জাতিসংঘ বলছে আফগানিস্তানে তালিবানের শাসনামলে সাংবাদিকরা “ সেন্সরশীপ ও কঠোর বিধিনিষেধের” পরিবেশের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন।
২০২১ সালের ১৫ আগস্ট তালিবানের ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকে এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর অবধি তালিবান সাংবাদিকদের ২৫৬ বার আটক করেছে এবং নিপীড়ন ও দূর্ব্যবহারের ১৩০ টি ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে মঙ্গলবার আফগানিস্তানে জাতিসংঘ সহযোগিতা মিশন বা ইউএনএএমএ’র প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
আফগানিস্তান জার্নালিস্ট সাপোর্ট অর্গানাইজেশানের ফ্রেশতা হিম্মাতির মতে ২০২১ সাল থেকে সাংবাদিকরা যে “ খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তার, নিপীড়ন ও সহিংসতার” সম্মুখীন হয়েছেন, এই প্রতিবেদনে সে সব কথা নথিবদ্ধ রয়েছে
তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ তারা সেন্সরশীপ ও বিধিনিষেধের কঠোর চাপের মধ্যে কাজ করছেন”।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে যে তালিবান নেতৃত্বাধীন পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলছে যে প্রতিবেদনে দেওয়া সংখ্যাগুলি “অতিরঞ্জিত” এবং সাংবাদিকদের শুধুমাত্র আইন লংঘন করার জন্য আটক করা হয়।
রয়টার্স জানিয়েছে মন্ত্রণালয় উদাহরণস্বরূপ বলেছে যে সরকারের বদনাম করা, মিথ্যা কিংবা ভিত্তিহীন সংবাদ এবং নিয়মের বাইরে গিয়ে মিডিয়কে খবর দেওয়ার মতো অপরাধ শাস্তিযোগ্য হয়েছে।
ইউএনএএমএর প্রতিবেদনে দেখা গেছে আফগানিস্তানে সাংবাদিক কিংবা মিডিয়িাকর্মীরা “ কি নিয়ে তারা খবর দিতে পারেন এবং কি নিয়ে পারেন না সে সম্পর্কে অস্পষ্ট নিয়মের” মুখোমুখি হতে হয় প্রায়শই তাঁদের।
ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে কথা বলেছেন যে সব বিশ্লেষক তাঁরা বলেছেন যে এই প্রতিবেদনে আফগানিস্তানে সংবাদমাধমকে দমন করা যা তালিবান শাসনের প্রধান দিক তারই প্রতিফলন ঘটেছে।
রিপোটার্স উইদাউট বর্ডারস’এর দক্ষিণ এশিয়া প্রধান সিলিয়া মারসিয়ের এক ইমেইলে ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানিয়েছেন, “ এই ধরণের গ্রেপ্তার বহুগুণে বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্য হচ্ছে গোটা মিডিয়া সমাজে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া এবং নিজে থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপকে প্ররোচিত করা।
তালিবান পুনরায় ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তারা ইসলামিক আইনের কঠোর ব্যখ্যা আরোপ করেছে। তাদের প্রশাসনকে কোন বিদেশি সরকারই স্বীকৃতি দেয়নি। তাদের ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ আফগান মিডিয় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বলে মিডিয়া নজরদারি গোষ্ঠী রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার জানিয়েছে।
তাদের ক্ষমতাগ্রহণের পর বিশাল সংখ্যক সাংবাদিক সে দেশ ত্যাগ করেন। কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট’ বা সিপিজে’এর বেহ লি ই বলছেন যারা সেখানে থেকে গিয়েছে তারা সরকারের লক্ষ্যবস্তু হয়ে পড়েছে।
তালিবান বাহিনী যে সাংবাদিকদের “নৃশংসতার সঙ্গে প্রহার ও নিপীড়ন করেছে” সিপিজে তা নথিবদ্ধ করে। পাল্টা ব্যবস্থার ভয়ে প্রায়ই সাংবাদিকরা এবং তাদের স্বজনরা আটক হওয়ার ব্যাপারে চুপ থেকেছেন।
আফগানিস্তান জার্নালিস্ট সাপোর্ট অর্গানাইজেশানের হিম্মাতি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন এই সব বিধিনিষেধ বিশেষত আফগানিস্তানের নারী সাংবাদিকদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তালিবানের ক্ষমতা নেওয়ার পর আর এফ এর উপাত্ত অনুয়ায়ী ১০ জন নারী সাংবাদিকের মধ্যে ৮ জনই কাজ করা বন্ধ করে দেন।
ইউএনএএমএ’র প্রতিবেদনের জবাবে তালিবানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেন মুখ ঢেকে রাখা এবং পুরুষদের থেকে পৃথক হয়ে কাজ করা এ রকম শর্ত সাপেক্ষে নারীদের কাজ করতে কোন বাধা নেই।
নজরদারী সংগঠনগুলি আফগান কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যে দেশের মিডিয়া আইনের প্রতি সম্মান রেখেই তারা যেন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বজায় রাখেন। এই আইনটি একদশক আগে পাশ করা হয়। আফগানিস্তান জার্নালিস্ট সেন্টার বলছে সাংবাদিকদের সুরক্ষার লক্ষ্য নিয়ে এই আইনে দেশে মুক্ত ভাবে মতামত প্রকাশ করার রূপরেখা তুলে ধরে ।
ইউএনএএমএ’র প্রতিবেদনে মিডিয়ার অবস্থা উন্নত করার জন্য তালিবানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সূচকে ১৮০ ‘র মধ্যে আফগানিস্তানের স্থান হচ্ছে ১৭৮তম। ২০২১ সালে তালিবানের ক্ষমতা দখলের আগে আফগানিস্তানের স্থান ছিল ১২২তম।
ভয়েস অফ আমেরিকার আফগান বিভাগের সাহার আজমি এই প্রতিবেদনে তাঁর অবদান রেখেছেন।