শনিবার সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের চমকে দেওয়া অগ্রযাত্রার খবরে বলা হচ্ছে যে বিদ্রোহীরা রাজধানীর শহরতলীতে পৌঁছে গেছে এবং সরকারি বাহিনী মধ্যাঞ্চলীয় শহর হোমস থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সরকার এ রকম গুজব অস্বীকার করতে বাধ্য হয় যে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
হোমস হারানো আসাদের জন্য সম্ভাব্য খর্ব করে দেওয়ার মতো এক আঘাত। এই শহরটি দামেস্ক এবং সিরিয়ার উপকুলীয় প্রদেশ লাতাকিয়া ও তারতাসের মাঝখানে অবস্থিত। তারতাস হচ্ছে সিরিযার নেতার সমর্থনের ঘাঁটি এবং সেখানেই রয়েছে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ নৌ ঘাঁটি।
সরকারপন্থি শাম এফএম জানিয়েছে যে সরকারি বাহিনী সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম নগরীর বাইরে তাদের অবস্থান গ্রহণ করেছে তবে আর কিছু বিস্তারিত জানায়নি। ব্রিটেন ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটারি ফর হিউমান রাইটস’এর প্রধান রামি আব্দুররাহমান বলেন সিরিয়ার সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা ওই শহর থেকে সরে গেছে এবং বলেছেন যে বিদ্রোহীরা শহরটির কিছু অংশে প্রবেশ করেছে।
হোমস দখল করা বিদ্রোহীদের জন্য একটি বড় রকমের বিজয়। তারা ইতোমধ্যেই আলেপ্পো ও হামা আর সেই সঙ্গে দক্ষিণের এক বিশাল এলাকা দখল করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন বিদ্রোহীদের হাতে হোমস চলে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে পরিস্থিতিটাই পাল্টে যাবে।
সিরিয়ার সেনাবাহিনী দেশের দক্ষিণের অনেকটাই ছেড়ে আসার পর পর্যবেক্ষক ও একজন বিদ্রোহী কমান্ডার জানিয়েছেন যে বিদ্রোহীরা দামেস্কের চার পাশে চলে এসেছে । সেনাবাহিনীর স্থান ত্যাগের কারণে অনেক প্রাদেশিক রাজধানীসহ অনেকখানি এলাকা বিরোধী যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।
গত সপ্তাহে বিরোধী এই গোষ্ঠী যতখানি এগিয়ে গেছে তা সাম্প্রতিক বছরগুলির মধ্যে ছিল সব চেয়ে বেশি এলাকা। এই গোষ্ঠীর উদ্ভব আল ক্বায়দা থেকে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ এটিকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
আসাদ সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করতে হায়াত তাহরির আল শাম বা এইচটিএস গোষ্ঠী সিরিয়ার সেনাবাহিনীর কাছ থেকে তেমন প্রতিরোধের মুখোমুখি হযনি।
দীর্ঘ কালের এই গৃহযুদ্ধে এই প্রথমবার ১৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর মধ্যে সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে মাত্র তিনটি : দামেস্ক,লাতাকিয়া ও তারতাস।
শনিবার সিরিয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত, গেইর পেডারসান “সুশৃঙ্খলভাবে রাজনৈতিক পরিবর্তন” নিশ্চিত করতে জেনেভায় জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন। কাতারে বার্ষিক দোহা ফোরামে ভাষণ দেওয়ার সময়ে তিনি বলেন সিরিয়ার পরিস্থিতি মিনিটে মিনিটে পাল্টাচ্ছে। আসাদের প্রধান আন্তর্জাতিক সমর্থক দেশ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লাভরভ বলেন তিনি “সিরিয়ার জনগণের জন্য দুঃখ বোধ করছেন”।
দামেস্কে লোকজন তাদের সরবরাহ জমিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। হাজার হাজার লোক দেশ ত্যাগের উদ্দেশে লেবাননের সঙ্গে সিরিয়িার সীমান্তের দিকে চলে গেছেন। সেখানকার একজন বাশিন্দা এপিকে জানান যে রাজধানীর বহু দোকান বন্ধ ছিল এবং যেগুলো এখনও খোলা রয়েছে সেখানে চিনির মতো প্রধান খাদ্যের ঘাটতি রয়েছে। কোন কোন দোকানে স্বাভাবিক দামের চেয়ে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি করা হচেছ।
প্রতিশোধের ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাসিন্দা বলেন, ‘পরিস্থিতি বড় অদ্ভূত। আমরা এতে অভ্যস্ত নই। লোকজন উদ্বগিন রয়েছেন যে ( দামেস্কে) লড়াই হবে, কী না।”
২০১৮ সালের পর এই প্রথম বিরোধী বাহিনী দামেস্কের বাইরে পৌঁছে গেছে। সেই সময়ে এক বছর ধরে অবরুদ্ধ থাকার পর সিরীয় বাহিনী ওই সব এলাকা আবার দখল করে নেয়। জাতিসংঘ বলছে যে সাবধানতা হিসেবে তারা অত্যাবশকীয় নন এমন কর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন।
আসাদের অবস্থান
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সামাজিক মাধ্যমের এই গুজবকে নাকচ করে দিয়েছে যে আসাদ দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। তারা বলছে তিনি দামেস্কে তার নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি তার মিত্রদের কাছ থেকে তেমন সাহায্য পাননি। রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে তার যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত। লেবাননের হেজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে এক বছর ব্যাপী যুদ্ধে দূর্বল হয়ে পড়েছে। এক সময়ে তারা আসাদের সৈন্যদের সহায়তায় হাজার হাজার যোদ্ধা পাঠিয়েছিল। ইরান দেখছে ইসরায়েলের বিমান হামলায় তার পক্ষের শক্তিগুলো দূর্বল হয়ে পড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প শনিবার সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন যে সিরিয়ায় সামরিক ভাবে সম্পৃক্ত হ্ওয়া যুক্তরাষ্ট্রের এড়ানো উচিত্।
পেডারসন বলেন ২০১৫ সালে গৃহীত জাতিসংঘের একটি প্রস্তাব নিয়ে জেনেভোয় আলোচনার একটি তারিখ পরে গোষণা করা হবে। ওই প্রস্তাবে সিরিয়ার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে।
শনিবার আরও পরে সৌদি আরব, রাশিয়া, মিশর, তুরস্ক ও ইরানসহ আটটি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পদস্থ কুটনীতিকরা এবং পেডারসনও দোহা শীর্ষ বৈঠকের অবকাশে সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। তবে তাত্ক্ষণিক ভাবে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
এ দিকে ব্রিটেনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস ‘এর প্রধান রামি আব্দুররাহমান, যিনি বিরোধীদের যুদ্ধে নজরদারি করছেন বলেন বিদ্রোহীরা দামেস্কের মাদামিয়াহ, জারামানা ও দারায়া উপকন্ঠে প্রবেশ করেছে। তিনি আরও বলেন তারা দামেস্কের আরেকটি উপশহর হারাস্তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।