জাতিসংঘের মহাসচিব শুক্রবার সুদানের আল জাজিরা রাজ্যে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স দ্বারা সাম্প্রতিক হামলার তীব্র নিন্দা করেন এবং যুদ্ধ শেষ করার জন্য আবার আহ্বান করেন।
মুখপাত্র স্টেফান দুজারিচ সাংবাদিকদের বলেন, "মহাসচিব বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিকের হত্যা, আটক বা বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঘটনায় এবং নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা, বাড়িঘর লুটপাট, বাজার লুট করা এবং খামার পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ।"
"এই ধরনের কাজ আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং মানবাধিকার আইনের গুরুতর লঙ্ঘন হতে পারে। এই ধরনের গুরুতর লঙ্ঘনের জন্য অপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।"
২০ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) আল জাজিরাহ রাজ্যের পূর্বাঞ্চল জুড়ে গ্রামগুলোতে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে। এর ফলে ১২০ জনেরও বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা শুক্রবার বলে, গত সপ্তাহে ১,৩৫,০০০ জনেরও বেশি মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই গেদারেফ এবং কাসালা রাজ্যে গিয়েছে।
আরএসএফ প্রায় ১৯ মাস ধরে সুদানি সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) এর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। তাদের নেতারা একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং তা একটি ক্ষমতার সংগ্রামে পরিণত হয়, যা জাতিকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে গিয়েছে।
দুজারিচ বলেন, জাতিসংঘের প্রধান উদ্বিগ্ন যে মানবিক পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে এবং "সুদানে সংকটে থাকা সকল বেসামরিক নাগরিকদের সাহায্য করার জন্য নিরাপদ, দ্রুত এবং নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা" নিশ্চিত করতে তিনি সকল পক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং সুদানের আনুমানিক ২ কোটি ৫০ লক্ষ জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষ খাদ্য নিরাপত্তার সংকট স্তরের কাছাকাছি পৌঁছে হিমশিম খাচ্ছে। । সুদানের দারফুর অঞ্চলের কিছু অংশে আগস্টে দুর্ভিক্ষ হবার কথা নিশ্চিত ছিল । সুদানের অন্তত আরও ১৪টি এলাকার সামনের মাসগুলিতে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে পড়ার আশংকা রয়েছে । এদিকে কলেরাসহ নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
দুজারিচ বলেন, "মহাসচিব সুদানের বেসামরিক নাগরিকদের আরও ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে যুদ্ধবিরতির জন্যে নতুন করে আহ্বান জানিয়েছেন ।"
নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপ
যুদ্ধ এবং দেশের কিছু অংশে প্রবেশাধিকারের অভাবের কারণে সুদানের নাগরিকের কাছে ধীর গতিতে সাহায্য পৌঁছাচ্ছে।
আগস্ট মাসে সরকার চাদ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত চলাচলের পথ পুনরায় চালু করে। আরএসএফ এই সীমান্ত অস্ত্র এবং অন্যান্য যুদ্ধ সামগ্রী পাচারের জন্য ব্যবহার করছে এই আশঙ্কায় তারা এটি বন্ধ রেখেছিল। আড্রে ক্রসিংটি প্রাথমিক তিন মাসের জন্য পুনরায় চালু করা হয়েছে, যার মেয়াদ শেষ হবে ১৬ নভেম্বর। মানবিক কর্মীরা ও কূটনীতিকরা এই সীমান্ত পথটি স্থায়ীভাবে পুনরায় চালু করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্রিটেন শুক্রবার পালাক্রমে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্ব গ্রহণ করে এবং রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাজ্যের অগ্রাধিকার হচ্ছে মানবিক প্রয়োজনে সাড়া দেওয়া ।
সোমবার সুদানের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত আল-হারিস ইদ্রিস আল-হারিস মোহাম্মদ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের বলেন, তার সরকার মানবিক সহায়তা প্রবেশের জন্য আদ্রে এবং সাতটি বিমানবন্দর ছাড়াও নয়টি প্রবেশ পথ খুলে দেয়। তবে তিনি সতর্ক করেন যে তার সরকারকে প্রতি তিন মাস অন্তর নিরাপত্তা পর্যালোচনা করতে হবে এবং আদ্রে খোলা রাখার নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনা করতে হবে।
মোহাম্মদ বলেন, "আদ্রে সীমান্ত ক্রসিং সত্যিই জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।"
ব্রিটেনের উডওয়ার্ড বলেন, তার প্রতিনিধি দল বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির বিষয়ে নজর দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের জাতিসংঘ ও আফ্রিকা বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড কলিন্স অফ হাইবারির সভাপতিত্বে ১২ নভেম্বর সুদানে একটি বৈঠক আহ্বান করবে।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরে, এসএএফ এবং আরএসএফ সৌদি আরবে সুদানের বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং তাদের জন্য মানবিক সহায়তা সহজতর করার জন্য আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতাগুলি পুনঃনিশ্চিত করে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে। এর মধ্যে বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি এড়াতে এবং কমানোর জন্য সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও উভয় পক্ষই তা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।