সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নরসিংদীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাকিবুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা য়ায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করে মাধবদী থানায় হত্যাসহ অন্য অভিযোগে মামলা করা হয়।
এর প্রেক্ষিতে বুধবার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) তাঁকে রাজধানী ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
পরে র্যাব সদর দফতরের এএসপি ইমরান খান জানান, ৪ অগাস্ট নরসিংদীর মাধবদী এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হামলা, আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পরবর্তীতে নরসিংদীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়।
আদালত শুনানি শেষে রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেয়। সেইসঙ্গে তাঁকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়।
অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী খন্দকার হালিম বলেন, বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও ঘটনাস্থলে অনুপস্থিতি বিবেচনায় আদালত তাঁকে রিমান্ডে না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
তবে বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল কাদির টিটু এ আদেশের বিরোধিতা করে আপিলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের জোট শরিক দলের নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও র্যাব
২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ও পররাষ্ট্র দফতর পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়।
ওই কর্মকর্তারা হলেন র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মোস্তাফা সরোয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার লতিফ খান। তাঁদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট।
এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর পৃথক এক ঘোষণায় বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব ৭–এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াইয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত।
বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, তারা আইনের শাসন, মানবাধিকারের মর্যাদা ও মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ক্ষুণ্ন করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের বিরুদ্ধে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাব হচ্ছে ২০০৪ সালে গঠিত একটি সম্মিলিত টাস্ক ফোর্স। তাদের কাজের মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অপরাধীদের কর্মকান্ড সম্পর্কে গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং সরকারের নির্দেশে তদন্ত পরিচালনা করা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বা এনজিওদের অভিযোগ হচ্ছে যে, র্যাব ও বাংলাদেশের অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া এবং ২০১৮ সাল থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই সব ঘটনার শিকার হচ্ছেন বিরোধী দলের সদস্য, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা।