অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

শেখ হাসিনার 'বিদ্বেষমূলক' বক্তব্য প্রচার নিষিদ্ধ করল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল


বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (ফাইল ছবি)

ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সব ধরনের 'বিদ্বেষমূলক' বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

একইসঙ্গে শেখ হাসিনা আগে যত 'বিদ্বেষমূলক' বক্তব্য দিয়েছেন তা সব মাধ্যম থেকে সরাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে দুই বিচারপতির ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।

এর আগে দেশ ছেড়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার 'বিদ্বেষমূলক' বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা হয় বলে বৃহস্পতিবার সকালে সাংবাদিকদের জানান ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আল নোমান।

পরে গাজী এম এইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, "ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এবং প্রসিকিউশনের অধীনে কোনো মামলার তদন্তকালে কোনো অভিযুক্ত এমন কোনো বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিতে পারবে না মর্মে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

এ মামলার একজন 'পলাতক অভিযুক্ত' শেখ হাসিনা বক্তব্য দিয়েছেন। সেসব বক্তব্যের মাধ্যমে সাক্ষীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হেট স্পিচ শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে অপরাধ। সেগুলো বন্ধে এবং অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে আছে সেসব হেট স্পিচ সরাতে নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।"

১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান হাইকোর্টের বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার। আর সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান হাইকোর্টের বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এর আগে চিফ প্রসিকিউটরসহ প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা নিয়োগ দেওয়া হয়।

এরপর 'জুলাই গণহত্যার' অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিসভার সদস্য, পুলিশ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতার কয়েকজন মন্ত্রিসভার সদস্য, পুলিশ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরও করা হয়। বর্তমানে শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

১৮ নভেম্বর 'জুলাই-অগাস্টের গণহত্যা'র ঘটনায় 'মানবতাবিরোধী অপরাধে'র অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত এক মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

তদন্ত শেষ করে ১৭ ডিসেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, আদালতে হাজির করা আনিসুল হকসহ ১৩ জনকে ট্রাইব্যুনালের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে আটক রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নিউইয়র্কে শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল বক্তৃতা

বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর প্রথমবারের মত এ সপ্তাহে নিউইয়র্কে একটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল বক্তৃতা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তৃতায় তিনি ইউনূস সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন।

বক্তৃতায় তিনি বলেন, "আজ আমার বিরুদ্ধে 'গণহত্যা'র অভিযোগ উঠেছে ৷ বাস্তবে ইউনূস সুকৌশলে 'গণহত্যা'র কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ৷...একটা মেটিকিউলাসলি ডিজাইন্ড পরিকল্পনার মাধ্যমে ছাত্র সমন্বয়কদের নিয়ে। তারাই মাস্টারমাইন্ড..."

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দাবী করে হাসিনা বলেন, "হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-কাউকে ছাড়বে না ৷...চার্চ, মন্দির, বৌদ্ধমন্দিরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে ৷ হিন্দুদের ইসকন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷"

৫ অগাস্ট সরকার পতনের দিন সম্পর্কে তিনি বলেন, "সশস্ত্র বিক্ষোভকারীদের গণভবনের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ৷ নিরাপত্তারক্ষীরা যদি গুলি চালাতে শুরু করতো, তাহলে বহু মানুষের মৃত্যু হতো৷ মাত্র ২৫-৩০ মিনিটের ব্যাপার ছিল ৷ আমাকে জোর করে বাংলাদেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে ৷ আমি নিরাপত্তারক্ষীদের বলেছিলাম, যাই হোক না কেন, গুলি চালাবেন না৷"

প্রায় এক ঘণ্টা দীর্ঘ এই ভাষণের বেশির ভাগ জুড়ে ছিল আওয়ামী লীগের শাসনামলে অর্থনীতিক উন্নতির কথা। হাসিনা তাঁর সমর্থকদের আহ্বান জানান যাতে তারা তাদের “সাফল্যের” কথা বিশেষ করে যুব সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দেয়।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

তারেক রহমানের বক্তব্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা বাতিল

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, এবছরের ২২ অগাস্ট তারেক রহমানের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। তার আইনজীবীরা জানান, ফলে গণমাধ্যমে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে বাধা নেই।

২০১৫ সালে ৬ জানুয়ারি দায়ের করা এক রিটের প্রেক্ষিতে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসে যুক্তরাজ্যে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য প্রকাশ, প্রচার, সম্প্রচার, প্রচারে হাই কোর্ট নিষেধাজ্ঞা দেয়।

রিটে বলা হয়েছিল, তারেক রহমান একজন ফেরারি আসামি হয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করে ও বেআইনিভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন, তার বক্তব্য প্রচারযোগ্য নয়।

XS
SM
MD
LG