হামাস ও ইসরায়েলের কর্মকর্তারা বলছেন গত মাসে কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীরা নিরাশ হয়ে আলোচনা বন্ধ করে দেওয়ার পর মিশরে আবার নতুন করে শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে।
হামাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা বাসেম নাঈম, দ্য এসোসিয়েটেড প্রেসকে বৃহস্পতিবার বলেন, লড়াই বন্ধ করার, গাজা থেকে পণবন্দিদের মুক্ত করানোর এবং ইসরায়েল থেকে ফিলিস্তিনিদের ছাড়িয়ে আনার প্রচেষ্টা সাম্প্রতিক দিনগুলিতে “আবার সক্রিয়” করা হয়েছে। আরেকটি সুত্র এপি’কে জানিয়েছে যে কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা মিশরে ফিরে এসেছেন।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট শুক্রবার জানায় যে মধ্যস্থতাকারীরা এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে গাজায় অস্ত্র বিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য “গুরুতর প্রচেষ্টা” চলছে। পোস্টে জানানো হয়েছে যে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সার মাল্টায় এক বৈঠকের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে বলেন যে ইসরায়েলের জন্য গাজায় পণবন্দিদের মুক্তি এবং এ জন্য তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতির একটা সুযোগ এসেছে বলে মনে করে।
বৃহস্পতিবার রাতে ইসরায়েলের মন্ত্রীসভার এক বৈঠকের পর, ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে বলে কাতারি ও মিশরীরা মনে করে যে ওই অঞ্চলে একের পর এক নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় হামাস “দ্রুত একটি আলোচনায় প্রবেশ করতে চায়, এমন কী তা যদি আংশিক চুক্তি হয় এবং ইসরায়েল যদি আগেই যুদ্ধ বন্ধ করার ঘোষণা নাও দেয়”।
প্রতিবেনটিতে বলা হয়েছে যে অস্ত্র বিরতি চুক্তির মধ্যে থাকবে নারী, শিশু ও আহত পণবন্দিদের মানবিক মুক্তি। ইসরায়েল তাদের দেশে আটক শত শত ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে , আগামি সপ্তাহের গোড়ার দিকেই নতুন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য একটি ঊর্ধ্বতন ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল কায়রোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন।
গোলান উপত্যকা
এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ শুক্রবার বলে তারা সিরিয়ায় ইসরায়েল- অধিকৃত গোলান মালভূমিতে তাদের বিমান ও স্থল বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করছে এবং তারা সকল পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত।
সামাজিক মাধ্যম এক্স এ তাদের সরকারি আকাউন্ট থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে তারা “ঘটনাগুলির দিকে লক্ষ্য রাখছে এবং আক্রমণ ও প্রতিরক্ষার যে কোন পরিস্থিতির জন্য তারা প্রস্তুত, ইসরায়েলের সীমান্তের কাছে কোন হুমকি মেনে নিবে না এবং ইসরায়েলের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যে কোন হুমকিকে নস্যাত্ করতে তারা কাজ করে যাবে”।
রয়টার্স’এর ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে শুক্রবার সীমান্ত জুড়ে সৈন্য ও গাড়ি অবস্থান করছে।
সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে আক্রমণ
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী শুক্রবার আরও জানায় যে সিরিয়া-লেবানন সীমান্তে হেজবুল্লাহর “ অস্ত্র চোরা-চালানের পথকে” লক্ষ্য করে তারা রাতে আক্রমণ চালায়। লেবানন ও সিরিয়ার সরকারি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে যে বিমান আক্রমণের কারণে আরিদা সীমান্ত পারাপারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগের সংঘাতের সময়ে বন্ধ সীমান্তটি খুলে দেয়ার পর আবার বন্ধ করা হয়।
এক বিবৃতিতে আইডিএফ বলে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী “সিরীয়- লেবাননী সীমান্তে সিরীয় সরকারের পারাপারের স্থানের কাছে, অস্ত্র চোরাচালানের পথ এবং সন্ত্রাসের অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে আঘাত হানে”। বিবৃতিতে আরিদা সীমান্তকে অন্যতম লক্ষ্য বস্তু হিসেবে চিহ্নিত করা একটি মানচিত্রও দেওয়া হয়।
হামাস নেতা নিহত
শুক্রবার আইডিএফ আরও জানায় যে তারা গাজায় হামাসের আকাশ ইউনিটের প্রধান নিদাল আল নাজারকে “নিশ্চিহ্ন” করে দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয় তাকে ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি যৌথ “ও নির্ভুল” অভিযানে শেষ করে দেওয়া হয়।
আইডিএফ বলেছে আল নাজার ছিলেন ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে বিমান অনুপ্রবেশের মূল হোতা এবং যুদ্ধের পুরোটা সময় জুড়ে গাজার মধ্যাঞ্চলে ইসরায়েল ও আইডিএফ ’এর বিরুদ্ধে আক্রমণের নেতৃত্বে সহযোগিতা করেছে এবং সৈন্যদের লক্ষ্য করে বিস্ফোরক ড্রোন ব্যবহার করেছে।
হামাস জঙ্গিরা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়ে ১২০০ লোককে হত্যা এবং প্রায় ২৫০ জনকে পণবন্দি করেছে। সেই ঘটনার পরণতিতে এই যুদ্ধ চলছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণে গাজায় প্রায় ৪৪,৫০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। তবে তাদের হিসেবে যোদ্ধা এবং অসামরিক লোকদের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অন্যান্য পশ্চিমি দেশগুলি হামাস ও হেজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বলে অভিহিত করে।
ভয়েস অফ আমেরিকার ইউরোশিয়া ডিভিশনের নাতাশা মোজগোভায়া এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন। কিছু তথ্য এপি ও রয়টার্স প্রদান করেছে।