গত সপ্তাহে ইরানের শীর্ষ নেতা ইসরায়েলের হামলার শাস্তিমূলক জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করার পরে শনিবার ভোরে মধ্য ইসরায়েলের একটি শহরে একটি হামলায় কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন।
মধ্য ইসরায়েল জুড়ে বিমান হামলার সতর্ক ধ্বনি বেজে উঠার পর ভোররাতে তিরায় এই হামলা করা হয়। এটি ছিল দিনের শুরুতে লেবানন থেকে নিক্ষিপ্ত বেশ কয়েকটি হামলার মধ্যে একটি । বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিহত করা হয়, আর কিছু জনবসতিহীন এলাকায় গিয়ে পড়ে।
ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জরুরি পরিষেবা বলে,ইসরায়েলের আরব প্রধান শহর তিরাতে একটি ভবনে সরাসরি হামলায় ১১ জন লোক গোলার টুকরা এবং কাঁচের খন্ড দ্বারা আহত হয়। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা মোটামুটি আর বাকিরা সামান্য আঘাত পেয়েছে।
ফুটেজে দেখা যায়, তিনতলা ভবনের ছাদ ও উপরের তলায় এবং নিচের গাড়িগুলোর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে।
লেবাননের ইরান সমর্থিত হেজবুল্লাহ গোষ্ঠী তেল আবিবের প্রান্তে গ্লিলোটে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ইউনিট ৮২০০ ঘাঁটির দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার এবং বিস্ফোরক ড্রোন দিয়ে মধ্য ইসরায়েলের পালমাচিম বিমান ঘাঁটিতে হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা বলে, তারা “লক্ষ্যবস্তুতে সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত করেছে।"
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী তাদের কোনও ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু বা তাতে আঘাত করা হয়েছে এমন খবর নিশ্চিত করেনি।
হেজবুল্লাহ বলে, গ্লিলোটে শনিবার ভোরের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি ইসরায়েল যে "গণহত্যা" চালাচ্ছে তার প্রতিশোধ হিসেবে করা হয়েছে। এই দাবিটি সম্ভবত তিরায় আঘাতের সাথে সম্পর্কিত ছিল, যা গ্লিলোট থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
হেজবুল্লাহ আরও জানিয়েছে যে তাদের যোদ্ধারা ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের ডালটন, ইয়েসুদ হামা’আলা এবং বার ইয়োহাই শহরে রকেট হামলা চালিয়েছে।
ইরান আরও হামলার হুমকি দিয়েছে
শনিবার ভোরের হামলাটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও গুরুতর আঘাতের পূর্বাভাস হতে পারে।
ইরানের শীর্ষ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি শনিবার হুমকি দিয়ে বলেন, ইরান এবং তার মিত্রদের উপর হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোর জবাব দেওয়া হবে। ২৬ অক্টোবর ইসরায়েল ইরানের সামরিক ঘাঁটি এবং অন্যান্য স্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলার পর তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে খামেনি বলেন, “শত্রুরা, ইসরায়েলি শাসক হোক বা যুক্তরাষ্ট্র, নিশ্চিতভাবেই ইরান এবং ইরানি জাতি ও প্রতিরোধ বাহিনীর সাথে যা কিছু করছে, তার জন্য একটি বিধ্বংসী প্রতিক্রিয়া পাবে।”
ইরানের আরও একটি হামলা বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যকে একটি বিস্তৃত সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে। ইরান ইতোমধ্যে এই বছরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দুটি সরাসরি হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যে গাজা ভূখণ্ডে ইরান সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী হামাস এবং লেবাননের হেজবুল্লাহর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
ইসরায়েল গাজায় হামাসের বাকি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান জোরদার করেছে। ফলে সেখানে বসবাসকারী বেসামরিক লোকজনের মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে, তারা অবশেষে শনিবার তাদের পোলিও টিকাদান অভিযান পুনরায় শুরু করার পরিকল্পনা করেছে, তবে শুধুমাত্র গাজা শহরেই তা করা হবে। কারণ ইসরায়েল তাদের অবরোধ কঠোর করার ফলে আরও উত্তরের শহরগুলিতে প্রবেশ দুর্গম হয়ে পড়েছে৷
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে হামলার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধে ৪৩,০০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ৭ অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে প্রায় ১২০০ জনকে হত্যা করে এবং গাজায় প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। হামাস পরিচালিত গাজায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বেসামরিক ও যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করেন না, তবে বলেন যে এ অঞ্চলে নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু।