বাইডেন প্রশাসন বলছে একজন দ্বৈত নাগরিক ইরানি-আমেরিকানকে ইরান যে সম্প্রতি আটক করেছে সে বিষয়টি তারা দেখছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে বিরল এক বন্দি বিনিময়ের পর এই ব্যক্তি হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক মাত্র নাগরিক যাকে ওই ইসলামিক প্রজাতন্ত্র রাষ্ট্রটি কারাদন্ড দিয়েছে।
গত সপ্তাহে ভয়েস অফ আমেরিকার এক অনুসন্ধানের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তারা “এই খবর সম্পর্কে অবগত আছেন যে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের এক যৌথ নাগরিককে ইরানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে”।
এই সংবাদটি ভয়েস অফ আমেরিকার একটি সহযোগী নেটওয়ার্ক রেডিও ফার্দার একজন সাবেক সাংবাদিক রেজা ওয়ালিজাদেহ সম্পর্কে যিনি ২০২২ সালে ওই ফার্সি ভাষার নেটওয়ার্ক পরিত্যাগ করেন। আগস্ট মাসে এক্স’ এ দেয়া তার সর্বশেষ পোস্ট অনুযায়ী ১৪ বছর পশ্চিমে থাকার পর তিনি তার পরিবারের সঙ্গে মিলিত হতে ফেব্রুয়ারি মাসে তেহরান চলে যান।
রেডিও ফার্দা ও পাশ্চাত্যের অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমকে ইরান বৈরিপক্ষের প্রতিষ্ঠান বলে মনে করে কারণ তারা সে দেশের কর্তৃত্ববাদী ইসলামি শাসকদের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ ও ভিন্নমতের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র বলেন , “ আমরা এই ব্যাপার সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য আমাদের সুইস অংশীজনের সঙ্গে কাজ করছি কারণ তারা ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষা শক্তি হিসেবে কাজ করে”।
মুখপাত্রটি বলেন, “ইরান অন্যায় ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের নিয়মিতই কারাদন্ড দেয়”।
ইরানের ভেতরের তথ্য জানেন এমন একটি সুত্র ভয়েস অফ আমেরিকার ফার্সি বিভাগকে বলেন যে ওয়ালিজাদেহকে বিদেশি ফার্সি গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই সুত্রটি তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছে যেহেতু পাশ্চাত্য সংবাদ মাধ্যমের জন্য যারা প্রকাশ্যে মন্তব্য করেন সেই সব ব্যক্তি বার বার ইরানের হয়রানির সম্মুখীন হন।
ইরান-ভিত্তিক মানবাধিকার গোষ্ঠী, হিউমান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস ইন ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমের অধিকার গোষ্ঠী কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট মধ্য অক্টোবরে জানায় যে ওয়ালিজাদেহকে তেহরানের এভিন কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে এবং তাঁর গ্রেপ্তারের পর থেকে তাঁকে কোন আইনজীবির নাগাল পেতে দেয়া হচ্ছে না। এই প্রতিবেদনে দু’টি সুত্রের কথা উল্লেখ করা হয়: একটি সুত্র হচ্ছে ওয়াজিদেহ’র পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠজনেরা আর অন্যটি হচ্ছে যারা এর আগে ওয়ালিজাদেহ’র সঙ্গে কাজ করেছেন।
ইরানের জাতিসংঘ মিশন ওয়ালিজাদেহর ব্যাপারে গত সপ্তাহে ভয়েস অফ আমেরিকার মন্তব্য চেয়ে অনুরোধ পাবার কথা স্বীকার করেছে কিন্তু কোন জবাব দেয়নি।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক এইচআরএআইচ’এর উপ-পরিচালক স্কাইলার টমসন ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া এক বার্তায় বলেন যে পররাষ্ট্র দপ্তরকে “ ওয়ালিজাদেহর আটক থাকার বিষয়টি তদন্তের জন্য সকল প্রাপ্যসুত্র ব্যবহার করতে হবে এবং অবিলম্বে ও বিনা বাধায় তাকে আইনজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে”।
আগস্ট মাসে তাঁর সর্বশেষে এক্স পোস্টে ওয়ালিজাদেহ লিখেছিলেন যে ইরানের শীর্ষ সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা শাখা ইসলামিক রিভ্যুলিউশানারি গার্ডের সঙ্গে অর্ধ-সমাপ্ত আলোচনার পর তিনি ফেব্রুয়ারি মাসে ইরানে ফিরে যান । তিনি বলেন তিনি স্বেচ্ছায় ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নেন যদিও তিনি ইরানের ইসলামিক রিভ্যুলিউশানারি গার্ডের কাছ থেকে এমন কোন লিখিত বা মৌখিক আশ্বাস পাননি যে তার এই সফরে কোন রকম বাধা দেয়া হবে না।
ফেব্রুয়ারি মাসে ইরানে পৌঁছে ওয়ালিজাদেহ’র আরেকটি এক্স পোস্টে বলেন ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা তার পরিবারকে ডেকে চাপ দিয়েছে যাতে তিনি ফিরে যান।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বিদেশে বসবাসরত ইরানিদের বোঝাতে চেয়েছেন যে দেশে ফিরলে তাদের ভয় করার কিছু নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ইউনাইটেড আগেইনস্ট নিউক্লিয়ার ইরানের পলিসি ডিরেক্টার জেসন ব্রডস্কি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন যে ওয়ালিজাদেহর গ্রেপ্তার দ্বৈত নাগরিকদের জন্য একটি সতর্ক বার্তা যে তেহরানের আশ্বস্তিকরণে বিশ্বাস করা যায় না।
ব্রডস্কি বলেন, “ অতীতে অনেক বছর ধরেই এ রকম ঘটনা ঘটেছে যে ইরানে সরকারের একটি দপ্তর সেখানে যেতে বলছে আবার অন্য একটি দপ্তর এই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে জিম্মি করে রাখছে”।
পাশ্চাত্য দেশগুলি যেটিকে ভুয়া নিরাপত্তা বিষয়ক অভিযোগ বলে উল্লেখ করেছে তেমন অভিযোগে ইরানে ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল অবধি ইরানে বন্দি অস্ট্রেলিয়ার একজন রাষ্ট্র বিজ্ঞানি কাইলি মুর-গিলবার্ট বলেন, “ মনে হচ্ছে ওয়ালিজাদেহকে অন্যায় ভাবে আটক করা হয়েছে”।
ভয়েস অফ আমেরিকাকে পাঠানো এক ইমেইলে মুর-গিলবার্ট লেখেন ভালিজাদেহ’র সাংবাদিকতা , “তাঁর সম্পর্কে আইআরজিসিকে নিশ্চিভাবেই আগ্রহী করে তুলবে”।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিককে অন্যায় ভাবে আটক করার অর্থ হচ্ছে পণবন্দি বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত রজার কার্সটেনস এই বন্দির মুক্তির জন্য বেসরকারি প্রতষ্ঠিান এবঙ সরকারি জোটের সঙ্গে কাজ করতে অনুমোদন প্রাপ্ত।