জার্মান সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন চান্সালার ওলাফ শোলজ শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি ফোনালাপে দাবি করেছেন যে তিনি যেন ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নেন এবং রাশিয়া যেন একটি ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তির জন্য তার ইচ্ছার প্রকাশ ঘটায়।
জার্মান সরকারের মুখপাত্র স্টিফেন হেবেস্ট্রেইটের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে শোলজ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার এই আগ্রাসী যুদ্ধের নিন্দা জানিয়েছেন এবং পুতিনকে এই যুদ্ধ বন্ধ করার ও তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করার দাবি জানান।
এই বিবৃতিতে বলা হয়েছে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যতদিন প্রয়োজন ইউক্রেনের লড়াইকে সমর্থন করার অবিচল প্রত্যয়ের কথা চান্সালার আবারও সুনিশ্চিত করেছেন। ওই সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে পুতিনের উত্তর অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
মুখপাত্রটি বলেন রাশিয়ার নেতাকে ফোন করার আগে শোলজ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকির সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে আবার তাঁকে ফোন করার ইচ্ছার কথা জানান।
মিডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ফোনালাপটি প্রায় এক ঘন্টা ধরে চলে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে ক্রেমলিন এই ফোনের কথা নিশ্চিত করেছে এবং তারা বলেছে যে বার্লিনের অনুরোধে এই ফোনালাপটি হয়। বার্তা সংস্থাটি জানিয়েছে যে ক্রেমলিন বলে পুতিন শোলজকে বলেন ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করার ব্যাপারে যে কোন চুক্তিতে রাশিয়ার নিরাপত্তা স্বার্থের বিষয়টিকে আমলে নিতে হবে এবং তাতে “নতুন আঞ্চলিক বাস্তবতার” প্রতিফলন থাকতে হবে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দ্যমিত্রি পেসকভ বলেন গভীর মতানৈক্য সত্ত্বেও, দুই নেতার মধ্যে যে ফোনালাপ হয়েছে সেটাই “খুব ইতিবাচক” বিষয়।
জেলেন্সকি অবশ্য ওই ফোনালাপে খুশি হননি। শুক্রবার তাঁর ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এক ভিডিও ভাষণে জেলেন্সকি বলেন যে তাঁর মতে এই ফোনালাপ ছিল “ প্যান্ডোরার বাক্স”।
জেলেন্সকি বলেন, “ঠিক এটাই পুতিন চাইছিলেন দীর্ঘ দিন ধরে। এটা তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে তার এই বিচ্ছিন্নতা, রাশিয়ার এই বিচ্ছিন্নতা ভাঙতে হবে এবং আপোষ আলোচনায় সম্পৃক্ত হতে হবে, সাধারণ ধরণের আলোচনা যা আমাদের কোথাও নিয়ে যাবে না”।
তিনি বলেন পুতিন কয়েক দশক ধরেই ঠিক এটাই করে আসছেন। “ এর ফলে রাশিয়াকে তার নীতিতে কোন পরিবর্তন আনতে হয়নি, বস্তুসম্মত কিছু করতে হয়নি, এবং শেষ পর্যন্ত এটি এই যুদ্ধের দিকে আমাদের নিয়ে গেল”।
জেলেন্সকি বলেন ইউক্রেন বোঝে পুতিনের ব্যাপারে কি ভাবে কি করা যায় এবং সেই ভাবে আলোচনা পরিচালনা করতে চায়।
শোলজ’এর জোট সরকারের পতনের প্রায় এক সপ্তাহ পরে তিনি এই ফোনটি করলেন, তিনি আগামি বছরের প্রথম দিকে নতুন নির্বাচনের সম্মুখীন হবেন।
শুক্রবার হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান রাষ্ট্রীয় বেতারে এক সাক্ষাত্কারে বলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচিত্ হবে রাশিয়া বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা নতুবা অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়বে।
পুতিনের একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র ওরবান এক সাক্ষাত্কারে বলেন রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিষয়টি ব্রাসেলস ‘এ ই ইউ নেতাদের পর্যালোচনা করে দেখা উচিত্। তিনি বলেন এই নিষেধাজ্ঞাগুলি ব্যর্থ হয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞা থাকলে জ্বালানির মূল্য কমবে না এবং ইউরোপীয় অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।
ওরবান নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে “অস্ত্রের ব্যাপারে আমাদের কমরেড” এবং “আমাদের সহযোগী শান্তির যোদ্ধা” বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন তাঁর বিজয় মানে ব্রাসেলস’এ মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে।
ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থনের প্রেক্ষাপটে ওরবান বলেন তাদের এখন “শান্তির পক্ষে” আসতে হবে।
এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এপি, রয়টার্স ও এ এফপি থেকে নেওয়া হয়েছে।