মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম সোমবার জানিয়েছে, সে দেশের জান্তা নেতা মিন আউং হ্লাইং আঞ্চলিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে চলতি সপ্তাহে চীন সফর করবেন। ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর প্রভাবশালী প্রতিবেশী দেশে এটাই তার প্রথম সফর।
অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে। এমনকি চীনের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতেও পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়। এর কারণ, সশস্ত্র প্রতিরোধ বাহিনী ও প্রতিষ্ঠিত সংখ্যালঘু জনজাতির মিলিশিয়া সামরিক সরকারের থেকে বিশাল ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
এমআরটিভি বলেছে, বৃহত্তর মেকং উপ-অঞ্চল (গ্রেটার মেকং সাব-রিজিয়ন) এবং আয়েয়াদি-চাও ফ্রায়া-মেকং অর্থনৈতিক সমন্বয় কৌশল শীর্ষক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন মিন আউং হ্লাইং। ৬ ও ৭ নভেম্বরে কুমিং শহরে কম্বোডিয়া, লাওস ও ভিয়েতনামের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি।
জান্তা প্রধানের প্রসঙ্গে এই সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, “চীনের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ ও আলোচনা করবেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে তিনি কাজ করবেন।”
গত অক্টোবরে অতর্কিত হামলা পর থেকে জান্তা-বিরোধী যোদ্ধাদের দ্রুত সাফল্যের মুখে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অবক্ষয় চীনকে উদ্বিগ্ন করেছে। বেইজিং সীমান্তের বিভিন্ন অংশ সিল করে দিয়েছে ও বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলিতে প্রধান আমদানিগুলি স্থগিত করেছে।
মিয়ানমারে কৌশলগত অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে চীনের; এর মধ্যে রয়েছে এই দেশের মধ্য দিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ তেল ও গ্যাসের পাইপলাইন এবং বঙ্গোপসাগরে পরিকল্পিত গভীর-সমুদ্রের বন্দর।
স্বাধীন বিশ্লেষক ডেভিড ম্যাথিসন, যিনি মিয়ানমার বিষয়ে নজর রাখেন, তিনি বলেছেন, “চীনের বাড়তি সমর্থন বা চাপ—যা-ই নিতে তিনি সেখানে যাক না কেন, এটা জনগণের জন্য ভাল নয়।”
পরের বছর নির্বাচন আয়োজনের পথ প্রশস্ত করতে গত মাসে দেশজোড়া আদমসুমারি শুরু করেছে জান্তা। যদিও দেশের বিশাল অংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে নেই এবং কয়েক ডজন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এই আদমসুমারি ও প্রস্তাবিত নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরি সাহায্য ও সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বেইজিং। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ওয়াই এবং মিন আউং হ্লাইং সাক্ষাৎ করার পর আগস্ট মাসে মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা এমনটা জানিয়েছে।
মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে এই বৈঠককে কিছু সমালোচক জান্তার প্রতি বেইজিং-এর সমর্থন হিসেবে দেখছেন এবং যুদ্ধদীর্ণ এই দেশের সমাজকর্মীরা চীনের অবস্থান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে সরব হয়েছেন; তারা বলছেন, গণতন্ত্রের জন্য তাদের লড়াইয়ে এটা একটা বাধা।