অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

আ.লীগের নির্বাচনী জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন


জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন। ৩১ অক্টোবর, ২০২৪।
জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন। ৩১ অক্টোবর, ২০২৪।

ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় অবস্থিত জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে 'ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা'র ব্যানারে একদল মিছিলকারী।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৮ টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর করছে শতাধিক লোক। তারা দলটির কার্যালয়ের সামনে থাকা জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিকৃতি ভাঙচুর করে ও ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া দলের সাইনবোর্ড ও ৫ তলা বিশিষ্ট কার্যালয়ের দরজা-জানালার ভাঙচুর চালায়। ভেতরে থাকা চেয়ার-টেবিলও ভাঙচুর করে।

জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে যখন ভাঙচুর চলছে তখন পাশের ফুটপাথে অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্যকে দাড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়।

তবে, জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে প্রবেশ মুখে একটি কক্ষে এবং দলের প্রতিষ্ঠার প্রতিকৃতিতে আগুন দিলে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল এসে আগুন নেভাতে দেখা যায়।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান, “পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আগামী শনিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। সমাবেশ উপলক্ষে দলের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিলেন।”

তিনি আরও বলেন, "সন্ধ্যার পরে শাহবাগ থেকে মশাল নিয়ে একদল লোক আমাদের কার্যালয়ে হামলা করে। এতে কর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে হামলাকারীরা মার খেয়ে পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে ফিরে এসে আমাদের কার্যালয় আগুন দেয় এবং ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।”

হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব বলেন, দলের মিটিং-এ এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

জাতীয় পার্টির কার্যালয়টি রমনা থানার আওতাধীন। এই থানার ডিউটি অফিসার এসআই আরমান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক কিংবা কোনো মামলা হয়নি। আমাদের সিনিয়র স্যারের ঘটনাস্থলে আছেন। আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

মিছিলকারীদের দাবি, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মশাল মিছিল বের করে 'ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা'। কাকরাইল জাতীয় পার্টির সামনে দিয়ে মিছিলটি অতিক্রম করার সময় দলটির কার্যালয় থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয় মিছিলকারীদের ওপর। এতে ইটের আঘাতে মিছিলে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে, উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।

জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে সামনে কথা হয় 'ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক ও জনতা'র ব্যানারে মিছিলে অংশ নেওয়াগণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য শাকিল উজ্জামানের সাথে। ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "পতিত 'ফ্যাসিস্ট' আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক তৎপরতা এবং দেশ বিরোধী চক্রান্তের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি কাকরাইল জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে সামনে দিয়ে অতিক্রম করে বিজয় নগরের দিকে এগিয়ে যাওয়া সময় পেছন থেকে আক্রমন করে জাতীয় পার্টির নেতারা।"

“পরবর্তীতে মিছিলকারী ছাত্র-শ্রমিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় পার্টির 'সন্ত্রাসী'দের ধাওয়া দিলে তারা নিজেদের কার্যালয়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়” বলে যোগ করেন শাকিল উজ্জামান।

ভাঙচুরকারী তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সাইদুল ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “এই জাতীয় পার্টির সহযোগিতার কারণে ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩টি নির্বাচন আওয়ামী 'ফ্যাসিবাদ' করতে পেরেছে। তরুণ প্রজন্ম ভোট দিতে পারে নাই। নতুন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টির রাজনীতির করার কোনো অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষার্থী।"

রাত সাড়ে ১০ টায় রমনা জোনের এডিসি মোহাহাম্মদ জুয়েল রানা ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান, এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া এবং দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় কাউকে আটক করা কিংবা কোনো মামলা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে কার্যালয় পাহারা দেওয়ার জন্য দুই প্লাটুন পুলিশ রাখা হয়েছে। যেহেতু এটা এখন একদম উন্মুক্ত অবস্থায় আছে, কোনো দরজা-জানলা নেই, তাই চুরি হওয়ার শঙ্কা থেকে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।”

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ নিজের ফেসবুকের একটি পোস্টে বলেন, "জাতীয় বেইমান এই জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।’

অপর আরেকটি পোস্টে বলেন, “রাজু ভাস্কর্য থেকে রাত সাড়ে ৮ টায় মিছিল নিয়ে আমরা বিজয় নগরে মুভ করবো। জাতীয় বেইমানদের নিশ্চিহ্ন করতে হবে।”

জাতীয় পার্টি ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অধীনে অংশ নেয় এবং ২৭টি আসনে জয় পায়। আর ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে তৎকালীন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও তার স্ত্রী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাপা একটি অংশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নেয়। এই নির্বাচনে জাপার ৩৪ জন প্রার্থী বিজয়ী হন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অধীনে নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ২২টি আসনে জয় পায়।

সর্বশেষ ২০২৪ সালে বিএনপি-বিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নেয় গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের নেতৃত্বধীন জাতীয় পার্টি। এই নির্বাচনে ১১ টি আসনে দলটির প্রার্থীরা জয়লাভ করে। সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিলো তারা।

XS
SM
MD
LG