জাতিসংঘের কপ-২৯ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে মানবসভ্যতার লড়াইয়ের উপকরণ হিসেবে বছরে ৩০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বিনিয়োগের লক্ষ্য অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রত্যাঘাত মোকাবেলা করতে সহায়তা করা।
আজেরবাইজানের রাজধানী বাকু, যে শহরে প্রথমবারের মতো তেল শিল্প গড়ে উঠেছিল, সেখানে প্রচুর দরকষাকষির পর সংশ্লিষ্টরা এই সংখ্যাটিতে একমত হয়।
উষ্ণতা বৃদ্ধির মূল কারণ কয়লা, তেল ও গ্যাসের মতো জ্বালানির ব্যবহার থেকে সরে আসার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা, ভবিষ্যতের উষ্ণায়নের সঙ্গে মানিয়ে চলা এবং চরম বৈরি আবহাওয়ার কারণে সৃষ্ট ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এই ৩০ হাজার কোটি ডলার দেওয়া হবে।
উন্নয়নশীল দেশগুলো এক লাখ তিরিশ হাজার কোটি ডলার চেয়েছিল। তবে তারা যে পরিমাণ অর্থ পাচ্ছে, তা ২০০৯ সালের চুক্তি অনুযায়ী প্রাপ্ত বছরে ১০ হাজার কোটি ডলারের চেয়ে তিনগুণ।
কয়েকজন প্রতিনিধি বলছেন, এই চুক্তি সঠিক পথে আগাচ্ছে। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে অর্থের প্রবাহ আরও বাড়বে।
এ ধরনের বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সকল পক্ষ কখনোই একমত হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে, অবহেলিত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
ভারতের প্রতিবাদ
কোনো দেশকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই কপ২৯ এর সভাপতি মুখতার বাবায়েভ হাতুড়ি পিটিয়ে এই চুক্তি গৃহীত বলে ঘোষণা দেন।
তারপর যখন কথা বলার সুযোগ পান, তখন তারা বাবায়েভের প্রতি চরম নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং দাবি করেন, বিষয়টি তাদের জন্য অন্যায্য হয়েছে এবং চুক্তিতে উল্লেখিত অর্থ যথেষ্ঠ নয়। বস্তুত, তাদের দাবী, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলো অনেক বেশি কার্পণ্য দেখিয়েছে।
ভারতের প্রতিনিধি চাঁদনী রায়না বলেন, “এটা খুবই সামান্য অর্থ”। তিনি বারবার উল্লেখ করেন, “আমি দুঃখিত, আমরা এটা মেনে নিতে পারছি না”। এ সময় অন্যান্যরা চিৎকার করে তাকে উৎসাহ দেন।
রায়না এপিকে জানান, তিনি জাতিসংঘের প্রক্রিয়ার ওপর ভরসা হারিয়েছেন।
আরও বেশ কয়েকটি দেশ ভারতের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে তাদের নিজ নিজ বক্তব্য পেশ করে। নাইজেরিয়ার জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতীয় কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিরুকা মাদুয়েকে এই চুক্তিকে অপমানজনক ও প্রহসনমূলক বলে অভিহিত করেন।
ইউরোপের আশাবাদ
তবে কোনো কোনো পক্ষ এই চুক্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপকে হেকস্ত্রা এই চুক্তিকে জলবায়ু অর্থায়নের নতুন যুগের সূচনা বলে অভিহিত করেন।
তিনি দাবি করেন, যারা সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় আছে, তাদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী হবে। তবে প্লেনারি হলে উপস্থিত অধিকারকর্মীরা হেকস্ত্রার বক্তব্যের সময় কাশি দিয়ে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা চালান।
আয়ারল্যান্ডের পরিবেশমন্ত্রী ইমন রায়ান এই চুক্তিতে “বড় ধরনের স্বস্তি” বলে বর্ণনা করেন।
“তিরিশ হাজার কোটি ডলারের চুক্তি যথেষ্ঠ নয়। তবে এটি একটি নিরাপদ ও আরও বৈষম্যহীন ভবিষ্যতের পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি এককালীন অর্থায়ন," ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইন্সটিটিউটের প্রেসিডেন্ট অ্যানি দাসগুপ্তা বলেন।
“এই চুক্তি একটি ভালো সূচনা। এখন বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি উৎস থেকে আরও জলবায়ু অর্থায়ন পাওয়ার দৌড় শুরু হয়েছে। যার ফলে, সমগ্র আর্থিক প্রক্রিয়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর রূপান্তরে ভূমিকা রাখতে পারে,” তিনি বলেন।
যদিও প্রত্যাশিত এক লাখ তিরিশ হাজার কোটি ডলার থেকে এটি অনেকটাই দূরে, তবুও, চুক্তির আগের খসড়ায় উল্লেখিত এবং আলোচনার টেবিলে থাকা ২৫০ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে এটা অনেক বেশি।
এই খসড়া বেশ কয়েকটি দেশকে রাগান্বিত করেছিল এবং বেশ খানিকটা সময় তারা হতাশ ছিল। এতে সম্মেলনের শেষ কয়েক ঘণ্টা সব কিছু স্থবির হয়ে পড়ে।