্রীকে বারবার মাদক দিয়ে তার অচেতন দেহকে অনলাইনে পরিচয় হওয়া ডজন ডজন অচেনা ব্যক্তির হাতে তুলে দিয়েছেন ধর্ষণের জন্য; এবং এই কুকর্মের ভিডিও করেছেন তিনি।
প্রসিকিউটরদের দাবি মেনে পাঁচ বিচারপতির একটি প্যানেল তাকে সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
প্রসিকিউশনের দাবি অনুযায়ী আদালত ৪-১৮ বছর মেয়াদের কম সময়কাল কারাভোগের নির্দেশ দিয়েছে অন্যান্য আসামীদের; এদের প্রায় সবাই অচেতন জিসেল পেলিকটকে ধর্ষণে অভিযুক্ত।
সব মিলিয়ে আদালত ৪৭ জন আসামীকে ধর্ষণ, দুইজনকে ধর্ষণের চেষ্টা ও আরও দুইজনকে যৌন হয়রানির অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
প্রথম অপরাধীর সাজা ঘোষণা হওয়ার পর দক্ষিণ ফ্রান্সের এভিনন শহরে আদালতের বাইরে নির্যাতিতার সমর্থকেরা উল্লাসে ফেটে পড়েন।
অভিযুক্তদের অনেকেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, তারা ভেবেছিল যে ওই দম্পতির আয়োজন করা এটা একটা সম্মতিমূলক যৌন খেলা। তাদের যুক্তি, স্বামী যদি অনুমোদন দেন, তাহলে এটা ধর্ষণ হবে কীভাবে?
৭২ বছর বয়সী ডমিনিক পেলিকট বলেছেন, তিনি ওই ব্যক্তিদের বিভ্রান্ত করেননি। তার কথায়, তারা কী করছে তা তারা জানত। সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তিনি বলেন, “ওই ঘরে বাকিদের মতো আমিও একজন ধর্ষক।”
জিসেলেরও বয়স ৭২ বছর। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালে তিনি নাম-পরিচয় গোপনের অধিকার ত্যাগ করেন এবং দাবি করেন, তার সাবেক স্বামীর রেকর্ড করা ধারাবাহিক নিগ্রহের ভয়াবহ ভিডিওগুলি আদালতে দেখা উচিত। তিনি আরও বলেন, তার আশা, এটা বাকি নারীদেরও মুখ খুলতে সাহায্য করবে।
বিচারে জিসেলের সমর্থনে ফ্রান্সের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ-সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে এবং এক আত্মানুসন্ধানের পথ প্রশস্ত হয়েছে। ধর্ষণ নিয়ে ফ্রান্সে যে আইন রয়েছে তা আপডেট করা প্রয়োজন কিনা তা নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনা শুরু হয়েছে। এই আইনে এখনও বলা নেই যে, যৌনতার ক্ষেত্রে সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে।
জিসেল অক্টোবরে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেছেন, “আমি লজ্জিত না হওয়ার সংকল্প নিয়েছি। আমি কোনও ভুল করিনি। বরং ওদেরই লজ্জিত হওয়া দরকার।”