ইসরায়েল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বহুল প্রতীক্ষিত প্রতিক্রিয়া হিসেবে শনিবার ভোরে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালায়।
যা যা জানা প্রয়োজন:
একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করা হয়েছে
অন্ধকারের আড়ালে ইসরায়েল ইরানের বিভিন্ন স্থানে একাধিক স্থানে হামলা চালায়। দেশটির অনেক ভেতরে অবস্থিত রাজধানী তেহরান থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলে, তাদের "সুনির্দিষ্ট এবং লক্ষ্যভিত্তিক হামলা" ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং "বিমান প্রতিরক্ষা সক্ষমতা" এবং সেইসাথে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের কারখানাগুলোকে লক্ষ্য করে চালানো হয়। ইরান জোর দিয়ে বলছে হামলার ফলে শুধুমাত্র "সীমিত ক্ষতি" হয়েছে।
ইসরায়েলের আঘাত কতটা শক্তিশালী ছিল তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার বুঝা যায়নি। কোনো দেশই ধ্বংসের বিস্তারিত মূল্যায়ন প্রকাশ করেনি। ইরান জানায়, হামলাগুলো ইলম, খুজেস্তান এবং তেহরান প্রদেশের সামরিক ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু করে করা হয়।
ইসরায়েলকে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপর তাদের হামলা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে। সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, “ইসরায়েল এখন ইরানে আরও বিস্তৃত আকাশসীমায় অভিযান পরিচালনার স্বাধীনতা লাভ করেছে।"
কি আঘাত করা হয়নি তাও গুরুত্বপূর্ণ
এই হামলাগুলি এমন কোনো স্থাপনা লক্ষ্য করে হয়নি যা ইরানের পক্ষ থেকে কঠোর প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে পারে। স্থাপনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে ইরানের তেলের অবকাঠামো এবং তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলি অন্তর্ভুক্ত। ইরানের তেলের অবকাঠামোটি এই ওপেক সদস্য দেশটির অর্থনীতির মেরুদণ্ড।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই মাসের শুরুতে বলেছিলেন, তিনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলাকে সমর্থন করবেন না।
এই আক্রমণ সম্পন্ন
ইসরাইল ইঙ্গিত দেয় ভোরের বোমাবর্ষণ ছিল শেষ আক্রমণ।
হাগারি শনিবার দিনের শুরুতে বলেন, "প্রতিশোধমূলক হামলা সম্পন্ন হয়েছে, এবং এর উদ্দেশ্য অর্জিত হয়েছে।" তিনি বলেন ইসরায়েলে এখনও সাবাথের ছুটি চলছে।
এর কিছুক্ষণ পরেই ইরানের বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা জানায়, বিমান হামলার কারণে বন্ধ থাকার পর বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলি পুনরায় চালু হবে।
ক্ষোভ প্রকাশ এবং অন্যদিকে শান্ত থাকার আহ্বান
হোয়াইট হাউস জানায় তারা ইসরাইল এবং ইরানের মধ্যে সরাসরি হামলা বন্ধ করতে চায় এবং তারা ইরানকে পাল্টা কোন ব্যবস্থা নেয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়েছে ।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বলেন, "আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়াতে হবে" এবং তিনি সকল পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানান।
এই অঞ্চলে প্রতিক্রিয়া আরও কঠোর ছিল। সৌদি আরব, যা ইরানের প্রধান আরব প্রতিদ্বন্দ্বী, হামলাটির নিন্দা করে বলে, এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি এবং “আন্তর্জাতিক আইন ও নীতির লঙ্ঘন।”
তুরস্ক ইসরায়েলকে “আমাদের অঞ্চলকে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসার" জন্য দায়ী করে এবং বলে, “এই অঞ্চলে ইসরায়েল দ্বারা সৃষ্ট সন্ত্রাসের অবসান করা একটি ঐতিহাসিক কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
সিরিয়া ও ইরাকও হামলার বিরুদ্ধে নিন্দা জানায়। যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হামাসও এই হামলার বিরুদ্ধে নিন্দা জানায়। হামাস অন্যান্য সন্ত্রাসী সদস্যদের সঙ্গে মিলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে ১,২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়, যার অধিকাংশই বেসামরিক, এবং প্রায় ২৫০ জনকে গাজায় করা হয়।
গাজার স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, গাজা ভূখন্ডে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক আক্রমণে এখন পর্যন্ত ৪২,৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বেসামরিক এবং যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করেন না। তবে তারা বলেন, নারীদের এবং শিশুদের সংখ্যা মোট মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি।
ইরানের জবাব হবে গুরুত্বপূর্ণ
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলে, ইরান বিমান হামলার প্রতিক্রিয়া জানাবে। তারা এ হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করে এবং তেহরানের আত্মরক্ষার অধিকারের উপর জোর দাবি করে।
ইসরায়েল শনিবারের হামলাটিকে ইরানের পূর্বের বিমান হামলার প্রতিক্রিয়া হিসাবে বর্ণনা করেছে। ইরান এপ্রিলে ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিস্ফোরক ড্রোন ব্যবহার করে ওই হামলা চালায় এবং এই মাসে একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই প্রজেক্টাইলগুলির অনেকগুলিই তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই ভূপাতিত করা হয়েছিল।
ইরান আরেকটি সরাসরি বোমা হামলার চেষ্টা করতে পারে। তবে সেটা করলে আবার যখন ইরানের প্রতিরক্ষা দুর্বল থাকবে তখন ইসরায়েলের একটি নতুন সরাসরি আক্রমণকে উসকানি দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে।