ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান প্রদেশে রবিবার পার্লামেন্ট নির্বাচনের ভোট শুরু হয়েছে। এই খনিজ তেল সমৃদ্ধ অঞ্চলে কুলীন রাজনীতিবিদদের ব্যাপারে মোহভঙ্গ হয়েছে বলে ভোটাররা জানিয়েছে।
অশান্ত মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতার বিচারে ইরাকি কুর্দিস্তানকে তুলনামূলকভাবে মরূদ্যান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় অঞ্চল।
তবে অধিকারকর্মী ও বিরোধীদের মতে, ১৯৯১ সাল থেকে সার্বভৌমত্ব উপভোগ করা এই অঞ্চলকে সার্বিকভাবে ইরাকি ভূখণ্ডের মূল সমস্যাগুলো প্রভাবিত করছে, যেমন: দুর্নীতি, রাজনৈতিক শোষণ ও ক্ষমতাসীনদের চাটুকারিতার সংস্কৃতি।
দুই বছর আগে এই নির্বাচন আয়োজনের কথা থাকলেও দুই পুরনো রাজনৈতিক দল দ্য কুর্দিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (কেডিপি) ও প্যাট্রিয়টিক ইউনিয়ন অব কুর্দিস্তানের (পিইউকে) মধ্যে বিবাদের কারণে নির্বাচন ইতোমধ্যে চারবার পিছিয়েছে।
দুই দল অসংখ্য নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করেছে এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক নেটওয়ার্ককে কার্যকর করেছে। তা সত্ত্বেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দলগুলোর ব্যাপারে জনগণের বড় আকারের মোহভঙ্গ হয়েছে। এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কারণে এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী শিভান ফাজিল (তার পিএইচডির বিষয়বস্তু ইরাক) উল্লেখ করেন, “এ অঞ্চলের দুই প্রধান দলের প্রতি মানুষের নিস্পৃহতা বাড়ছে।”
“গত এক দশকে মানুষের জীবনমানের অবনতি হয়েছে”, বলছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তিনি অঞ্চলটির ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তার অনিয়মিত বেতনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, এই অর্থ “পারিবারিক আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।”
এই বিষয়টির সঙ্গে কুর্দিস্তান ও ইরাকের বাগদাদ ভিত্তিক কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পর্কের টানাপড়েনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এ অঞ্চলের লাভজনক তেল রপ্তানি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ চলছে।
এই অঞ্চলের ৬০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে ২৯ লাখ ভোটদানের জন্য উপযুক্ত। তাদের ভোটে ১০০ জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন, যার মধ্যে বিশেষ কোটাভুক্ত ৩০টি নারী আসনও অন্তর্ভুক্ত।
২০১৮ সালের সর্বশেষ আঞ্চলিক নির্বাচনে ৫৯ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন।
নির্বাচিত হওয়ার পর জনপ্রতিনিধিরা ভোটের মাধ্যমে নতুন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করবেন। বর্তমানে এই দুই পদে আছেন যথাক্রমে নেচিরভান বারজানি ও তার চাচাতো ভাই মাসরুর বারজানি। উভয়ই কেডিপি দলের শীর্ষ নেতা।
ইরাকে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি মোহামেদ আল-হাসান এই নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি কুর্দিস্তানের জন্য “গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ ও সংগঠনগুলোতে নতুন চিন্তাধারা প্রবেশ করানোর” সুযোগ।
তবে ৫৫ বছর বয়সী শিক্ষক সাজান সাদুয়ালা জানান, তিনি এই নির্বাচন বর্জন করবেন।
“ভোটের মাধ্যমে এই সরকার পরিবর্তন সম্ভব নয়”, বলেন তিনি। “তারা পেশীশক্তি ও অর্থের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে রাখে।”